ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

শীতের আগাম সবজি চাষে ব্যস্ত কৃষাণ-কৃষাণী

প্রকাশিত: ১১:৪৭, ২৪ নভেম্বর ২০১৯

শীতের আগাম সবজি চাষে ব্যস্ত কৃষাণ-কৃষাণী

নিজস্ব সংবাদদাতা,ভৈরব, ২৩ নবেম্বর ॥ অধিক লাভের আশায় আগাম শীতকালীন সবজি চাষে আগ্রহ বেড়েছে ভৈরব উপজেলার কৃষকের মাঝে। এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় শীতকালীন বিভিন্ন জাতের সবজির চারা রোপণ ও পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন এখন কৃষক পরিবারগুলো। নিজেদের প্রয়োজন ছাড়াও বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে এসব সবজি। ভৈরব উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে এবার আগাম সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষাণ-কৃষাণী। ইউনিয়নের বিভিন্ন ফসলি মাঠে কৃষক শীতের আগাম সবজি চাষ করতে জমি প্রস্তুত করছেন। অনেক জায়গায় শীতের সবজি তুলছে। বাজারে বিক্রি করছে। ভৈরবের বিভিন্ন এলাকার মাঠে মাঠে এখন শীতকালীন বিভিন্ন সবজির সমারোহ। লাউ, মুলা, ডাঁটা, লালশাক, ধুন্দল, করলা, ঢেঁড়স, শসা, শিম, বরবটি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, কাকরোল, জালি, কি নেই? শীতকালীন এসব সবজিতে এখন বাজার সয়লাব। আর সেসব সবজি জমির পরিচর্যা, সবজি সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি কাজে ভীষণ ব্যস্ত কৃষাণসহ কৃষাণী এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা। ভৈরবের বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামীণ জনপদে ঘুরে দেখা গেছে, কৃষাণ- কৃষাণীরা চারা গজানোর পর তা পরিচর্যা করছেন। শীতের মৌসুমে যে কোন ফসল আগাম চাষ হলে বাজারে এর চাহিদা থাকে বেশি । দামও পাওয়া যায় ভাল। অল্প সময়ে কম খরচে অধিক মুনাফা লাভের জন্য ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো ও শিমের চাহিদাই থাকে বেশি। শীতকালীন শাক-সবজির আগাম চাষ করে সেই বিবর্ণ মাঠ রাঙিয়ে তুলেছেন এলাকার চাষী। আগাম শাক-সবজি বাজারে তুলতে পারলে বেশি টাকা আয় করা সম্ভব। সেই চিন্তা মাথায় রেখে জমি প্রস্তুত, চারা রোপণে ব্যস্ত চাষি। সময়মতো কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ পেয়ে কৃষক তাদের আগাম সবজির চাষে বাম্পার ফলন লাভের আশা করছেন এ মৌসুমে। এ সবজি যেমন মানুষের খাবারের চাহিদা পূরণ করবে তেমনই সবজি বিক্রি করে চাষীও লাভবান হবে। সবজি বিক্রি করতে বাজারে নিতে হয় না কৃষককে। পাইকাররা মাঠে এসে ক্ষেত থেকে কিনে নিয়ে যায় বলে জানান কৃষক। কৃষকরা জানায়, আমরা এবার ল্াউ, কপি, মুলা, লালশাক, শিম, টমেটো, ক্ষিরা, মরিচ রোপণ করছি। মরিচ সারিতে রোপণ করলে যেমন আগাছা পরিষ্কার করতে সুবিধা তেমনি ফলনও ভাল হয়। কীটনাশক ও সার প্রয়োগ করতেও সুবিধা হয়। আগাম সবজি চাষ একটা লাভ জনক ফসল। শীতের আগমনি সময়ে যদি আমরা আগাম সবজি চাষ করে ফলন তুলতে পারি তাহলে আমরা লাভবান হব। এবারও আশা করছি আবহাওয়া যদি ভাল থাকে তাহলে আমরা অনেকটা লাভবান হতে পারব। আলু চাষি সিরাজ মিয়া বলেন, আমি এবার আলু চাষ করছি। গত বছর আলু চাষ করে বেশ লাভবান হয়েছি। আশা করছি, এবারও আলু বিক্রি করে মোটামুটি কিছু টাকা আয় করতে পারব। মাঠকর্মী চন্দন সুত্রধর বলেন, ঝগড়ারচর চকে এ বছর ১৬ হেক্টর জমিতে রবিফসলের আবাদ সম্পন্ন করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সর্বক্ষণিক পরামর্শ দেয়ার ফলে এ বছর রোগ ও