ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উৎসবের ডানা

প্রকাশিত: ০৯:০৯, ৬ এপ্রিল ২০১৯

উৎসবের ডানা

পহেলা বৈশাখ বর্ষবরণ উৎসবই দেশের একমাত্র উৎসব যেটি সর্বজনীন ও অসাম্প্রদায়িক; সব ধর্মের মানুষ একযোগে উৎসবে মেতে উঠতে পারে। এমন একটি উৎসব যত পুষ্পপত্রপল্লব শোভিত হবে, মুক্ত ও অবাধ হবে, যত নতুন নতুন মাত্রা নিয়ে উপস্থিত হবে, ততই দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলজনক। তাই এই উৎসবের ডানা ছেঁটে ফেলা সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে এই উৎসবের ওপর হামলা চালিয়েছে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি, স্পষ্ট করে বললে মৌলবাদ- যা মূলত বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি, যা বাঙালী সংস্কৃতির বিরুদ্ধাচরণকারী। আরেকটি কলঙ্ক তিলকও পরিয়ে দিতে চেয়েছিল নারী নির্যাতনকারী, তথা নারী স্বাধীনতাবিরোধী চক্র। উৎসবে যোগ দেয়া কয়েকজন নারীকে লাঞ্ছনা করা হয়েছিল। এখন কথা হলো, অশুভ শক্তির ভয়ে নিরাপত্তার অজুহাত তুলে যদি আমরা সান্ধ্যকালীন মুক্তমঞ্চের প্রসারিত উৎসবকে গৃহবন্দী করে ফেলি তাহলে কাদের পরাজয় হবে? মঙ্গল শোভাযাত্রায় যদি মুখোশ পরে কেউ অপরাধ সংঘটিত করে, তবে জনতাই তাকে পুলিশে সোপর্দ করবে- এটাও বিবেচনায় নেয়া উচিত। পহেলা বৈশাখ বাংলাদেশের এমনই উৎসব যা ধর্ম, সমাজ, বয়স ও বৃত্তির সীমা পেরিয়ে সর্বত্র একাকার। নববর্ষের আনন্দ চিত্তে নতুনের জাগরণ ঘটায়। উৎসবের মধ্যে মানুষ নিজেকে খুঁজে পায় বৃহত্তরের গন্ডিতে। রবীন্দ্রনাথ যেমনটা বলেছেন, ‘প্রতিদিন মানুষ ক্ষুদ্র দীন একাকী- কিন্তু উৎসবের দিনে মানুষ বৃহৎ; সেদিন সে সমস্ত মানুষের সঙ্গে একত্র হইয়া বৃহৎ, সেদিন যে সমস্ত মনুষ্যত্বের শক্তি অনুভব করিয়া মহৎ।’ পহেলা বৈশাখ নতুন আঙ্গিকে জীবন গড়ার শপথের দিন। পারস্পরিক সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টির প্রেরণার দিন। এমন দিনে কোন বিধিনিষেধ আরোপের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা কাম্য। দেশের মানুষ পহেলা বৈশাখ বর্ষবরণের জন্য অধীর প্রতীক্ষায় আছে তাদের উৎসাহ উদ্যম আন্তরিকতা ও সৃষ্টিশীলতা নিয়ে। এই উৎসব হওয়া উচিত অবাধ, মুক্ত, আনন্দমুখর। উৎসবের নামে উচ্ছৃঙ্খলতাকে এদেশের মানুষ আগে সমর্থন করেনি। আগামীতেও করবে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নববর্ষের উৎসব পালনে কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, কতিপয় ব্যবস্থার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এটা অনস্বীকার্য যে, নিরাপত্তার ঝুঁকি থাকতে পারে। কিন্তু সে ঝুঁকি নিরসন ও প্রতিরোধ করার ক্ষমতাও রয়েছে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। ইতোপূর্বে তারা এক্ষেত্রে দৃঢ় ভূমিকাও রেখেছেন। আমরা বিশ্বাস করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মানুষের বর্ষবরণের আবেগ ও নান্দনিক অনুভূতিকে ভালভাবেই অনুধাবনে সক্ষম হবে। তাই উৎসবে কোন ভয়ে শঙ্কিত না হয়ে নিরাপত্তা বিধান ও সহযোগিতা প্রদানই বিবেচ্য হওয়া সমীচীন। উৎসবকামী সাধারণ মানুষের বিপুল উপস্থিতি ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখে ভীতসন্ত্রস্ত হবে সংখ্যায় সীমিত দুর্বৃত্ত মহল। শতফুল ফোটার দারুণ উপলক্ষ প্রত্যক্ষ করে তারাই বরং সঙ্কুচিত হয়ে পড়বে। সবদিক বিবেচনা করে বিধিনিষেধের যৌক্তিকতা পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন। বর্ষবরণের অনুষ্ঠান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মানুষকে উৎসববিমুখ করার অর্থ উৎসব বিরোধীদের জয়ের পথ দেখানো। সরকার দেশবাসীকে নিয়ে আয়োজন করবে উৎসবের, বরণ করবে নতুন বর্ষকে- এটাই প্রত্যাশা মানুষের।
×