ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ছয়দিনে দ্বিতীয়বার ॥ ওয়াশিংটন-সিউল সামরিক মহড়ার বিষয়ে সতর্ক করল উত্তর কোরিয়া

ফের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা

প্রকাশিত: ১১:৩৬, ১ আগস্ট ২০১৯

ফের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা

উত্তর কোরিয়া বুধবার ফের স্বল্পপাল্লার দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরিকল্পিত যৌথ সামরিক মহড়া বিষয়ে দক্ষিণ কোরিয়াকে সতর্ক করতেই এ ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ। পারমাণবিক শক্তিধর পিয়ংইয়ং একই ধরনের দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার ছয়দিন পর তারা ফের এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করল বলে জানায় সিউল। খবর এএফপি ও বিবিসির। দক্ষিণ কোরিয়ার জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ (জেসিএস) জানান, বুধবার ভোর পাঁচটা ২৭ মিনিটে উত্তর কোরিয়ার পূর্ব উপকূলের উনসান বন্দরের কলমা এলাকা থেকে এ দুটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করা হয়। এবারের ক্ষেপণাস্ত্র দুটি সর্বোচ্চ ৩০ কিলোমিটার উপরে উঠে ২৫০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে জাপান সাগরে (পূর্ব সাগর নামেও পরিচিত) গিয়ে পড়েছে। এবার উৎক্ষেপণ করা ক্ষেপণাস্ত্র গত সপ্তাহে উৎক্ষেপণ করা ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর চেয়ে আলাদা ধরনের বলে দক্ষিণ কোরিয়ার জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ (জেসিএস) জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে তারা জানায়, আমরা জোর দিয়ে বলতে পারি, যে ধারাবাহিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করা হচ্ছে তা কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনা নিরসনে সহায়ক হবে না। এ ধরনের কর্মকা- থেকে বিরত থাকতে আমরা উত্তর কোরিয়ার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিয়ং কিয়ং-ডু বলেন, বুধবার উৎক্ষেপণ করা ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আগেরগুলোর চেয়ে ভিন্ন ধরনের। এদিকে তাদের জলসীমায় কোন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এসে পড়েনি বলে জানায় জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে নিশ্চিত করেন যে, ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণে জাপানের নিরাপত্তার ওপর কোন প্রভাব পড়েনি। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব অনুযায়ী উত্তর কোরিয়ার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ নিষিদ্ধ হলেও এক সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে এটি ছিল তাদের দ্বিতীয় দফার ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ। গত মাসে পিয়ংইয়ং নেতা কিম জং উন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে বৈঠক হওয়া সত্ত্বেও তারা এসব ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ল। উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচী বিষয়ে পিয়ংইয়ং ও ওয়াশিংটন দীর্ঘদিন ধরে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে। জেসিএসের তথ্যানুযায়ী, গত সপ্তাহে উত্তর কোরিয়ার ছোড়া দুটি স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে একটি সর্বোচ্চ ৫০ কিলোমিটার উচ্চতায় উঠে ৬৯০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে সাগরে পড়েছিল। গত সপ্তাহের উৎক্ষেপণটি জুনে দুই কোরিয়ার মধ্যবর্তী সীমান্তে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের বৈঠকের পর প্রথম এ ধরনের ঘটনা ছিল। ওয়াশিংটনের সঙ্গে সিউলের পরিকল্পিত সামরিক মহড়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সতর্ক করতে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছিল উত্তর কোরিয়া। দক্ষিণ কোরিয়া ও মার্কিন সামরিক বাহিনীর বার্ষিক ওই সামরিক মহড়া নিয়ে আগেও বিভিন্ন সময় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল উত্তর কোরিয়া। যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে দেখা এ মহড়াটি আগস্টে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে গত ২৫ জুলাই দুটি স্বল্পপালার ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করে উত্তর কোরিয়া। একজন বিশ্লেষক বলেন, আরও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার অনুমিতই ছিল। ওয়াশিংটনভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক সেন্টার ফর দ্য ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট’র হ্যারি কাজিয়ানিস বলেন, আগস্টে মহড়া শুরুর আগে আগামীতে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের মাধ্যমে ক্ষোভ প্রশমন অব্যাহত রাখবে উত্তর কোরিয়া। তিনি আরও বলেন, এটা ওয়াশিংটন ও সিউলের প্রতি বার্তা: যৌথ সামরিক মহড়া বন্ধ করুন নইলে আমরা আমাদের সামরিক সক্ষমতা প্রদর্শন অব্যাহত রাখব। উত্তর কোরিয়া ওয়াশিংটন ও সিউলের সামরিক মহড়াকে ট্রাম্পের সঙ্গে স্বাক্ষরিত যৌথ বিবৃতির ‘নীতির লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করে। সিঙ্গাপুরে গত বছর ট্রাম্প ও কিমের প্রথম শীর্ষ বৈঠকে এই যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষরিত হয়েছিল। পিয়ংইয়ং হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে, সামরিক মহড়া পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ আলোচনা পুনরায় শুরুতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও সোমবার আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, এই আলোচনা শীঘ্রই শুরু হতে পারে।
×