পোকামাকড়ের উপদ্রব অনেকটা কম। কৃষক তাদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে অনেক লাভবান হচ্ছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম শরীফ বলেন, ভৈরব উপজেলায় রবি মৌসুমে আগাম সবজি চাষ হচ্ছে। বর্তমানে ফসলের অবস্থা ভাল। আগাম সবজি আলু, টমেটো, শিম এসব বাজারে নিয়ে আসছে। আবহাওয়া বর্তমানে যে অবস্থায় আছে যদি এমন থাকে আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা আছে তা পূরণ হবে । স্থানীয় কৃষকদের মাঠ পর্যায়ে সবজি চাষে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করেছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। এই ধারা অব্যাহত থাকলে অলাভজনক ফসল চাষাবাদ দিয়ে এখানকার কৃষক আগাম সবজি চাষে উৎসাহিত হবে বলে অভিমত কৃষি বিভাগের। এতে করে কৃষক লাভবান হবার পাশাপাশি বর্ষাকালে বাজারে সবজির চাহিদা পূরণে রাখবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। কৃষকরা জানান, আগাম সবজিতে ভাল মুনাফা হওয়ায় তারা এ সময় সবজি চাষ করে থাকেন। এ সময় বাজারদর চড়া থাকায় অল্প খরচে চাষ করা সবজি বিক্রি করে অধিক লাভবান হন তারা। অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় দিন দিন তারা এই আগাম সবজি চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন বলেও জানান। উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের ছনছাড়া গ্রামের আগাম সবজি চাষী কালাম মিয়া জানান, তিনি প্রায় দুই বিঘা জমিতে ঢেঁড়স, ডাঁটা, মুলার চাষ করেছেন। তিনি ইতোমধ্যে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেছেন। আর ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা বিক্রি করা যাবে বলে জানিয়েছে তিনি। তার মোট খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকার মতো। একই এলাকার কৃষক আবু মিয়া জানান, তিনি ১২ শতক জমিতে লাউয়ের চাষ করেছেন। খরচ হয়েছে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। তিনি ইতোমধ্যে ডগাসহ লাউ বিক্রি করেছেন ২০ হাজার টাকার মতো। বাকি দিনগুলোতে আরও ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। কালিকা প্রসাদ ইউনিয়নের আৎকাপাড়া গ্রামের শরীফুল আলম জানান, ৭ কাঠা জমিতে ডাঁটা শাকের চাষ করে তিনি ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন। অথচ তার খরচ হয়েছিল মাত্র ১৮শ’ টাকা। একই এলাকার আব্দুল হালিম মিয়া ১০ শতক জমিতে লাউ এবং দুই বিঘা জমিতে জালিকুমড়া, শসা, করলা, ধুন্দলের মিশ্র আবাদ করেছেন। তিনি ইতোমধ্যে ৮০ হাজার টাকার মতো সবজি বিক্রি করেছেন। পুরনো মাচায় আবাদ করায় তার খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকার মতো। তিনি অবশিষ্ট দিনগুলোতে আরও ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করতে পারবেন। উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়,আগাম চাষ করা সবজির বাজারমূল্য ভাল থাকায় এখানকার কৃষক এসব সবজি চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছে। ফলে দিন দিন অলাভজনক ফসল চাষের পরিবর্তে তারা শীতকালীন সবজির আগাম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। ফলে এখানে দিন দিন বাড়ছে আগাম সবজির আবাদ। আর উৎপাদিত ওসব সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে আশপাশের জেলা-উপজেলাসহ রাজধানী শহর ঢাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
×