ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নাজনীন বেগম

নীল ঝিনুকের গল্প

প্রকাশিত: ১১:০০, ৫ এপ্রিল ২০১৯

নীল ঝিনুকের গল্প

ফারজানা মিতুর বই ‘তুমি আমার নীল ঝিনুকের গল্প’ প্রকাশ করে নালন্দা প্রকাশন। প্রচ্ছদ আঁকেন ধ্রুব এষ। ২০১৯ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বইটি পাঠকের কাছে পৌঁছায়। নিবেদিত লেখক যেভাবে সারা বছর অপেক্ষা করেন তার প্রকাশিত বই গ্রন্থমেলায় নিয়ে আসতে একইভাবে পাঠকরাও দিন গুনতে থাকে নতুন বই হাতে পাওয়ার আকাক্সক্ষায়। এমন অকৃত্রিম যোগসাজশে প্রতিবছর বইমেলায় যেমনি গ্রন্থের সম্ভার সবাইকে মুগ্ধতার স্রোতে ভাসিয়ে নেয় তেমনি নিত্য নতুন সচেতন পাঠক তৈরির সম্ভাবনাও মেলা প্রাঙ্গণের এক অভিনব, নান্দনিক দ্যোতনা। বইয়ের মিছিলে স্টলগুলোতে যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। শুধু কি তাই? পাঠকের দুর্বার অভিগমনে মেলা প্রান্তরে উপচেপড়া ভিড়ই শুধু নয় বরং অসংখ্য দর্শনার্থীর বই কেনার হিড়িকও দৃষ্টিনন্দন। ফারজানা মিতু বাংলাদেশের একজন নিয়মিত সৃজন ব্যক্তিত্ব। কবিতা দিয়ে তার শৈল্পিক সুষমা ঝঙ্কৃত হলেও ক্রমান্বয়ে গল্প, প্রবন্ধ এমনকি উপন্যাস লিখেও পাঠকদের নজর কাড়তে সমর্থ হয়েছেন। আলোচ্য বই ‘তুমি আমার নীল ঝিনুকের গল্প’ উপন্যাস নাকি এর আদলে বড় গল্প সে বিবেচনার ভার পাঠকের জন্য তোলা রইল। সৃষ্টি বৈচিত্র্যের এমন নান্দনিক শিল্প নির্মাতা বইটির উৎসর্গ পত্রেও যোগ করেছেন এক অভিনব ও চমকপ্রদ বার্তা। মানুষ নিজেকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসে এটা অতি বাস্তব কথন। প্রিয়জনের অস্তিত্বও যে নিজের মধ্যে প্রচ্ছন্ন থাকে লেখিকা উৎসর্গ পত্রে সেটাই দৃশ্যমান করেছেন। অর্থাৎ কিনা মিতুকেÑ মিতুই গ্রন্থটি সমর্পণ করল। সত্যিই বিস্ময়াভিভূত হওয়ার মতো। বইটির বিষয়বস্তু সাজানো হয়েছে ব্যক্তি জীবনের অনুভব, স্বপ্ন, আশা-আকাক্সক্ষার এক অবিমিশ্র হৃদয়াবেগে। গল্পের নায়িকা নাকি আলো বিতরণ করা এক বিমুগ্ধ উদীয়মান তরুণী নিবেদিত পাঠকের ভূমিকায় তার মেধা, মনন এমনকি সর্বস্ব উজাড় করে দিতে একটুও ভাবে না। সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়া একজন প্রাণচঞ্চল তরুণী ভাবী জীবনের যথার্থ পথনির্দেশনাকে তোয়াক্কা না করে সৃজনশীল সাহিত্যে নিজেকে সমর্পণ করতে দ্বিধাহীন। শুধু বই পড়া নয় গ্রন্থের শৈল্পিক রূপকার তার