ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

অযোধ্যার আইনী সমাধান

প্রকাশিত: ০৯:০৩, ১০ নভেম্বর ২০১৯

অযোধ্যার আইনী সমাধান

ভারতের বহুল আলোচিত অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতে রামমন্দির নির্মাণের পক্ষে রায় দিয়েছে সুপ্রীমকোর্ট। বাবরি মসজিদ নির্মাণের জন্য মুসলিমদের সংগঠন ‘সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড’কে বিকল্প পাঁচ একর জমি দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শনিবার ভারতের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ নেতৃত্বাধীন শীর্ষ আদালত এই রায় ঘোষণা করেছে। কিন্তু রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড। তারা বলছে, রায়ের বিরুদ্ধে পরবর্তী কি পদক্ষেপ নেয়া যায় সে বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। টাইমস অব ইন্ডিয়া। শীর্ষ আদালতের পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ অযোধ্যা বাবরি মসজিদ মামলার রায় সর্বসম্মত বলে জানিয়েছেন। রায় ঘোষণার পর সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের আইনজীবী জাফরায়েব জিলানি বলেন, আমরা সুপ্রীমকোর্টের রায়কে সম্মান জানাই। তবে আমরা এই রায়ে সন্তুষ্ট নই। পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করব। অন্যদিকে হিন্দু মহাসভার আইনজীবী বরুণ কুমার সিংহ বলেন, এটি ঐতিহাসিক রায়। এই রায়ের মধ্য দিয়ে সুপ্রীমকোর্ট বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের বার্তা দিয়েছে। সুপ্রীমকোর্টে এ মামলার বিচারক বেঞ্চে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ ছাড়াও ছিলেন বিচারপতি এসএ বোবদে, ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, অশোক ভূষণ এবং এস আব্দুল নাজির। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে রায় পড়ে শোনান প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। রায়ে দেশটির শীর্ষ এই আদালত বলেছে, বিতর্কিত মূল জমি পাবে ‘রাম জন্মভূমি ন্যাস।’ এই জমিতে মন্দির তৈরিতে কোন বাধা নেই। তবে কেন্দ্রীয় সরকারকে আগামী তিন মাসের একটি ট্রাস্ট গঠন করতে হবে। ওই ট্রাস্টের তত্ত্বাবধানেই থাকবে বিতর্কিত মূল জমি। কীভাবে, কোন্ পদ্ধতিতে মন্দির তৈরি হবে, সে পরিকল্পনাও করবে ট্রাস্ট। অন্যদিকে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে বিকল্প ৫ একর জমি দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। নির্দেশে বলা হয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ কোন জায়গায় ওই জমির বন্দোবস্ত করতে হবে সরকারকে। রায়ে বলা হয়েছে, সম্রাট বাবরের সেনাপতি মীর বাকি যে বাবরি মসজিদ তৈরি করেছিলেন, তার প্রমাণ রয়েছে। তবে সেটা কোন্ সালে, তা নির্ধারিত নয় এবং তারিখ গুরুত্বপূর্ণ নয়। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের খননে অন্য কাঠামোর প্রমাণ মিলেছে। তবে সেই কাঠামো থেকে এমনও দাবি করা যায় না যে, সেগুলো মন্দিরেরই কাঠামো। আবার সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের দাবি খারিজ করে ভারতের শীর্ষ আদালত বলেছে, শুধুমাত্র বিশ্বাসের ভিত্তিতে কোন অধিকার দাবি করা যায় না। জমির মালিকানা আইনী ভিত্তিতেই ঠিক করা উচিত। অযোধ্যার বিতর্কিত এই ভূমি মালিকানাকে কেন্দ্র করে ১৯৯২ সালে হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় প্রায় ২ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে। ষোড়শ শতকের ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দিয়ে দেশটির কট্টরপন্থী হিন্দুরা অযোধ্যায় মন্দির নির্মাণ করতে গেলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়। ২০১০ সালে উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড, নির্মোহী আখাড়া, রামলালার মধ্যে জমি সমান ভাগে ভাগ করে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। এর ফলে হিন্দুরা পায় জমির তিন ভাগের দু’ভাগ। মুসলিমরা এক ভাগ। কিন্তু এই রায়ের বিরুদ্ধে সব পক্ষই সুপ্রীমকোর্টে মামলা করেন। হিন্দুরা মনে করেন, তাদের দেবতা রামের জন্মভূমিতে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু মুসলিমরা বলছেন, বাবরি মসজিদের স্থানে রামের জন্মের কোন আলামত নেই। সুপ্রীমকোর্টের এই রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে রাজধানী নয়াদিল্লীর পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, মধ্যপ্রদেশ ও জম্মু-কাশ্মীরে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এসব রাজ্যের স্কুল-কলেজও শনিবার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের আইনজীবী জাফরাইব জিলানি বলেন, আমরা রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, তবে আমরা সন্তুষ্ট নই। আমরা পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য সিদ্ধান্ত নেব। তবে হিন্দুস্তান টাইমসকে তিনি বলেন, রায়ের কয়েকটি সুনির্দিষ্ট পর্যবেক্ষণ দেশের ধর্মনিরপেক্ষ কাঠামোর জন্য ইতিবাচক হতে পারে। স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় মামলার রায় ঘোষণা শুরু করেন দেশটির সুপ্রীমকোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, বিতর্কিত স্থানটি সরকারী ট্রাস্টকে দেয়া হবে। বাবরি মসজিদের ওই ২ দশমিক ৭৭ একর জমি পাবে হিন্দুরা। আগামী তিন মাসের মধ্যে একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করবে সরকার। পরে সেখানে মন্দির প্রাঙ্গণ নির্মাণ করবে তারা। পরিবর্তে অযোধ্যার অন্য স্থান থেকে মসজিদ নির্মাণের জন্য ৫ একর জমি পাবে মুসলিমরা। রায় ঘোষণার এক পর্যায়ে তিনি বলেছেন, হিন্দুরা বিশ্বাস করেন এখানেই রামের জন্মভূমি ছিল। তবে কারও বিশ্বাস যেন অন্যের অধিকার হরণ না করে। আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার (এএসআই) খননের ফলে যেসব জিনিসপত্র পাওয়া গেছে, তাতে স্পষ্ট যে সেগুলো অনৈসলামিক। তবে এএসআই এ কথা বলেনি, যে তার নিচে মন্দিরই ছিল। রায়ে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, বাবরের সহযোগী মির বাকি মসজিদ তৈরি করেছিলেন, তবে কবে মসজিদ তৈরি হয়েছিল, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।
×