ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

সুচিত্রা সেনের জন্মদিন আজ

প্রকাশিত: ১০:২২, ৬ এপ্রিল ২০১৯

সুচিত্রা সেনের জন্মদিন আজ

কৃষ্ণ ভৌমিক, পাবনা ॥ বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের ৮৮তম জন্মদিন আজ। সুচিত্রা সেনের জন্মবার্ষিকী পালন উপলক্ষে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় পাবনা জেলা প্রশাসন, সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের যৌথ উদ্যোগে দিনব্যাপী সুচিত্রা সেন সংগ্রহশালায় তার প্রতিকৃতিতে পূষ্পার্ঘ অর্পণ. কেক কাটা. চিত্রাঙ্কন, কুইজ, রচনা প্রতিযোগিতা, চলচ্চিত্র প্রদর্শন ও সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে আলোচনা সভা , সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পুরস্কার বিতরণের আয়োজন করা হয়েছে। সুচিত্রা সেনের গোপালপুর হেমসাগর লেনের পৈত্রিক বাড়িতে আজ সকালে কেক কেটে জন্মদিনের শুভসূচনা করবেন পাবনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স। জেলা প্রশাসক মোঃ জসিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি থাকবেন পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম, জেলা পরিষদ নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী আতিউর রহমান, প্রেসক্লাব সভাপতি শিবজিত নাগ, কবি সোহানী হোসেন, প্রবীণ সাংবাদিক আব্দুল মতীন খান, সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সহসভাপতি ডাঃ রাম দুলাল ভৌমিক। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক নরেশ মধু। সুচিত্রাা সেন ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি উপজেলার ডাঙ্গাবাড়ী গ্রামে মামাবাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন। তার শৈশব ও কৈশর কাটে পাবনা শহরের হেমসাগর লেনের পৈত্রিক বাড়িতে। তখন নাম ছিল রমা দাশগুপ্ত। বাবা ডাকতেন কৃষ্ণা । বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত। রমা ছিলেন বাবা-মায়ের পঞ্চম সন্তান। পাবনাতেই রমা দাশগুপ্তের পড়াশোনা বেড়ে ওঠা। তিনি শহরের মহাকালী পাঠশালা এবং পাবনা সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ১৯৪৭ সালে শিল্পপতি আদিনাথ সেনের ছেলে দিবানাথ সেনের সঙ্গে বিয়ে হয়। বিলেত ফেরত দিবানাথকে দেশে স্থিতু করতে রমার সঙ্গে বিয়ে দেন বাবা। দিবানাথের মামা বিমল রায় ছিলেন তৎকালীন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা। তিনিই রমাকে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। দিবানাথের সম্মতিতে ১৯৫২ সালে ‘শেষ কোথায়’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে রমা দাশগুপ্তের প্রথম চলচ্চিত্রে পদার্পণ। এ চলচ্চিত্রেই তিনি হয়ে ওঠেন সুচিত্রা সেন। যদিও চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়নি। ১৯৫৩ সালে উত্তম কুমারের বিপরীতে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন সুচিত্রা। ১৯৫৫ সালে দেবদাস চলচ্চিত্রে অভিনয় করে পুরস্কৃত হন। ১৯৫৯ সালে দীপ জ্বেলে যাই চলচ্চিত্রে নার্সের ভূমিকায় অভিনয় করে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেন। ১৯৬৩ সালে উত্তরফাল্গুনী চলচ্চিত্রে মা এবং মেয়ের দ্বৈত