ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জেল কাহন

প্রকাশিত: ০৯:০২, ১ জুলাই ২০১৯

জেল কাহন

প্রাজ্ঞ নেতৃত্বের গুণমুগ্ধ চিন্তা কখনও কখনও সামাজিক দর্শন হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়ে যায়। তখন জাতকাল ভেদে সেই চিন্তাই হয়ে ওঠে ‘চর্চা এবং বাস্তবায়নের’ বিষয়বস্তু। মার্কসীয় ভাবধারাকে ঠিক তেমনি ভাবা হয়। ‘মার্কসীয়’ সমাজ দর্শন মানুষের অবস্থানগত দিককে দুই শ্রেণী- ১. প্রলেতারিয়েত এবং ২. বুর্জুয়া গোলকে রাখে। যেখানে একশ্রেণী ক্ষুন্নিবৃত্তি বা লড়াই করে এঘর-ওঘর করে জীবন চালায়। আর আরেক শ্রেণী শোষণ করে। যদিও এও সত্য, শোষকরা নিজেরাও লড়াই করে নিজেদের শোষণগত অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে। যুগের রূপ এখন অনেক বদলে গেছে। সে হিসাবে বলতে হয়, বর্তমান সমাজব্যবস্থায় মার্কসীয় সমাজ দর্শনের ‘ছাপ’ কমই। বরং আধিক্য বেশি ‘ফুকোডিয়ান’ চিন্তার। ‘ফুকো’ সমাজব্যবস্থার চিত্র এঁকেছেন, ‘সম্পর্ক জালের মতো। যেখানে যে কেউ যে কোন সময় ক্ষমতাবান বনে যেতে পারেন।’ এখন বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ দেশ ‘গণতান্ত্রিক’ শাসনব্যবস্থায় আগ্রহী। আর আমরা এও জানি, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বহুপক্ষীয় মতামত এবং শ্রেণী আসীন থাকেন। তাছাড়া এ ব্যবস্থার বিশেষায়িত দিক হলো এখানে আপাতভাবে যিনি প্রলেতারিয়েত তিনি তার ভোটাধিকার ক্ষমতার বলে যে কাউকেই যে কোন সময়ে হটিয়ে দিতে পারেন। অর্থাৎ, এ ব্যবস্থায় ‘মার্কসীয়’ দর্শনের ‘ক্ষমতাহীনতার’ ফ্রিজিং চরিত্র ভেঙ্গে ‘ফুকোডিয়ান’ ব্যবস্থার দেখা মেলে। যেখানে চরম ক্ষমতাহীনও একটা সময় ক্ষমতাবান হতে পারেন। আর এটা অর্জন তখনই সম্ভব যখন একটি সমাজব্যবস্থায় সুষ্ঠু এবং বাস্তবসম্মত সুশাসন চলে। বাংলাদেশের কথা বললে, তারা এখন তেমনি একটা যুগের হাত ধরে। টানা শোষণ, দুর্নীতি এবং রাষ্ট্রদ্রোহী কাজে অতিষ্ঠ জনগণ তাদের ভোটাধিকার ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে ক্ষমতাহীন করে ছেড়েছেন। শুধু তাই নয়, সময়ের বোঝা ‘দুর্নীতির’ সেই ‘আইয়ামে জাহলিয়া’ তথা ‘অন্ধকারছন্ন’ যুগকে ছিঁড়ে তারা এখন ‘উন্নয়ন এবং অগ্রগতির’ সারথি। পাশাপাশি ‘দুর্নীতি’ নামক শব্দটিকে শুধু ডিকশনারিতে তুলে রাখতেও তারা কাজ করে চলেছেন। যদিও ঘুম-জাগরণে এর গতি প্রকৃতি আজও কিছু চোরাগলি এবং রক্তস্রোতে বহমান! তবে আশার কথা হলো, ‘শেখ হাসিনার’ নেতৃত্বে বর্তমান বাংলাদেশ আজ আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর। যার প্রমাণ দেশের জঙ্গী-যুদ্ধাপরাধীদের নেত্রী বেগম ‘খালেদা জিয়ার’ দুর্নীতি মামলা ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট’। ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের’ মামলায় দোষী প্রমাণিত হয়ে তিনি এখন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত। অপরদিকে তার ছেলে মিস্টার ১০% ‘তারেকের’ হয়েছে দশ বছরের জেল। এবং সর্বোচ্চ স্বস্তির বিষয় হলো, বাংলাদেশে বিশ্বাসী জনগণ এই রায়কে চমৎকারভাবে সাধুবাদ জানিয়েছেন। এই রায় নিয়ে নগর-বন্দরে এও শোনা যায়, ঠিক-ই আছে পাঁচবার জন্ম নেয়া বেগম জিয়ার পাঁচ বছর। আর ১০% খাওয়া তারেকের ১০ বছরের জেল। অর্থাৎ, এই রায়ের বৈধতা প্রসঙ্গে জনগণ একটা যুক্তিপূর্ণ গল্পও দাঁড় করিয়েছেন। ভিন্নভাবে বললে, করবেই বা না কেন এই তো সেদিনও (২০০১-০৬) সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষক বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দুর্নীতিতে বিশ্ব হ্যাটট্রিকের কলঙ্ক জুটেছিল বাংলাদেশের। যদিও আজ সেই রহস্য উন্মোচিত। ‘বেগম জিয়ার নেতৃত্ব এবং তারেকের তত্ত্বাবধানই’ যে এই কাণ্ডকারখানার কারিগর তা আজ বিশ্বে প্রমাণিত। তবে একটি কারণে জনগণ শেখ হাসিনার কাছে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। কারণ, তাঁর সাহসিকতায় আজ ‘জিয়া পরিবারের বুর্জোয়া’ মনোভাব ভেঙ্গে গেছে। প্রতিষ্ঠা পেয়েছে ‘ফুকোডিয়ান’ চিন্তার। অর্থাৎ, প্রধানমন্ত্রীর কারণেই আজ জনগণের যে কেউ যে কোন সময় ক্ষমতাবান হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। তাঁর আরেকটি উল্লেখ্যযোগ্য দিক হলো- তিনি প্রমাণ করেছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংবিধান (২৭নং অনুচ্ছেদ) মতে ‘বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং প্রত্যেকেই সমানভাবে সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী।’ সেই প্রেক্ষিতেই খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার কারাদণ্ড হয়েছে। অনুপ্রেরণা এবং স্পর্ধার কারণ হতে কর্মফল লাগে। শেখ হাসিনার তা আছে। তাই বিশ্বাস করা যায়, নারী ভোটাধিকার প্রাপ্তিতে ‘এমিলি ডেভিডসনের’ ত্যাগ এবং নেতৃত্বের কারণে ব্রিটেন যেমন আজও তাঁকে মুকুট করে রেখেছে। বাঙালীও তাঁর অধিকার এবং উন্নয়ন প্রচেষ্টার স্বীকৃতিস্বরূপ ‘শেখ হাসিনাকে’ ‘সাহস এবং স্পর্ধা’ হিসেবে অনুসরণ করবে। লেখক : ছাত্র নেতা [email protected]
×