ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

কর্মপরিবেশের উন্নতি ॥ কারখানায় মৃত্যুহার কমেছে

প্রকাশিত: ০৪:৪৬, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮

কর্মপরিবেশের উন্নতি ॥ কারখানায় মৃত্যুহার কমেছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কর্মপরিবেশের উন্নতি হওয়ায় কারখানাগুলোতে মৃত্যুহার কমেছে। গত ২০১৭ সালে দেশের বিভিন্ন খাতে অনিরাপদ কর্মপরিবেশের কারণে ১২৪২ জন শ্রমিক নিহত হন। চলতি বছর কমে এই মৃত্যুহার নেমে এসেছে ৮৯৮ জনে। অর্থাৎ ধীরে ধীরে কারখানাগুলোতে নিরাপদ পরিবেশ ব্যবস্থা গড়ে উঠছে। বৃহস্পতিবার বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা বাংলাদেশ অক্যুপেশনাল সেইফটি, হেল্থ এ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ফাউন্ডেশন (ওশি)র বার্ষিক জরিপ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এ প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনী মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ১৫টি জাতীয় দৈনিক সংবাদপত্র এবং ওশির উদ্যোগে মাঠপর্যায় থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। ওশি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এ আর চৌধুরী রিপন সমীক্ষা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ২০১৮ সালে কর্মক্ষেত্রে নিহত শ্রমিকদের মধ্যে ১৫৭ জন প্রাতিষ্ঠানিক খাতে এবং ৭৪১ জন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করতেন। ওশির প্রতিবেদনে জানানো হয়, অনিরাপদ কর্মক্ষেত্রের কারণে বিভিন্ন খাতে ৮৯৮ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে আহত হয়েছেন ৩৪১ জন। ২০১৭ সালে নিহত হয়েছিলেন ১২৪২ জন শ্রমিক এবং আহত হন ৩৭১ জন। সেক্টরভিত্তিক তথ্যানুযায়ী, ২০১৮ সালে পরিবহন খাতে সর্বোচ্চ ২৮১ জন প্রাণ হারিয়েছেন, ১৬৩ শ্রমিক নিহত হয়েছেন নির্মাণ খাতে, পোশাক শিল্পে নিহত ২৮, কৃষিশ্রমিক মৃত্যুর সংখ্যা ১০৮, স্টিল মিল ও রি-রোলিং মিল শ্রমিক ৭ জন এবং দিনমজুর নিহত হয়েছেন ৪৬ জন। এছাড়া ১২ জন গৃহকর্মী, ১৯ জন শিপব্রেকিং শিল্পে কর্মরত শ্রমিক এবং ১৮ জন পাথর ও খনিজ উত্তোলনের সময় দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। অন্যান্য সেক্টরে নিহতের সংখ্যা ২০৬ জন। প্রতিবেদনে কর্মস্থলে হতাহতের উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে কর্মস্থলে আসা যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনা, বজ্রপাত, বিদ্যুতস্পৃষ্ট হওয়া, উপর থেকে পড়ে যাওয়া, মাটি বা পাথর চাপা, ভবন-দেয়াল অথবা নির্মাণ সামগ্রী ধস, বিষাক্ত গ্যাসে আটকা পড়া অথবা শ^াসরোধ হওয়া, অগ্নিকা-, গৃহ শ্রমিকদের ক্ষেত্রে শারীরিক নির্যাতন এবং ধাতব আঘাতের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নয়নে ওশির সুপারিশগুলো হচ্ছে-বাংলাদেশ শ্রম আইন (সংশোধিত ২০১৮) ও শ্রম বিধিমালা ২০১৫-এর আলোকে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিধানের কার্যকর প্রয়োগের লক্ষ্যে নজরদারি বাড়ানো, বয়লার পরিদর্শকের সংখ্যা বৃদ্ধি করা এবং বয়লার পরিদর্শন দফতরকে অধিদফতরে রূপান্তর করা, কর্মস্থলে শ্রমিকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ ব্যবহার নিশ্চিত করা, সরকারী হাসপাতালে পেশাগত রোগের চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানো, পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য একটি পৃথক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ফেডারেশন অব গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স-এর সাধারণ সম্পাদক চায়না রহমান, বাংলাদেশ ফ্রি ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস সম্পাদক লুৎফুন্নাহার লুৎফা, ওশি প্রোগ্রাম অফিসার মোঃ সাজ্জাদ কবির ভূইয়া এবং জাহাজভাঙ্গা শিল্পে কর্মরত এ্যাজবেসটসে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক আবুল কালাম প্রমুখ।
×