ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমেই স্থান দখল করছে রাশিয়া

ওপেককে সহযোগিতা বন্ধ

প্রকাশিত: ০৮:৩৯, ২৭ অক্টোবর ২০১৯

ওপেককে সহযোগিতা বন্ধ

ওপেকের সঙ্গে সহযোগিতা বন্ধ করল রাশিয়া। রুশ জ্বালানিমন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাক শুক্রবার বলেছেন, তেলের বাজারের স্থায়িত্ব এবং উৎপাদন বাড়াতে সৌদি আরব, ওপেক এবং ওপেকের বাইরে তেল উৎপাদনকারীদের সঙ্গে সহযোগিতা বন্ধ করা হয়েছে। খবর রয়টার্সের। রাশিয়ার তেল কোম্পানি রোসনেফেটর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইগর সেকিন বলেছেন, সেপ্টেম্বরে সৌদি স্থাপনার ওপর হামলাটি তেল সরবরাহকারী দেশ হিসেবে তাদের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করেছিল। মন্ত্রী বলেন, ড্রোন হামলার পরে সৌদি আরবে দ্রুত উৎপাদন ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করা আবারও পেশাদারিত্ব এবং শিল্পের বৃহত্তম উৎপাদকদের নির্ভরযোগ্যতার ওপর গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। রাশিয়া তেলের বাজারের পূর্বাভাস এবং স্থিতিশীলতা বাড়াতে সৌদি আরব এবং ওপেকের অংশীদারদের সঙ্গে সক্রিয় সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে। ওপেকের অংশীদার, ওপেক সদস্য এবং রাশিয়াসহ অন্যান্য বড় তেল উৎপাদনকারীদের একটি জোট গত জানুয়ারিতে উৎপাদন বাড়াতে দৈনিক ব্যারেল প্রতি উত্তোলন ১ দশমিক ২ মিলিয়ন বাড়ানোর চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। চুক্তিটি ২০২০ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত চলবে এবং ৫-৬ ডিসেম্বর পর্যালোচনা করা হবে। রাশিয়া মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছে। কূটনৈতিক ও সামরিক কৌশলের মিশ্রণ ঘটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র দশকের পর দশক ধরে ওই অঞ্চলে যেভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে, সেই একই কৌশল এখন রাশিয়া ব্যবহার করছে। বলা যায়, বর্তমান পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার কাছে কৌশলের দিক দিয়ে হেরে গেছে তাই নয় বরং তারা আত্মসমর্পণ করে বসেছে। মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্রের স্থান দখল করে নিচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়া। সিরিয়ার উত্তরাঞ্চল থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর ওই এলাকায় নিজেদের সেনা মোতায়েন করেছে রাশিয়া। ওই এলাকার নিয়ন্ত্রণ রাশিয়ার কাছে চলে যাওয়ায় পুরো মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতেই বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে রাশিয়ার পতাকা উড়িয়ে টহল দিচ্ছে রুশ সামরিক বাহিনী। কয়েকদিন আগেও ওই অঞ্চলটি পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করত মার্কিন সেনারা। কিন্তু এক মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে উল্টে গেছে গোটা চিত্র। মার্কিন সেনাদের পরিবর্তে এখন সেখানকার নিয়ন্ত্রণ রুশ সেনাদের হাতে। সাঁজোয়া যান, ট্যাঙ্ক আর ভারি অস্ত্র নিয়ে সীমান্ত এলাকা চষে বেড়াচ্ছে রুশ সেনারা। তারা জানায়, সিরীয় সরকারী বাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে ওই এলাকার নিরাপত্তায় কাজ করবে তারা। সিরিয়ায় রুশ বাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল ইগর সেরিটস্কি বলেন, তুর্কি-সিরীয় সীমান্তে রুশ বাহিনী টহল শুরু করেছে। আমরা এখন আইন আল আরব শহরের আশপাশেই কাজ করব। তবে পরবর্তীতে ঘাঁটি নির্মাণ করে পুরো সীমান্ত এলাকারই নিরাপত্তার বিধান করা হবে। এর আগে সিরীয় সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াইরত ওয়াইপিজি যোদ্ধাদের সমর্থন দিয়ে আসছিল মার্কিন বাহিনী। কিন্তু চলতি মাসের শুরুতে সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন ট্রাম্প। এর পরই কুর্দিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে তুরস্ক। এর ধারাবাহিকতায় তুর্কি এরদোগানের সঙ্গে বৈঠক করেন পুতিন। সিদ্ধান্ত হয় সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে মোতায়েন করা হবে রুশ সেনা। কুর্দি বাহিনীকে ওই এলাকা থেকে সরানোর বিনিময়ে অভিযান বন্ধ করতে সম্মত হয় তুরস্ক। আর এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমেই সিরিয়ার কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ এলাকাটির নিয়ন্ত্রণের ঘুঁটি মার্কিন বাহিনীর কাছ থেকে চলে যায় প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়ার কাছে। এতে পুরো মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতেই বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। তাদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তারে বড় একধাপ এগিয়ে গেল রাশিয়া। প্রতিরক্ষা এবং সামরিক বিশ্লেষক পাভেল ফেলগেনহৌর বলেন, এটা রাশিয়ার জন্য ওই অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করার খুব বড় একটা সুযোগ। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সিরিয়ার সরকারী বাহিনীর সম্পর্ক শুরু থেকেই খারাপ। এর আগে কুর্দি বাহিনীর সঙ্গে মার্কিন সেনারা একসঙ্গে কাজ করেছে। কিন্তু অভিযান শুরুর আগে কুর্দিদের ত্যাগ করে যুক্তরাষ্ট্র। সেই সময় কুর্দিদের সঙ্গে এক রকম সমঝোতায় পৌঁছেছে রুশ এবং সিরীয় বাহিনী। তাই এটা পরিষ্কার যে, সিরিয়া তথা মধ্যপ্রাচ্যে রুশ প্রভাব আরও বাড়ল। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রধান শক্তি এবং যুক্তরাষ্ট্রের কট্টর সমালোচক ইরানকে রাশিয়ার খুব কাছের মিত্র হিসেবেই ধরা হয়। এছাড়া কাতারসহ বেশ কয়েকটি যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী দেশও রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করছে। এরমধ্যেই সিরীয়-তুর্কি সীমান্তে রাশিয়ার প্রভাব বৃদ্ধি পুরো অঞ্চলের রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে দেবে বলেও মত বিশেষজ্ঞদের। মধ্যপ্রাচ্যে পুতিন আংশিকভাবে বিজয়ী হয়েছেন। কারণ তিনি ক্ষমতার দাপটগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পেরেছেন।
×