ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কোহিনুর আক্তার

বার্টির বৃহস্পতি তুঙ্গে

প্রকাশিত: ১২:১২, ৩ এপ্রিল ২০১৯

বার্টির বৃহস্পতি তুঙ্গে

মাত্র ২২ বছর বয়স। এই সময়ের মধ্যেই দুই মঞ্চে আলো ছড়িয়েছেন এ্যাশলে বার্টি। অস্ট্রেলিয়ার তরুণ প্রতিভাবান এই প্রমীলা খেলোয়াড় ক্রিকেটের পর এখন মাতাচ্ছেন টেনিস। এক সময় বিগব্যাশে পারফর্ম করা পাঁচ ফিট সাড়ে পাঁচ ইঞ্চি উচ্চতার এ্যাশলে বার্টি এখন চমক দেখাচ্ছেন টেনিস কোর্টে। কয়েকদিন আগে জিতে নিয়েছেন মিয়ামি ওপেন। বাঘা বাঘা খেলোয়াড়দের হতাশায় ডুবিয়ে টেনিসের অন্যতম মর্যাদার এই শিরোপা উঁচিয়ে ধরলেন এ্যাশলে বার্টি। মিয়ামি ওপেনের ফাইনালে চেক প্রজাতন্ত্রের ক্যারোলিনা পিসকোভাকে হারিয়ে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় শিরোপা জয়ের স্বাদ পেলেন এ্যাশলে বার্টি। টুর্নামেন্টের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ান প্রতিনিধি ৭-৬ (৭/১) এবং ৬-৩ গেমে পরাজিত করেন বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের সাবেক নাম্বার ওয়ান তারকা ক্যারোলিনা পিসকোভাকে। সেই সঙ্গে ক্যারিয়ারের চতুর্থ শিরোপা উঁচিয়ে ধরেন তিনি। টুর্নামেন্টের পঞ্চম বাছাই পিসকোভাকে হারিয়ে দারুণ খুশি বার্টি। এ বিষয়ে নিজের অভিমত প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘গত ১৫দিন আমার জন্য বিস্ময়কর। খুব ভাল টেনিস খেলেছি আমি। আমার জন্য অবশ্যই এটা অনেক বড় ম্যাচ। মঞ্চটাও অনেক বড় ছিল। যেভাবে আমি এবং আমার টিম এখানে পারফর্ম করেছে তাতে সত্যিই গর্বিত। এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে, এই দুই সপ্তাহে খুব ভাল টেনিস খেলেছি আমি।’ মর্যাদার এই টুর্নামেন্ট জয়ের সৌজন্যে বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়েও ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে এ্যাশলে বার্টির। প্রথমবারের মতো শীর্ষ দশে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। মিয়ামি ওপেনের শিরোপা জেতায় বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের নয় নম্বরে উঠে এসেছেন বার্টি। যা গত অর্ধ-যুগের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম কোন নারী টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে এই কীর্তি গড়লেন তিনি। তার আগে সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়ার কোন খেলোয়াড় হিসেবে শীর্ষ দশে জায়গা করে নিয়েছিলেন সামান্থা স্টোসার। ২০১৩ সালের মে মাসে সামান্থা স্টোসারের পর এবার সেই রেকর্ড গড়লেন এ্যাশলে বার্টি। ১১ থেকে দুই ধাপ এগিয়ে নয়ে উঠে এলেন তিনি। অথচ একটা সময় ক্রিকেট মাঠেও দাপট দেখিয়েছেন এ্যাশলে বার্টি। এই গল্পটাও ক্রীড়ামোদিদের অনেকের জানা। ২০১৪ সালে ইউএস ওপেনের পর টেনিস ছেড়ে দেন তিনি। কোর্ট থেকে নেমে পড়েন ২২ গজে। টেনিস খেলোয়াড় থেকে পুরোদস্তুর ক্রিকেটার বনে যান তিনি। অসাধারণ নৈপুণ্য প্রদর্শন করে জায়গা করে নেন অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটেও। শুধু তাই নয়, নারীদের বিগ ব্যাশ টি-টোয়েন্টি লীগের মতো মঞ্চও মাতিয়েছেন তিনি। অবশ্য ক্রিকেটে দুই বছরের বেশি থিতু হতে পারেননি বার্টি। ২০১৬ সালেই আবারও টেনিস কোর্টে ফিরে আসেন তিনি। প্রত্যাবর্তনের সময়টাতে অবশ্য আশানুরূপ পারফর্মেন্স দেখা যায়নি বার্টির কাছ থেকে। তবে এ বছরের শুরু থেকেই দুর্দান্ত খেলেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনেও