একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর প্রথম সংবাদ সম্মেলনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপির জন্য শিক্ষণীয়ও বটে! সোমবার সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী বিদেশী নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে খোলামেলা আলাপচারিতায় নিজ দলের বিজয় এবং বিএনপির পরাজয়ের কারণ ব্যাখ্যা করেন। বিপুল ভোটে বিজয় প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, গত ১০ বছরে দেশের ব্যাপক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি, দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনা, জনগণের জীবনমানের সার্বিক উন্নয়ন, মাথাপিছু আয়-উপার্জন বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে দেশের সাধারণ মানুষ পছন্দের দল হিসেবে বেছে নিয়েছে তাঁর দলকে। অন্যদিকে বিএনপির ভরাডুবি হয়েছে নিজেদের দোষে। এর অন্যতম কারণ দলটির কোন নেতা ছিল না। বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দুটি দুর্নীতির মামলায় বর্তমানে কারাগারে অন্তরীণ এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য সাজাপ্রাপ্ত। অন্যদিকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান তথা ভাইস চেয়ারম্যান তারেক জিয়াও দুর্নীতি, মানি লন্ডারিংয়ের দায়ে বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করছেন। তদুপরি ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা করে ২৪ জনকে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে আদালত কর্তৃক যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত। এ অবস্থায় দলটি স্বভাবতই নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ে। নতুন কোন নেতা নির্বাচন করতে না পারায় নির্বাচিত হলে কে হবেন প্রধানমন্ত্রী তা তারা ভোটারদের সামনে উপস্থিত করতে পারেনি। ফলে স্বভাবতই বিএনপির কর্মী ও সমর্থকরা বিভ্রান্ত হয়েছে।
অন্যদিকে ঐক্যফ্রন্ট গঠনের নামে ড. কামাল হোসেন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিএনপি-জামায়াতকে রাজনীতিতে পুনর্বাসনের জন্য হাল ধরলেও দেশের মানুষ তা আস্থায় নিতে পারেনি। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশিষ্ট আইনজীবী হলেও মাঠে-ময়দানের রাজনীতিতে ড. কামাল হোসেন অপরিপক্ব, অনভিজ্ঞ। অতীতের কিছু কর্মকা-ের জন্যও তিনি বিতর্কিত। যে কারণে তার গ্রহণযোগ্যতা নেই বললেই চলে। সর্বোপরি দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখা এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কোন ইতিবাচক পরিবেশ উপহার দিতে পারেনি ঐক্যফ্রন্ট। বরং রাত-দিন তারা ব্যস্ত ছিলেন নির্বাচন কমিশন ও প্রধানমন্ত্রীর দরবারে নালিশ ও অভিযোগ দায়ের করা নিয়ে। সাধারণ মানুষ বিষয়টি পছন্দ করেনি, বরং বিরক্ত হয়েছে। একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর কাছ থেকে দেশের মানুষ এমন পাঠশালার ছাত্রদের মতো বালখিল্য আচরণ প্রত্যাশা করেনি। এর পরিবর্তে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের উচিত ছিল মাঠে-ময়দানে সাধারণ মানুষের কাছে যাওয়া এবং তাদের চাওয়া-পাওয়া তুলে ধরা, যেটা তারা আদৌ করেনি। মনে রাখতে হবে যে, শুধু সংবাদ সম্মেলন ও নালিশ করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া যায় না। তদুপরি মানুষ এটাও ভেবে দেখেছে যে, দেশের একটি বড় দলের দুর্নীতি ও মানুষ হত্যার দায়ে দ-প্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানকে তারা ভোট দেবেন কেন? এর পাশাপাশি তারা নিকট অতীতে ২০১৩-১৪-এর জ্বালাও-পোড়াও-পেট্রোল বোমার রাজনীতি এবং ২০০৯-এর বিজয় পরবর্তী দেশব্যাপী ব্যাপক লুটপাট, দাঙ্গা-হাঙ্গামা-ধর্ষণ-রাহাজানি-প্রতিপক্ষকে খুন-হত্যা ইত্যাদির কথাও ভুলে যায়নি। অতীতের এসব ভুল থেকে বিএনপিকে অবশ্যই শিক্ষা নিতে হবে সুস্থ ধারার রাজনীতিতে ফিরে আসতে হলে। বিএনপি তা আদৌ করবে বলে মনে হয় না। অন্তত এবারের নির্বাচনেও তার প্রমাণ মিলেছে।
সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন এবং আওয়ামী লীগের বিজয়ের পর নির্বাচন কমিশনের কাছে বিএনপি তথা-ঐক্যফ্রন্টের পুনর্নির্বাচনের দাবিও আদৌ টিকবে বলে মনে হয় না। নির্বাচনোত্তর সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সঙ্গত কারণেই জোট ও দলটির এই অযৌক্তিক দাবি নাকচ করে দিয়েছেন। তবে নির্বাচন কমিশনে কোন লিখিত অভিযোগ এলে তা তদন্ত করে দেখা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন। এই অবস্থায় ঐক্যফ্রন্ট তথা বিএনপি-জামায়াত আগামীতে কি পদক্ষেপ গ্রহণ করে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
শীর্ষ সংবাদ: