ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিমান এখন লাভের ধারায়, ফিরেছে আর্থিক শৃঙ্খলা

প্রকাশিত: ১১:০৫, ৫ নভেম্বর ২০১৯

বিমান এখন লাভের ধারায়, ফিরেছে আর্থিক শৃঙ্খলা

আজাদ সুলায়মান ॥ পর পর তিন মাস ধারাবাহিক লাভের মুখ দেখছে বিমান। মন্ত্রণালয়ের কঠোর নজরদারি, তদারকি ও সঠিক দিকনির্দেশনায় বিমানে ফিরে এসেছে আর্থিক শৃঙ্খলা। নতুন উড়োজাহাজ ও ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে বিমান এখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। চলতি বছরের এপ্রিল-জুন এই তিন মাসে ২৭৩ কোটি টাকা লাভ করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটি। আগামী দিনগুলোতে লাভের ধারায় থাকার নিশ্চয়তা দিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী ও সচিব মহিবুল হক। বিমান নিয়ে তারা দুজনেই নতুন প্রত্যাশায় উজ্জীবিত হয়ে শুনিয়েছেন বিপুল সম্ভাবনার কথা। তাদের দৃঢ় বিশ্বাস, সামনের দিনগুলোতে বিমান আরও চাঙ্গা হবে। বিশেষ করে আগামী তিন মাসের মধ্যে বিমানে যোগ হবে অন্তত আরও দুটো ড্রিমলাইনার ৭৮৭-৯ ও চালু হবে চারটি রুট। বিমান জানিয়েছে, বোয়িং থেকে যে দুটো নতুন ড্রিমলাইনার সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। দরদাম ও সংগ্রহের মডিউলও ঠিক হয়ে গেছে। একটি টেকনিক্যাল টিমও সিয়াটলে গিয়ে সব কিছু পরিদর্শন করে এসেছে। আগামী মাসে এ দুটো উড়োজাহাজ বিমানবহরে যোগ হবে বলে জানিয়েছেন সচিব মহিবুল হক। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের মতে, বিমান ব্যবস্থাপনার শীর্ষ পর্যায়ে বড় ধরনের পরিবর্তনের ফলে নতুন করে গতি সঞ্চার হয়েছে প্রতিটি শাখায়। বিশেষ করে ফ্লাইট সেফটি, হসপিটালিটি ও সিডিউল রক্ষায় যথেষ্ট উন্নতি হওয়ায় যাত্রী ও রাজস্ব বেড়েছে। এটা বড় কারণ ধারাবাহিক লাভের। বিমান সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে গত সপ্তাহে চালু হয়েছে ঢাকা থেকে মদিনার সরাসরি ফ্লাইট। আবার চট্টগ্রাম থেকেও চালু হয়েছে মদিনার ফ্লাইট। এ ধরনের আরও কটি নতুন রুট সম্পর্কে আশার বাণী শুনিয়েছে বিমান। এখন অপেক্ষা জানুয়ারি মাসে সিলেট থেকে সরাসরি ম্যানচেস্টার ফ্লাইট চালু করার। তারপর কানাডার মন্ট্রিলে চালু করা হবে নতুন রুট। এ বিষয়েও যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মোঃ মাহবুব আলী বলেন, অপেক্ষা করুণ আর কটা দিন। আপনারা বিমান নিয়ে নেতিবাচক নিউজ করার সুযোগ পাবেন না। ম্যানচেস্টারের পর মন্ট্রিল তারপর নিউইয়র্ক রুট চালুর কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। খুব দ্রুত গতিতে কাজ হচ্ছে। কারণ প্রধানমন্ত্রী বিমানকে ভালবাসেন। বিমান যাতে মাথা উঁচু করে চলে সে জন্য আরও ৯ সিরিজের দুটি ড্রিম লাইনার আসছে। এপ্রিল-জুনে ২৭৩ কোটি টাকা লাভ করেছি। জানুয়ারি থেকে বিমানবন্দরের চার্জ, বিপিসির পাওনা পরিশোধ করে আসছি। চলতি অর্থবছর শেষ করার আগেই দেখবেন নতুন চমক। বিমান সূত্র জানিয়েছে, সিয়াটল থেকে ডিসেম্বরে আরও দুটো ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার আসার পর বিমানের বহর হবে আরও নির্ভরযোগ্য। তখন নিজস্ব ড্রিমলাইনারই হবে ৬টি। বোয়িং ৭৭৭ হবে ৪টি, ৭৩৭ হবে ২টি। এই ১২টি ব্র্যান্ড নিউ এয়ারক্রাফট ছাড়াও আসবে আরও দুটো ড্যাশ-৮ আগামী মার্চের আগেই। তখন ড্যাশ-৮ হবে ৫টি। এ ছাড়াও থাকবে আরও ৪টি ৭৩৭ মডেলের এয়ারক্রাফট। এসব মিলিয়ে মার্চের আগেই বিমান বহর হবে ২১টি উড়োজাহাজের। এ সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিমান বহর যত বড় হবে বাণিজ্যিকভাবে ততটাই সফল হবে। আমার পরিকল্পনায় রয়েছে আগামী এক বছরের মধ্যে অন্তত বিমান বহরে ২০ থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ। যাতে বিমান দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী একটি এয়ারলাইন্সে পরিণত হতে পারে। এ সম্পর্কে বিমানের ডিএফও ক্যাপ্টেন এ বিএম ইসমাইল জনকণ্ঠকে বলেছেন, এখন বিমানের বহর যথেষ্ট ব্যালান্সড। এসব এয়ারক্রাফটকে যত বেশি ব্যবহার করা যাবে সেটা বাণিজ্যিকভাবে ততই সফলতা আসবে। ম্যানচেস্টার ছাড়াও চেন্নাই, কলম্বো ও মালে রুট খোলার বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন। চলতি সপ্তাহেই এ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের আয়োজন করা হচ্ছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হবে। বিমানে লাভের ধারা বজায় রাখার চ্যালেঞ্জ কিভাবে সামাল দেয়া হবে জানতে চাইলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোকাব্বির হোসেন সোমবার দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, বিমানে যোগদান করার পরই মূল সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে হয়েছে। বর্তমান বিশ্বে এভিয়েশন ব্যবসার তীব্র প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে সর্বাগ্রে প্রাধিকার দিতে হয় সেফটি, হসপিটালিটি ও সিডিউলকে। এ তিনটি সমস্যার সমাধান বের করে সবাইকে তা অনুসরণ করার ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এতে দ্রুত ফিরে আসে প্রশাসনিক শৃঙ্খলা, যাত্রী সেবার প্রাধান্য ও সিডিউল মতো ফ্লাইট ওঠানামা করা। এ তিনটে জায়গাতেই বিমান এখন যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, এখন টেকনিক্যাল না হলে ফ্লাইট ওঠানামা ঠিক থাকে। যাত্রীদের সেবাও দেয়া হয় তাদের চাহিদা মতো। নিরাপত্তার বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। অর্থাৎ বিমানে এখন সবার মাইন্ডসেট আপ হয়ে গেছে। বিমানে টিকতে হলে কাজ করতে হবে।
×