ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রের নিন্দায় আরব লীগ

প্রকাশিত: ০৯:০৯, ২ এপ্রিল ২০১৯

যুক্তরাষ্ট্রের নিন্দায় আরব লীগ

গোলান মালভূমিকে ইসরাইলের এলাকা হিসেবে মার্কিন স্বীকৃতিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন আরব নেতারা। এ স্বীকৃতি দেয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর সমালোচনা করেন তারা। আরব নেতারা এ স্বীকৃতির জন্য দেশটিকে নিন্দা জানান। রবিবার তিউনিসিয়ার রাজধানী তিউনিসে আরব লীগের শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই শীর্ষ সম্মেলনে ফিলিস্তিন সঙ্কটের বিষয়টিও উঠে আসে। সম্মেলনে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় নতুন করে আহ্বান জানানো হয়। নেতৃবৃন্দ বলেন, এ অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তা নির্ভর করছে কয়েক দশক ধরে চলা ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংঘাত সমাধানের ওপর। আরব অঞ্চলের চলমান অস্থিরতা ও সংঘাতের মধ্যেই দিনব্যাপী এই শীর্ষ সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হলো। আরব লীগের ৩০তম সম্মেলনের চূড়ান্ত বিবৃতি পাঠ করেন তিউনিসিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেমাইস ঝিনাউয়ি। তিনি আরব দেশগুলোতে চলমান সংঘাতকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য প্রথম পদক্ষেপ হলো আরবদের মধ্যে পুনরায় মিত্রতা স্থাপন করা। আরব লীগ শীর্ষ সম্মেলনের চূড়ান্ত ঘোষণায় বলা হয়, আরব লীগ নিশ্চিত করছে যে, আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘ ও নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গোলান মালভূমি অধিকৃত সিরীয় এলাকা। গোলান মালভূমি বিষয়ে পৃথক এক বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, এ বিষয়ে ওয়াশিংটনের ‘সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক ও অবৈধ।’ আরব লীগের চূড়ান্ত ঘোষণায় নেতারা সিরিয়ার অধিকারের বিষয়ে পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন। আরব নেতারা ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি আলোচনা পুনরায় শুরু করতে তাদের অব্যাহত প্রেেচষ্টার কথা ব্যক্ত করেন। আরব লীগের সমাপনী সংবাদ সম্মেলনে সেক্রেটারি জেনারেল আহমেদ আবুল গেইত বলেন, এটা সত্য যে, যুক্তরাষ্ট্র সামরিক দিক দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী, কিন্তু দেশটির সিদ্ধান্ত পুরোপুরি তাৎপর্যহীন। গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ গোলান মালভূমিকে ইসরাইলের এলাকা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে একটি ঘোষণায় স্বাক্ষর করেন। এই গোলান মালভূমি ১৯৬৭ সালে সিরিয়ার কাছ থেকে দখল করে নেয় ইসরাইল। পরে ১৯৮১ সালে ইসরাইল এটা নিজেদের ভূমি হিসেবে দাবি করে। ইসরাইলের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পায়নি। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের তিনটি প্রস্তাবে গোলান মালভূমি ছেড়ে দেয়ার জন্য ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রগুলোও। ইউরোপীয় ইউনিয়নও এই স্বীকৃতিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। আরব লীগের চূড়ান্ত ঘোষণায় এ অঞ্চলের অন্যান্য সমস্যা তেমন গুরুত্ব পায়নি। উপসাগরীয় অঞ্চলের কূটনৈতিক সমস্যা এবং সিরিয়া ও ইয়েমেনের সঙ্কটের বিষয়টি উঠে আসেনি চূড়ান্ত ঘোষণায়। চূড়ান্ত ঘোষণায় শুধু ওয়াশিংটনের গোলান মালভূমিকে ইসরাইলের স্বীকৃতির বিষয়টি এবং ফিলিস্তিন সঙ্কটের বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। আরব লীগের মধ্যেও উত্তেজনা রয়েছে। কাতারের সরকারী সংবাদ সংস্থা কিউএনএ জানায়, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার পর সম্মেলন থেকে বেরিয়ে যান। তবে বিস্তারিত কিছু জানায়নি তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিউনিসিয়ার এক কর্মকর্তা জানান, আরব লীগের প্রধান আবুল গেইতের বক্তৃতা চলাকালে কাতারের আমির অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে যান এবং তিউনিসিয়া ত্যাগ করেন। উদ্বোধনী ভাষণে আবুল গেইত আরব দেশগুলোর ওপর হস্তক্ষেপের জন্য তুরস্ক ও ইরানের ওপর বিরক্তি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, তেহরান ও আঙ্কারা এ অঞ্চলের সঙ্কট আরও ঘনীভূত করেছে। সম্মেলনের আগে সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সউদ বলেন, পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। এ সময় পবিত্র শহর জেরুজালেমের জিম্মাদার জর্দানের বাদশাহ আব্দুল্লাহ আল-আকসা মসজিদ শহর রক্ষার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। মিসরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল-সিসি ‘যন্ত্রণাদায়ক যুগের অবসানে’ একটি ‘সমন্বিত শান্তিপূর্ণ সমাধানের’ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এর ফলে সাত দশক ধরে আমাদের সামর্থ্যরে অপচয় হচ্ছে। আরব লীগের শীর্ষ সম্মেলনে ফিলিস্তিনী কর্তৃপক্ষের (পিএ) প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস অব্যাহত ইসরাইলী দখলদারিত্বের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দোষারোপ করেন।-এএফপি ও আলজাজিরা
×