ভূমিকায় অভিনয় করেন। বিপরীতে ছিলেন বিকাশ রায়। তার শেষ চলচ্চিত্র ‘প্রণয়পাশা’ (১৯৭৮)। সারা জীবনে তিনি ৬২টি বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। হিন্দী ভাষায় সুচিত্রা সেনের সর্বজন প্রশংসিত চলচ্চিত্র হলো ‘আঁধি’ (১৯৭৪)। সঞ্জীব কুমারের বিপরীতে অভিনয় করেন তিনি। তার অভিনীত অন্যান্য হিন্দী চলচ্চিত্রগুলো হলো ‘মুসাফির’, ‘মমতা’, ‘বোম্বাই কা বাবু’ ইত্যাদি। জীবনে কম পুরস্কার পাননি তিনি। বেস্ট এ্যাকট্রেস এ্যাওয়ার্ড ছাড়াও ১৯৭২ সালে পেয়েছেন পদ্মশ্রী। ২০০৫ সালে তাকে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু তিনি অন্তরাল ভেঙ্গে পুরস্কার নিতে রাজি হননি। ২০১২ সালে তাকে বঙ্গবিভূষণ পুরস্কার দেয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার। উত্তম কুমারের বিপরীতে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটি বক্স-অফিসে সাফল্য লাভ করে। বাংলা চলচ্চিত্রে উত্তম-সুচিত্রা জুটি উপহারের কারণে আজও স্মরণীয় হয়ে আছেন তারা। এক সময় কলকাতা চলচ্চিত্রপাড়ায় উত্তম-সুচিত্রা জুটি ছাড়া কোন চলচ্চিত্র যে হিট হতে পারে না তা যেন নির্মাতারা কল্পনাও করতেন না। আর দর্শকরাও ভাবতে শুরু করেন চলচ্চিত্রের মতো এরাও বাস্তবে একই সম্পর্কে বাধা। ১৯৫৪ সালে একটি পোস্টার ঝড় তোলে উত্তম-সুচিত্রার সংসার জীবণে। সুচিত্রার সই দেয়া পোস্টারে লেখা ছিল আমাদের প্রণয়ের সাক্ষী হলো ‘অগ্নিপরীক্ষা’। উত্তমের স্ত্রী গৌরি দেবিও ভেঙ্গে পড়েন। আর সুচিত্রার স্বামী দিবানাথ সেন সুচিত্রাকে সন্দেহের চোখে দেখে অভিনয় ছাড়ার চাপ দেয়। ১০টি চলচ্চিত্রে চুক্তিবদ্ধ হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। ১৯৫৭ সালে উত্তম কুমার প্রযোজিত ‘হারানো সুর’ চলচ্চিত্রে নায়িকার চরিত্রে অভিনয়ের আহ্বান জানানো হয় সুচিত্রাকে। এর উত্তরে সুচিত্রা বলেন, তোমার জন্য সব চলচ্চিত্রের ডেট ক্যান্সেল করতে পারি। এর পর থেকে স্বামীর সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে। তিনি স্বামীর বাড়ি ছেড়ে দক্ষিণ কলকাতার নিউ আলিপুরে পৃথক বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। বাংলা চলচ্চিত্রের এই অবিসংবাদিত জুটি আজও বাঙালীর হৃদয়ে স্থায়ী আসনে অধিষ্টিত রয়েছে। উত্তম কুমারের সঙ্গে বাংলা চলচ্চিত্রে রোমান্টিকতা সৃষ্টির জন্য তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের সবচেয়ে বিখ্যাত অভিনেত্রী। ১৯৬০ ও ১৯৭০ দশকে তার অভিনীত চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে। স্বামী মারা যাওয়ার পরও তিনি অভিনয় চালিয়ে যান। সে সময় হিন্দী চলচ্চিত্র ‘আধি’ চলচ্চিত্রে তিনি একজন নেত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেন। বলা হয় এ চরিত্রটির প্রেরণা এসেছে ইন্দিরা গান্ধী থেকে। এই চলচ্চিত্রের জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে মনোনয়ন পান এবং তার স্বামী চরিত্রে অভিনয় করা সঞ্জীব কুমার শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার জেতেন। বাংলা চলচ্চিত্রের এ মহানায়িকা ২০১৪ সালের ১৭ জানুযারি কোটি কোটি বাংলা চলচ্চিত্রপ্রেমিকে কাঁদিয়ে কলকাতার বেল ভিউ হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
×