দুর্দান্ত পারফর্ম করেন এই অস্ট্রেলিয়ান তারকা। মেয়েদের এককে টেনিসের সাবেক শীর্ষ তারকা মারিয়া শারাপোভাকেও যে পরাজয়ের স্বাদ উপহার দেন তিনি। পারফর্মেন্সের সেই ধারাবাহিকতা এখনও ধরে রেখেছেন তিনি। মিয়ামি ওপেনে পিসকোভাকে হারিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম ডব্লিউটিএ প্রিমিয়ার ম্যানডেটরি শিরোপা জিতলেন বার্টি। ফাইনালে ওঠার পথে দুইবারের উইম্বলডনজয়ী পেত্রা কেভিতোভা এবং স্বদেশী সামান্থা স্টোসারকেও পরাজিত করেন এই অস্ট্রেলিয়ান প্রতিনিধি। বার্টির কাছে হেরে চরম হতাশ ক্যারোলিনা পিসকোভা। তবে চেক তারকা জানালেন কোর্টে খুব ক্লান্ত ছিলেন তিনি। আবহাওয়াও তার বিপক্ষে ছিল এদিন। যে কারণেই টেনিস কোর্টে নিজের সেরাটা উপহার দিতে পারেননি তিনি। তবে সেমিফাইনালেও দুর্দান্ত খেলেন পিসকোভা। শেষ চারেও সরাসরি সেটে রোমানিয়ার সিমোনা হ্যালেপকে পরাজিত করেছিলেন তিনি। সেজন্য অবশ্য ফাইনালে হারলেও র‌্যাঙ্কিংয়ে পুরস্কার পেয়েছেন পিসকোভা। তিন ধাপ অগ্রগতি হয়েছে তার। যে কারণে সপ্তম থেকে চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছেন বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের সাবেক এই এক নম্বর খেলোয়াড়। মিয়ামি ওপেনের ফাইনালিস্ট এ্যাশলে বাটি এবং ক্যারোলিনা পিসকোভার মতো সর্বশেষ প্রকাশিত র‌্যাঙ্কিংয়ে অগ্রগতি হয়েছে এ্যানেট কোন্টাভেইট, ওয়াং কিয়াং এবং বিয়ানকা আন্দ্রেস্কুরও। তবে এ্যাশলে বার্টি ফ্লোরিডায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ফলে ব্যতিক্রমধর্মী এক রেকর্ডের সাক্ষীও হলো বিশ্ব টেনিস। এ বছরের প্রথম ১৪টি একক ইভেন্টের সবগুলোতেই শিরোপা জিতেছেন ভিন্ন ভিন্ন ১৪জন টেনিস খেলোয়াড়। মিয়ামি ওপেনের পুরুষ এককেও একই গল্প রচনা হতে চলছিল! কিন্তু তা হতে দেননি রজার ফেদেরার। রবিবার ফাইনালে জন ইসনারকে হারিয়ে ভিন্ন ভিন্ন খেলোয়াড়দের জয়ের সেই ধারাবাহিকতা থামিয়ে দিলেন বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের সাবেক এই নাম্বার ওয়ান। ২০১৯ সালে পুরুষ এককে এখন পর্যন্ত ১৯টি টুর্নামেন্ট সম্পন্ন হয়েছে। যার ১৮টিতেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন ভিন্ন ভিন্ন ১৮ খেলোয়াড়। তবে রজার ফেদেরারই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি দুটি টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। তা না হলে এবার ১৯টি টুর্নামেন্টে ভিন্ন ভিন্ন চ্যাম্পিয়ন দেখার সুযোগ পেত বিশ্ব টেনিস। রবিবার মিয়ামি ওপেনের ফাইনালে জন ইসনারকে পরাজিত করে টুর্নামেন্টের চতুর্থ শিরোপা জয়ের স্বাদ পেলেন ফেড এক্সপ্রেস। সেই সঙ্গে ক্যারিয়ারের ১০১তম ট্রফি জয়ের কীর্তি গড়লেন সুইজারল্যান্ডের এই জীবন্ত কিংবদন্তি। ৩৭ বছর বয়সী ফেড এক্সপ্রেস শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে ৬-১ এবং ৬-৪ গেমে খুব সহজেই পরাজিত করেন আমেরিকান তারকা জন ইসনারকে। শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে হারিয়ে ক্যারিয়ারের ২৮তম মাস্টার্স শিরোপা জিতে দারুণ খুশি ফেদেরার। নিজের অভিমত প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘কী দুর্দান্তই না একটা সপ্তাহ পার করলাম। এই মুর্তে আমি সত্যিই দারুণ খুশি। এটা অবিশ্বাস্যই মনে হচ্ছে আমার কাছে। কেননা, ১৯৯৯ সালে এখানে প্রথম খেলেছিলাম আমি। আর সেই আমিই ২০১৯ সালেও খেলছি এই টুর্নামেন্টে। আমার কাছে এটা তাই স্বাভাবিকভাবেই অনেক কিছু।’
×