ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

ক্রাইস্টচার্চে হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর সংগ্রাম

প্রকাশিত: ১১:৩৩, ১৫ মার্চ ২০১৯

ক্রাইস্টচার্চে হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর সংগ্রাম

মিথুন আশরাফ ॥ ক্রাইস্টচার্চের হাগলি ওভালে এর আগে একটিমাত্র টেস্টই খেলেছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্ট সিরিজের সর্বশেষ টেস্টটিই হয়েছিল ক্রাইস্টচার্চে। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে হওয়া সেই টেস্টে ৯ উইকেটে হেরেছিল বাংলাদেশ। সেবার দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ওয়েলিংটনে ৭ উইকেটে হারের পর ক্রাইস্টচার্চে হেরে সিরিজ হার হয়েছিল বাংলাদেশের। এবার হ্যামিল্টনের পর ওয়েলিংটনে ইনিংস হারের পর ক্রাইস্টচার্চে খেলতে নামবে বাংলাদেশ। শনিবার ভোর চারটায় ক্রাইস্টচার্চে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টেস্টটি শুরু হবে। এবার কী বিপদমুক্ত হতে পারবে বাংলাদেশ? ওয়েলিংটনে দ্বিতীয় টেস্টে হেরেই ২-০ ব্যবধানে সিরিজ হার হয়ে গেছে। এখন বাংলাদেশের সামনে হোয়াইটওয়াশ হওয়া অপেক্ষা করছে। তৃতীয় টেস্টে না হারলেই হোয়াইটওয়াশ এড়াতে পারবে বাংলাদেশ। কিন্তু তা কী সম্ভব? ওয়েলিংটনে হারের পর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ক্রাইস্টচার্চ নিয়ে যা বলেছেন, তাতেতো বাংলাদেশের সামনে একই দুর্দশা অপেক্ষা করছে। ভারপ্রাপ্ত টেস্ট অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ বলেছেন, ‘নতুন বলে (ওয়েলিংটনে) যেভাবে শুরু করেছিলাম, তামিম ভাল ব্যাটিং করছিল। প্রথম ইনিংসে সাদমান-তামিমের ভাল শুরু হয়েছিল। প্রথম টেস্টেও তাই হয়েছিল। ইনিংসের মাঝে ওয়াগনার যখন তার ওই বাউন্সার থিওরি কাজে লাগাতে শুরু করল কিছুক্ষণ ভাল খেলার পর আর পারিনি। আরেকটু সাহস নিয়ে খেলতে হবে। দ্বিধায় থেকে আমরা অনেক ব্যাটসম্যান এই ভুল করেছি। নিবেদিত থাকছি না বা দোমনায় ভুগেছি, মারব কি মারব না। এই উইকেটে এটা করা ঠিক না। যদি শট খেলতে চান খেলতে হবে অথবা বাউন্সারের সামনে টিকে থাকতে হবে। পরের টেস্টে এমন উইকেট থাকতে পারে নাও পারে, ক্রাইস্টচার্চের উইকেট একটু গতিময় আছে। একই কন্ডিশন হয়তো পাব। আমাদের ব্যাটসম্যানদের আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। অনভিজ্ঞ বোলিং আক্রমণ, তিনটা নতুন পেসার, ওদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। ব্যাটসম্যানদের দোষই বেশি। আড়াইদিনে আমরা দুবার অলআউট হয়েছি, যেটি খুবই হতাশার।’ মাহমুদুল্লাহর কথাতেই পরিষ্কার ক্রাইস্টচার্চে আরও গতিময় বোলিং মিলতে পারে। তাতে করে ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদি, ওয়াগনাররাতো আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবেন। তাহলেতো বিপদ থাকছেই। মাহমুদুল্লাহ অবশ্য সঙ্গে ব্যাটসম্যানদের পক্ষ নিয়ে এও বলেছেন, ‘গ্রাফ অনুযায়ী আমাদের খেলোয়াড়দের মানসিকতা ও স্কিলে অনেক উন্নতি হয়েছে। এ ধরনের কন্ডিশনে ভাল করতে হলে আমাদের আরও মানসিকভাবে শক্ত হতে হবে। প্রথম টেস্টের আগে বলেছিলাম আমাদের ইতিবাচক থাকতে হবে। শুরু থেকেই যদি চিন্তা করি যে সুইং হবে, আউট হয়ে যেতে পারি, তাহলে তো নিজেই নিজের কাছে হেরে গেলাম। যদি অন্তত ইতিবাচক থাকেন তাহলে আপনার ভাল করার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। এখনও একই বার্তা থাকবে। শুনতে হাস্যকর লাগবে, আমি এখনও আশাবাদী আরও ভাল করার সামর্থ্য রাখে এ দল। এই (ওয়েলিংটন) টেস্ট কিংবা হ্যামিল্টনে যেভাবে খেলেছি এরচেয়ে ভাল খেলার সামর্থ্য আমাদের আছে। সবাইকে নিজেদের মতো করে চিন্তা করতে হবে যে দলে কিভাবে অবদান রাখতে পারি। এটা ভাবনার বিষয়। কথা বলে লাভ নেই। কাজে করে দেখাতে হবে। যদি করতে পারি ১৭ বছর আগের ঘটনা আর আসবে না।’ ২০০০ সালে টেস্টে পা রাখার পর ২০০১ সালে প্রথমবার নিউজিল্যান্ড সফরে যায় বাংলাদেশ। প্রথমবার টানা দুই টেস্টেই ইনিংস ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ। টেস্ট ক্রিকেটে ১৯ বছরে পা রেখেও একই অবস্থা হচ্ছে। প্রথমবার যে অবস্থা হয়েছিল পঞ্চমবারেও সেই একই অবস্থা হলো। প্রতিবারই নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়ে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ। ক্রাইস্টচার্চে খেলতে নামার আগে আছে তিনদিন। এই তিনদিনে কি মানসিকভাবে চাঙ্গা হওয়া যাবে। আত্মবিশ্বাস বাড়ানো যাবে? এবার কী এমন ব্যর্থতা থেকে নিজেদের মুক্ত করা যাবে? মাহমুদুল্লাহ জানিয়েছেন, ‘যেহেতু সময় হাতে নেই যেন মানসিকভাবে তৈরি হতে পারি। আমি আশাবাদী, শেষ টেস্টটা ভাল করতে পারব।’ ক্রাইস্টচার্চে সর্বশেষ টেস্টটিতে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ২৮৯ রানে অলআউট হয়েছিল। ভালই ব্যাটিং হয়েছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৭৩ রানে গুটিয়ে যায়। খারাপ হয়। তাতে হার হয়। এবার দুই টেস্ট খেলা হয়ে গেছে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো তিন টেস্টের সিরিজ খেলছে বাংলাদেশ। খেলতে খেলতে ক্লান্তও দলের ক্রিকেটাররা। সেই ক্লান্তিতে আরও বিপত্তি মিলবে না তো? সেই প্রশ্নও উঠছে। এ অবস্থা থেকে মুক্ত হতে এখন ক্রিকেটারদের কাছে বিশেষ করে ব্যাটসম্যানদের একটা পথ খোলা আছে। তা মনে করছেন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তার ভাষ্যমতে মানসিকভাবে শক্ত থাকা ছাড়া কোন গতি নেই। তিনি জানিয়েছেন, ‘আমাদের ক্রিকেটারদের মানসিকতা ও স্কিলের অনেক উন্নতি হয়েছে। তবে এই ধরনের কন্ডিশনে আরও ভাল করতে হলে মানসিকভাবে আরেকটু শক্ত হতে হবে। এছাড়া আর কোন বিকল্প নেই। প্রথম টেস্টে খেলা শুরুর আগেই আমি বলেছিলাম, আমাদের ইতিবাচক থাকতে হবে। ম্যাচের আগেই যদি ভাবতে থাকেন যে সুইং হবে, সিম হবে, বাউন্স হবে, আউট হয়ে যেতে পারি, তাহলে ওখানেই আপনি হেরে যাবেন। ইতিবাচক থাকলে অন্তত ভাল পারফর্ম করার সুযোগ বেশি থাকে।’ এখন দেখা যাক, ক্রিকেটাররা মানসিকভাবে শক্ত থাকতে পারেন কিনা। ক্রাইস্টচার্চে বিপদমুক্ত হতে পারেন কিনা।
×