স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ ॥ নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে অপহৃত মাজেদ আলী হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করেছেন র্যাব-১১ সদস্যরা। অপহৃত মাজেদ আলীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ মেঘনা নদীতে ফেলে দেয়া হয়। র্যাবের হাতে গ্রেফতারকৃত সোহেল নামে এক নৌকার মাঝি জবানবন্দীতে এই হত্যাকাণ্ডের এমনিই বর্ণনা দেন। এ ঘটনায় র্যাব সদস্যরা এ পর্যন্ত মূল হোতা আদম বেপারি মহিউদ্দিন বুলু (৪২)সহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। সোমবার রাত দেড়টায় মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়ার শিমুলিয়া এলাকা থেকে সুলতান মাহমুদ বাবুকে (৩৬) গ্রেফতার করে। গত ১০ মে শুক্রবার কুমিল্লার দাউদকান্দি বাজার ঘাট থেকে নৌকার মাঝি সোহেলকে (২১) গ্রেফতার করা হয়। গত ৮ এপ্রিল মহিউদ্দিন বুলুকে গ্রেফতার করে র্যাব সদস্যরা। গ্রেফতারকৃত নৌকার মাঝি সোহেল র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে মাজেদ আলী হত্যাকা-ের লোমহর্ষক বর্ণনা দেয়। মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীর র্যাব-১১ এর প্রধান কার্যালয়ে র্যাব-১১ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল কাজী শমসের উদ্দিন অপহৃত মাজেদ আলী হত্যাকা-ের রহস্য উদ্ঘাটনের কথা এক সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকে অবহিত করেন। এ সময় উপ¯ি'ত ছিলেন- র্যাব-১১ মেজর তালুকদার নাজমুছ সাকিব, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আলেপ উদ্দিন ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জসীম উদ্দিন চৌধুরী।
র্যাব-১১ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল কাজী শমসের উদ্দিন বলেন, গত ১৩ মার্চ নাজমা বেগম নামে এক নারী পাবনা থেকে এসে র্যাব-১১ বরাবর অভিযোগ দাখিল করে যে, তার স্বামী মোঃ মাজেদ আলী গত ১০ মার্চ হতে নিখোঁজ হয়। এ বিষয়ে তিনি ফতুল্লা থানায় একটি জিডি করেন। অভিযোগে উল্লেখ করেন তারা স্বামী-স্ত্রী বিদেশ যাওয়ার উদ্দেশে মহিউদ্দিন বুলু নামের এক আদম বেপারির কথায় পাবনা থেকে নারায়ণগঞ্জে আসেন। বুলু তাদের ফতুল্লায় একটি ভাড়া বাড়িতে রাখেন। পরে পাসপোর্ট, ভিসা, মেডিক্যাল ও বিভিন্ন কাজের কথা বলে বুলু তাদের কাছে থেকে ২ লাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়। বুলু তাদের বিদেশ না নিয়ে নানা ছলচাতুরী করে কালপেণ করতে থাকে। গত ১০ মার্চ মহিউদ্দিন বুলু বিকেলে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে কৌশলে মাজেদ আলীকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায়। রাতে বুলু ফিরে আসলেও মাজেদ আলী আর ফিরে আসেনি। তখন থেকে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। অভিযোগ পাওয়ার পর র্যাব-১১ এর একটি বিশেষ গোয়েন্দা দল নিখোঁজ মাজেদ আলীর সন্ধান ও সন্দেহভাজন মহিউদ্দিন বুলুকে গ্রেফতারের জন্য গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু করে। গত ৮ এপ্রিল ফতল্লার শিবু মার্কেট এলাকা হতে মহিউদ্দিন বুলুকে গ্রেফতার করা হয়।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত মহিউদ্দিন বুলুকে নিখোঁজ মাজেদ আলীর পরিণতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে সে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান করে। কিš' অভিযুক্ত মহিউদ্দিন বুলুর ও নিখোঁজ মাজেদ আলীর মোবাইল কললিস্ট ও ঘটনার দিনে তাদের গতিবিধি পর্যালোচনা করে দেখা যায় ওই দিন তারা নারায়ণগঞ্জ থেকে বিকেলে দাউদকান্দি ব্রিজ এলাকায় ও সন্ধ্যায় মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানাধীন মেঘনা নদীর তীর এলাকায় অব¯'ান করে। পরবর্তীতে অভিযুক্ত মহিউদ্দিন বুলু নারায়ণগঞ্জে ফিরে আসলেও নিখোঁজ মাজেদ আলীর ব্যবহৃত মোবাইলটি ওই এলাকা থেকে বন্ধ পাওয়া যায়। এই ঘটনায় র্যাবের সহযোগিতায় নিখোঁজ মাজেদ আলীর স্ত্রী নাজমা বেগম বাদী হয়ে ফতল্লা মডেল থানায় গত ৯ এপ্রিল একটি মামলা দায়ের করেন। র্যাব-১১ এর একটি বিশেষ গোয়েন্দা দল এ ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য ছায়া তদন্ত অব্যাহত রাখে।
তিনি আরও জানান, ধারাবাহিক অনুসন্ধানে জানা যায়, কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকার সোহেল নামে এক নৌকার মাঝি ঘটনার দিন গত ১০ মার্চ আদম বেপারী মহিউদ্দিন বুলু নিখোঁজ মাজেদ আলী ও অজ্ঞাত এক লোককে নিয়ে মেঘনা নদীতে নৌকা চালিয়েছিল। এর ধারাবাহিকতায় শুক্রবার ১০ মে কুমিল্লার দাউদকান্দি বাজার ঘাট হতে নৌকার মাঝি সোহেলকে আটক এবং তার নৌকাটি জব্দ করা হয়। গ্রেফতারের পর র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নৌকার মাঝি সোহেল ঘটনার লোমহষর্ক বর্ণনা দিয়ে জবানবন্দী প্রদান করে। সোহেল র্যাবের কাছে জবানবন্দীতে জানায়, আদম-বেপারি মহিউদ্দিন বুলু ও বাবু একত্রে সোহেলের নৌকায় মাজেদ আলীকে পাশবিক নির্যাতন করে, গলা টিপে ও নাক-মুখ চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে মেঘনা নদীতে লাশ ভাসিয়ে দেয়। পরে বুলু ও বাবু সোহেলকে ১ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে দাউদকান্দি ব্রিজের পশ্চিম পার্শ্বে নেমে যায়। গ্রেফতারকৃত নৌকার মাঝি সোহেল গত সোমবার নারায়ণগঞ্জ জেলার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে। পরে র্যাব সদস্যরা সোমবার রাত দেড়টায় গজারিয়ার গুয়াগাছিয়ার শিমুলিয়া এলাকায় তার নিজ বাড়ি হতে সুলতান মাহমুদ বাবুকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত বাবুর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যব¯'া গ্রহণের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে তিনি জানান।
ঢাকা, বাংলাদেশ শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
