ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্ষকের নাম-পরিচয়

প্রকাশিত: ০৯:০৮, ১৩ মার্চ ২০১৯

ধর্ষকের নাম-পরিচয়

উন্নয়নের ক্রমবর্ধমান ধারায় বাংলাদেশ জোর কদমে এগিয়ে যাচ্ছে। সমাজের অর্ধাংশ নারী সমৃদ্ধির জোয়ারে নিয়তই সম্পৃক্ত হচ্ছে। তা না হলে বিকাশমান অগ্রগতি এত তাড়াতাড়ি দৃশ্যমান হতো না। সঙ্গত কারণে সমতাভিত্তিক সমাজ গঠনে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের রোল মডেল। বিভিন্ন বৈশ্বিক প্রতিবেদন এমন তথ্য প্রকাশ করে যাচ্ছে উন্নয়ন সংস্থার প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে শ্রেণী বিভক্ত সমাজে মানুষে মানুষে ফারাক যেমন দৃশ্যমান, পাশাপাশি নারী-পুরুষের তারতম্যও চোখে পড়ার মতো। অসহায়, পশ্চাৎপদ, নির্বিত্ত শ্রেণী যেমন সামনে চলতে গিয়ে বার বার হোঁচট খায়, পিছিয়ে পড়া অংশ হিসেবে নারী জাতির অভিগামিতাও অনেক সময় সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়ে। এটা শুধু বাংলাদেশের চিত্রই নয়- বিশ্বজুড়ে নারী জাতির এমন দুর্বিষহ অভিশাপ কমে গেলেও নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি। আজও বিশ্ব সোচ্চার হয় নারীর অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে। মি-টুর কাতারে শারীরিকভাবে অপেক্ষাকৃত দুর্বল অংশকে সমবেত হতে হয় তাদের ওপর হয়ে যাওয়া অত্যাচার-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে। ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে নারীর স্বাধিকার অর্জনের মহিমান্বিত পর্ব যেমন আলোচিত হয়, পাশাপাশি নারী নিগ্রহের অনেক চিত্রও সামনে চলে আসে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ঐতিহাসিক দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরতে গিয়ে উদাত্ত কণ্ঠে বলেন, শুধু অর্জন নয়, বিসর্জনের অভিশাপগুলোও সামনে নিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরী। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত নারী দিবসের এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন সর্বক্ষেত্রে নিশ্চিত করে নারীদের চলার পথ নির্বিঘ্ন করা যেমন জরুরী, পাশাপাশি নিপীড়িতের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের ওপর ঘটে যাওয়া অন্যায়েরও জোরালো প্রতিবাদ করা প্রত্যেকের দায়বদ্ধতা। অনেক অসম্মান আর অভিশাপের ভার কাঁধে নিয়ে অসহায় মেয়েদের জীবন কাটাতে হয়। সেখান থেকে মেয়েদের অবশ্যই বের হয়ে আসতে হবে। শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার কোন নারীকে অন্যায়ের বোঝা বহন করতে দেয়া উচিত নয়। নির্যাতক কিংবা ধর্ষকের মুখোশ সবার সামনে খুলে দিতে হবে। এমন অত্যাচারী ব্যক্তিটিকে চিনিয়ে দেয়া সবার দায়িত্ব। তাকে অবশ্যই উপযুক্ত শাস্তির আওতায় এনে বিচারিক কার্যক্রম চালাতে হবে। ইতোমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত তৈরি করা হয়েছে, যাতে দ্রুত বিচারে অপরাধীকে তার ন্যায্য দ- পেতে সময়ক্ষেপণ করতে না হয়। আর প্রত্যেক নারী নিজেই হবে তার যথার্থ রক্ষক। আত্মরক্ষার সমস্ত উপায় কাজে লাগিয়ে নিজের সুরক্ষা শুধু নয়, পাষ- ব্যক্তিটিকেও ধরিয়ে দিতে হবে। সমাজের অর্ধাংশ নারী। তাদের বাদ দিয়ে সমাজ কখনও সুস্থ, স্বাভাবিক আর মঙ্গলময় হয়ে উঠবে না। বর্তমান সরকার নারীর অধিকার নিশ্চিতকরণ, সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথকে নির্বিঘ্ন করার আইনানুগ সমস্ত ব্যবস্থা ইতোমধ্যে কার্যকর করেছে। তাকে আরও সুসংহত করে নারীদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে। শুধু শিক্ষায়ই নয়, বিভিন্ন উপযোগী পেশায় মেয়েরা আজ নিজেদের সম্পৃক্তই করেনি তার চেয়েও বেশি দক্ষতা ও ক্ষমতায়নে তৈরি হয়ে সমাজে প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থানকেও শক্ত করেছে। এই এক অভাবনীয় বিজয় রথ, যেখানে নারীরা আইনশৃঙ্খলা ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর মতো চ্যালেঞ্জিং পেশায়ও যোগ্য হিসেবে প্রমাণ করে যাচ্ছে। সচেতনতা শুধু নারীর নয়, প্রত্যেক দায়িত্বশীল নাগরিকের বিশেষ দায়বদ্ধতা রয়েছে প্রচলিত রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে নারীর প্রতি সহনশীল, মানবিক এবং মানুষ হিসেবে তাদের প্রতিষ্ঠিত করা।
×