ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আলোচিত দশ

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১ জানুয়ারি ২০১৯

আলোচিত দশ

রশিদ মামুন ॥ বিদায় ২০১৮। ২০১৯ এর প্রথম সূর্যোদ্বয়কে স্বাগতম। শুরু হলো আরকটি নতুন বছর। ঘটনা প্রবাহে ২০১৮ সকলের স্মৃতিতে স্থান করে নেবে। বছরজুড়ে যেসব ঘটনা আলোচনার জন্ম দিয়েছে মানুষের মুখে মুখে ঘুরেছে সেসব। সেইসব ঘটনা প্রবাহ পাঠককে আরও একবার স্মরণ করিয়ে দিতে এই আয়োজন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ॥ ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হলো দেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সবদলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনটি ছিল অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষরা বলেছেন নির্বাচনে সাধারণ মানুষ বাধা-ভয়হীন পরিবেশে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছেন। যাতে আওয়ামী লীগের প্রতি সারাদেশের মানুষের আস্থার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। গত দশ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করেছে। সারাবিশ^ এখন বাংলাদেশকে সম্মান এবং সমীহ করে কথা বলে। এই উন্নয়নের রূপকার একজনই তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মানুষ দেশকে সমৃদ্ধ দেখতে চায় বলেই হাসিনাতে আস্থা রেখেছে। অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে শেখ হাসিনার প্রতি এবার মানুষের আস্থা বেড়েছে। এই গণরায়ই তার বড় প্রমাণ। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট পেয়েছে ২৮৭টি আসন। বিএনপি জোটকে মানুষ ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। মাত্র আটটি আসনে জয় পেয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এই রায় আওয়ামী লীগের দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়তে চতুর্থবারের মতো দেশের নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন ॥ ১৩ অক্টোবর ২০১৮ সালে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমমনা রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়। দেশের প্রবীণ আইনজীবী ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াত এই জোটে নির্বাচনে অংশ নেয়। জামায়াত বিএনপি ছাড়তে রাজি না হওয়ায় এই জোট থেকে বেরিয়ে যায় জোটের উদ্যোক্তা ড. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারা বাংলাদেশ। সরকারের সঙ্গে সংলাপে সন্তুষ্ট হয়েই এই জোট নির্বাচনে অংশ নেয়। জোটের পক্ষ থেকে ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের সারাদিন মোটাদাগে কোন অভিযোগ উত্থাপন করা সম্ভব হয়নি। সন্ধ্যায় গণরায় তাদের বিরুদ্ধে যাচ্ছে চিন্তা করেই নির্বাচন বাতিল করে আবার নির্বাচন দেয়ার দাবি জানান জোটের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। বেগম খালেদা জিয়ার জেল ॥ দেশে দুবার প্রধানমন্ত্রীর দয়িত্ব পালন করেছেন বেগম খালেদা জিয়া। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের নামে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট নামে একটি এতিমখানা খুলে সেখান থেকে নিজের ছেলে তারেক রহমানকে টাকা সরিয়ে নিতে সহায়তা করেছেন। এতিমদের টাকা মেরে দেয়ার প্রমাণ পাওয়ায় বেগম খালেদা জিয়াকে বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি ২টা ২৯ মিনিটে ৫ বছরের কারাদ- দেয় আদালত। ওইদিন পৌনে ৩টার দিকে তাকে কারাগারে নেয়া হয়। মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলা ॥ সকলের প্রিয় মানুষ প্রিয় শিক্ষক প্রিয় লেখক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বছরের ৩ মার্চ জঙ্গী হামলার স্বীকার হন। মুক্তমতকে চিরদিনের জন্য বন্ধ করে দিতে জঙ্গীরা এই হত্যাচেষ্টা চালায়। তবে সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে তিনি সকলের মাঝে ফিরে এসেছেন। কোটা আন্দোলন ॥ ৩১ জানুয়ারি একটি রিট আবেদনের মধ্যদিয়ে এই আন্দোলনের সূচনা হয়। ওই রীট আবেদনে বলা হয়, সরকারী চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা বিদ্যমান রয়েছে। এই কোটা পদ্ধতি সংবিধানের ১৯, ২৮, ২৯ ও ২৯/৩ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। যদিও ৫ মার্চ ২০১৮ হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ মামলাটি খারিজ করে দেন। এরপর কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের ৫ দফা দাবি নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী ও সরকারী চাকরি প্রত্যাশীরা ধারাবাহিকভাবে আন্দোলনে নামে। এই আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লে ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। গত ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সরকারী চাকরির প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর সব কোটা তুলে দেন। নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ॥ ২৯ জুলাই ঢাকার শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় বাসের জন্য দাঁড়িয়ে ছিল। ঘরে ফেরার অপেক্ষায় থাকা এইসব শিক্ষার্থীদের ওপর জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস তুলে দেয়। এতে নিহত হন ২ জন। আহত হন আরও ১২ জন। রাস্তায় পড়ে থাকা ছিন্নভিন্ন শরীর দেখে শিউরে উঠেছিল তাদের সহপাঠিরা। মুহূর্তে সারাদেশের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসেন। চোখে আঙ্গুল দিয়ে শিখিয়ে দিয়েছেন কি করে ছোটরাই পারে বড় কাজ করতে। রাস্তায় বৃষ্টিতে ভিজে, কাঁদায় মাখামাখি হয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করেছে এসব শিক্ষার্থীরা। আলোচিত এই আন্দোলনের চাওয়া ছিল সকলের জন্য নিরাপদ সড়ক চাই। বহুদিন খুদেদের এই আন্দোলন মনে থাকবে অনেকের। বিমান দুর্ঘটনা ॥ ১২ মার্চ ২০১৮ বাংলাদেশের সব মানুষের জন্য বিকেলটা ছিল একটু ভিন্নরকম। হতাশা ভরা চোখে জল আর হৃদয়ের সহানুভুতি শুভ কামনা সঙ্গে করে সকলে চোখ রেখেছিল টেলিভিশনের বেক্রিং নিউজে। সেদিই নেপালের স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে ঘটেছিল ভয়ঙ্কর এক বিমান দুর্ঘটনা। ঢাকা থেকে ৭১ আরহী নিয়ে কাঠমান্ডু গিয়েছিল বেসরকারী বিমান সেবা সংস্থা ইউএস বাংলার ফ্লাইট দু ওয়ান ওয়ান। কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমান বন্দরে নামার সময় বিমানটি ছিটকে পড়ে। এতে নিহত হন ৫১ জন। আর জীবিত উদ্ধার হয় ২০ জন। বছর জুড়েই আলোচনায় ছিল এই বিমান দুর্ঘটনা। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ॥ ২১ আগস্টের কথা মনে হলেই ভয়াল এক চিত্র ভেসে ওঠে সকলের সামনে। রাষ্ট্রীয় সকল সুবিধা সঙ্গে নিয়ে দেশকে রাজনীতি শূন্য করার এক চক্রান্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনার (তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা) ওপর হামলা চালিয়ে বিএনপি সরকার হত্যা চেষ্টা করে। ওই ঘটনায় আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন কয়েকশ’ মানুষ। এ বছর ১০ অক্টোবর মামলাটির রায় দিয়েছে আদালত। সেই রায়ে ১৯ ব্যক্তির মৃত্যুদ- ও ১৯ ব্যক্তির যাবজ্জীবন কারাদ-ের আদেশ দেয়া হয়। ভবিষ্যতে ২১ আগস্টের মতোই অন্যসব রাজনৈতিক হত্যাকা-ের বিচার হওয়ার প্রত্যাশায় রয়েছে সকলে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ॥ ১১ মে ২০১৮ কেনেডি স্পেস সেন্টার উৎসবের আমেজ। আর বাংলাদেশীদের চোখ টিভি স্ক্রিনে। আমাদের প্রথম স্যাটেলাইট উড়ছে আকাশে। বিশে^র ৫৭তম দেশ হিসেবে নিজস্ব স্যাটেলাইটের মালিক হলো বাংলাদেশ। মহাকাশে পৌঁছে গেল বাঙালীর লাল সবুজের পতাকা। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে সম্প্রচার করছে দেশের সরকারী-বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল। দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছে যাচ্ছে ইন্টারনেট সেবা।
×