অন্তরের মর্মমূলেও নাড়া দেয়। এক আনন্দঘন স্পন্দনে শরীর-মন নিঃশেষে নিবেদিত হয়। হৃদয়ে ঝড় তোলা এমন আত্মিক প্রাবল্য সংসারের গুরুজনদের দৃষ্টিকে কোনভাবেই এড়াতে পারে না। ধরা পড়ে যায় বাবা-মা এমন কি পরিবারের গৃহপরিচারিকার হাতেও। কন্যার এমন অনাকাক্সিক্ষত স্বাপ্নিক আচ্ছন্নতা পিতা-মাতা শঙ্কিত হন, এই মোহাবিষ্টতা থেকে কন্যাকে মুক্ত করতে তৎপরও হন। ফারজানা মিতু তার গল্পের নায়িকাকে সুরের সুললিত ভাষা ‘মূর্ছনা’ নামের যথার্থতা পাঠকের সামনে স্পষ্ট করেন। যার লেখা পড়ে মূর্ছনা সব সময় নিবিষ্ট হয়ে থাকে তার নাম আদিত্য রায়হান। রায়হানের গল্পের শিল্পিত চয়ন মূর্ছনাকে যে জগতে বাস করায় সেখানে বাস্তবতার কষাঘাত পৌঁছাতে পারে না। চৈতন্যের অতলান্ত সাগরে আকণ্ঠ নিমজ্জিত অবস্থায় মূর্ছনার সম্বিত ফিরে আসে না। কল্পনার স্বর্গরাজ্যে নিজের ভুবন তৈরি করা গল্পের আলোকচ্ছটা পাঠককেও নিয়ে যায় এক মন্ত্রমুগ্ধ সম্মোহনী পর্যায়ে। গল্পের বিষয়বস্তুতে আর কোন চমকপ্রদ ব্যাপার আছে কিনা তা জানতে গেলে পাঠককে বইটি অবশ্যই পড়তে হবে। কোন এক নির্দিষ্ট গন্তব্যে এগিয়ে যাওয়া গল্পটিতে এক সময় আবির্ভূত হয় লেখক আদিত্য রায়হান নিজেই। পাঠক নন্দিত এই লেখকের জানতে বাকি থাকে না তার অগণিত ভক্তের পরম পাওয়াটি। পাঠক সমাজের কাছে সমাদৃত এই শৈল্পিক নির্মাতা নিবেদনের স্তুতিতে সব সময়ই সিক্ত হতে থাকেন। যা কোন নান্দনিক দ্যোতনার নিয়ামক শক্তি। একজন সৃষ্টিশীল লেখক তার কাহিনীর বিষয়বস্তুতে পাঠক প্রিয়তাকে এমন অনন্য জায়গায় নিয়ে যায় যেখানে গুণমুগ্ধ ভক্তরা নিয়মিত তার শৈল্পিক পরিচর্যার অনুষঙ্গ হয়ে যায়। এই অবিচ্ছিন্নতা এমন এক গ্রন্থিতে আটকানো যেন লেখক আর পাঠক একে অপরের সহায়ক ও পরিপূরক হয়। শুধু পাঠ নয় কোন এক সময় প্রিয় লেখক তার হৃদয়ের স্পর্শকাতর অনুভবে আসন গড়ে নেয়। যার যথার্থ পরিণতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় গল্পের রূপকারকেও সেখানে থমকে যেতে হয়। এমন এক বিচিত্র অনুভবে বইটির বিষয়বস্তু, আঙ্গিক ও বৈশিষ্ট্য পাঠককে মুগ্ধ করবে। অনেক না বলা ঘটনা পাঠকের জন্য সযতেœ আড়ালে রাখা হলো যাতে পাঠক বইটি পড়তে বিশেষ আগ্রহ পায়। সহজ, সরল, সাবলীল ভাষায় লেখা বইটা নতুন পাঠক তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। পাঠক প্রিয়তা পেতেও সময় লাগবে না। বইটির বহুল প্রচার কামনা করছি।
×