ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

১৯৯৬-০৬ সাল পর্যন্ত রাজতন্ত্র উচ্ছেদের লড়াই

গৃহযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য নেপালে আইনী লড়াই

প্রকাশিত: ০৬:৫৬, ৪ জানুয়ারি ২০১৯

গৃহযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য নেপালে আইনী লড়াই

নেপালে মাওবাদীদের সঙ্গে গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তরা এখনও অন্তর্বর্তীকালীন বিচার দাবি করছে। দ্য ডিপ্লোম্যাট। ২০০২ সালের নবেম্বর মাসে দুই সন্তানের পিতা কৃষ্ণা ঘিসিং নেপালের পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা থেকে বাসে করে রাজধানী কাঠমান্ডুতে যান। তার পরিকল্পনা ছিল সেখানে গিয়ে কোরিয়া যেতে ভিসার জন্য আবেদন করবেন। তাকে বহনকারী বাসটি যখন দোলখা এলাকার হালহালের এক সেতু পার হচ্ছিল তখন মাও বিদ্রোহীদের পুতে রাখা বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। ১৯ দিন কোমায় থাকার পর যখন ঘিসিংয়ের জ্ঞান ফেরে তখন তিনি বুঝতে পারেন তার কোমর থেকে পা পর্যন্ত অবশ হয়ে গেছে। পরবর্তী নয় মাস হাসপাতালে কাটানোর পর তিনি বাড়ি ফেরেন। প্রায় এক বছর পর ২০০৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর দেশের অপর প্রান্তের লোক গয়া প্রসাদ চৌধুরীকে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বাহিনী আটক করে। বারদিয়া এলাকার রাজাপুর থেকে তাকে মাওবাদী কর্মকান্ডে যুক্ত থাকায় সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়। যদিও চৌধুরী খুবই নিরীহ ছিলেন তারপরও পুলিশ তাকে লোহার পাইপ দিয়ে পেটায় এবং বৈদ্যুতিক তার দিয়ে শক দেয়। অবশেষে তাকে মুক্তি দেয়। নির্যাতনের ফলে চৌধুরীর মেরুদ- ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যে কারণে তিনি এখন ক্রনিক পেইন (দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা) আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি স্থায়ীভাবে খুঁড়িয়ে হাঁটেন। কয়েক সপ্তাহ আগে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের প্রথমদিকের এক সকালে চৌধুরী ও ঘিসিং একসঙ্গে বসে চা খান। তারা জনসম্মুখে ছবি প্রদর্শনীতে যোগ দেন। যা চৌধুরীর নিজ এলাকা রাজাপুরে হয়। ওই প্রদর্শনীটি করে কনফ্লিক্ট ভিকটিমস কমন প্ল্যাটফর্ম (সিভিসিপি) নামে একটি মানবাধিকার গোষ্ঠী। যারা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতিনিধিত্ব করে থাকে। ওই প্রদর্শনীতে চৌধুরী, ঘিসিং ও অপর আরও ১২ জন ক্ষতিগ্রস্তের ছবি প্রদর্শন করে তার বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া আরও অনেকে সেখানে যোগ দেন। নেপালের গৃহযুদ্ধে ক্ষতির শিকার অন্যদেরও ওই প্রদর্শনীতে স্থান দেয়া হয়েছে। ১৯৯৬-০৬ সাল পর্যন্ত সংগঠিত গৃহযুদ্ধের ফলে ১৬ হাজার লোক নিহত, তিন হাজারেরও বেশি লোক নিখোঁজ ও লাখ লাখ লোক আহত হয়েছেন। এসব নিরপরাধ লোক মাওবাদী ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর মাঝে পড়ে ক্ষতির শিকার হন। প্রদর্শিত ছবিগুলোতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা তাদের বেঁচে থাকার গল্প বলেন। কিভাবে তাদের চিকিৎসা করছেন তাও জানাচ্ছেন। তাদের ওপর হামলা হওয়ার ব্যাপারে সত্য তুলে ধরছেন এবং বিচার চাইছেন। সিভিসিটি বর্তমানে ছবি প্রদর্শনী করার কাজ করছে। যার শিরোনাম দেয়া হয়েছে ‘১৪ স্টোরিজ: লিভিং মেমোরিজ অব ওয়ার’। সারা দেশব্যাপী সফরের মাধ্যমে এই প্রদর্শনী চালাচ্ছে।
×