ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দাম বাড়াবেন না

প্রকাশিত: ০৯:৩৭, ৭ এপ্রিল ২০১৯

দাম বাড়াবেন না

প্রধানমন্ত্রী আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্যের দাম না বাড়ানোর জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতি। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, গত কয়েক মাস ধরে দেশে নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল। এটি নিঃসন্দেহে বর্তমান সরকারের অন্যতম একটি সাফল্য। মাঝে-মধ্যে দু’একটি পণ্য নিয়ে বাজার একটু সরগরম হলেও তা নিছক ব্যবসায়ীদের কারসাজি ছাড়া বিকল্প কিছু বলা যাবে না। আরও একটি সুসংবাদ হলো, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারেও ভোগ্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। সরবরাহ এবং মজুদও পর্যাপ্ত। সে অবস্থায় আসন্ন বৈশাখী ও রমজান উপলক্ষে পাইকারি ও খুচরা বাজারে সামান্য তেজীভাব পরিলক্ষিত হলেও তা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। রমজান আসতে কয়েক সপ্তাহ বাকি। বাজারে প্রায় প্রতিটি ভোগ্যপণ্যের দামে উত্তাপ লক্ষ্য করে সহজেই প্রতীয়মান হয় যে, রমজান আসন্ন। রোজাদারদের প্রায় জিম্মি করে নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্রের দাম বাড়ানোর একটি প্রবণতা দেখা যায় প্রায় সব আমদানিকারক, প্রস্তুতকারকসহ, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের। একই চিত্র লক্ষ্য করা যায় প্রতিবছরই রমজান, ঈদ-উল-ফিতর ও ঈদ-উল-আযহার কিছুদিন আগে থেকেই। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে ভোগ্যপণ্যের দাম কমতির দিকে। সে অবস্থায় দেশে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ানোর বিষয়টি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। রমজানে নানা কারসাজি ব্যবসায়ীরা করে থাকে প্রতিবছরই। দাম বাড়ার জন্য ব্যবসায়ীরা নানা সময়ে নানা অজুহাতও দিয়ে থাকেন। কখনও বলেছেন, আকস্মিক মৌসুমী বৃষ্টিপাত, কখনওবা বৈশাখ মাস, কখনও বলেছেন চাহিদা বেশি, যোগান কম ইত্যাদি। কেউ কেউ বলছেন, প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে চাল আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ করায় ব্যবসায়ীরা চাল আনছেন না। ফলে চাপ পড়েছে দেশীয় চালে। অথচ ধান-চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পর এমনটি হওয়ার কথা নয়। অন্যদিকে, বিশ্বে সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, মাছ উৎপাদনে চতুর্থ এবং গবাদিপশু ও পোল্ট্রিতে উৎপাদন বাড়লেও, ক্রেতাকে এসব পণ্যই কিনতে হচ্ছে বাড়তি দামে। ফলে মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস ওঠে আর অসহায় হয়ে পড়ে গরিব ক্রেতারা। এবার তেমনটি হবে না বলেই প্রতীয়মান হয়। টান পড়েছে শাক-সবজির বাজারে। সর্বাধিক উল্লম্ফন পরিলক্ষিত হচ্ছে গরু ও খাসির মাংসের দামে। গাবতলীসহ গরুর হাট এবং সীমান্তে গরু চোরাচালান নিয়ে প্রবল টানাপোড়েন চলতে থাকায় মাংসের বাজার চড়া। জনগণের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে, প্রয়োজনে বিদেশ থেকে মাংস আমদানি করা হোক। মাংসের দামের অনিবার্য প্রভাব পড়েছে মাছ, ডিম ও দুধের বাজারেও। অথচ বাস্তবতা হলো আন্তর্জাতিক বাজারে এমনকি প্রতিবেশী দেশেও ভোগ্যপণ্যের দাম বর্তমানে নিম্নমুখী। এ থেকে যা বোধগম্য তা হলো, রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে প্রায় অবাধে সুযোগ নিয়ে থাকে ভোগ্যপণ্য আমদানিকারকসহ পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। আর জনগণ বহুল উচ্চারিত এই সিন্ডিকেটের সামনে অনেকটা অসহায়, প্রায় জিম্মি হয়ে পড়ে। অথচ মধ্যপ্রাচ্যসহ বিদেশে উৎসব, পালা-পার্বণ উপলক্ষে ব্যাপক ছাড় দেয়া হয় ভোগ্যপণ্যে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির নানা কারণের মধ্যে অন্যতম দুর্বল বাজার মনিটরিং, অসাধু আমদানিকারক, উৎপাদক, পরিবেশক, সরবরাহকারী, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী, অকার্যকর টিসিবি সর্বোপরি ট্যারিফ কমিশন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রাজস্ব বোর্ডের মধ্যে কোন সমন্বয় না থাকা। যে কারণে ভোক্তা ও ক্রেতা স্বার্থ অধিকার এবং সংরক্ষণ বরাবরই উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। সিন্ডিকেট তথা মুুষ্টিমেয় ব্যবসায়ী চক্রের বাজারে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ও মুনাফা লুটে নেয়ার কথা প্রায়ই উচ্চারিত হয়। ব্যবসাবাণিজ্যে লাভ-ক্ষতি-মুনাফা ইত্যাদি থাকবেই। তবে এ সবই হতে হবে নীতি-নৈতিকতা, সততা ও নিয়মকানুনের আওতায়, যে ক্ষেত্রে আমাদের ঘাটতি রয়েছে বহুলাংশে। সরকার তথা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এক্ষেত্রে কঠোর মনোভাব নিয়ে অগ্রসর হতে হবে বাজার মনিটরিং ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে।
×