ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

মলয় বিকাশ দেবনাথ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যোৎসব

প্রকাশিত: ০৭:২২, ৬ ডিসেম্বর ২০১৮

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যোৎসব

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আজ সেজেছে অপরূপ সাজে। উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। উৎসবকে সার্বজনীন করার উদ্দেশ্যে থিয়েটার এ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগ এ বছর অনুষ্ঠানকে ভিন্ন আঙ্গিকে সাজিয়েছে। ১৩তম এই নাট্যোৎসবটি অন্য ১২টি থেকে অনেকটা ভিন্ন। নাটক মানুষের প্রাণ। নাটক সমাজের কথা বলে, নীতি-আদর্শের পথ দেখায়। নাটক প্রতিবাদ করে। পরিবর্তনে নাটক যে ভূমিকা নিতে পারে তার উদাহরণ জগতে কম নয়। বিজয়ের মাসে প্রতিবছরের মতো এই উৎসবের আয়োজন যেন বিজয়েরই বহির্প্রকাশ। ১৮টি নাটিকা ও ৪টি পূর্ণ নাটক নিয়ে সাজানো হয়েছে এ বছরের ৬ দিনব্যাপী উৎসব। গত ৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় অমিত চৌধুরী নির্দেশিত ‘রায়বেঁশে’ দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয় টিএসসি মিলনায়তনে। সূচনাটিও ছিল ভিন্ন ধাঁচের। মনোমুগ্ধকর এই পরিবেশনা দর্শকদের সত্যি আনন্দিত করেছে। এরপর বিভাগীয় চেয়ারম্যান ড. আহমেদুল কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান। শুভেচ্ছা বক্তব্য উপস্থাপন করেন জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। এরপর পরিবেশিত হয় শেক্সপিয়ারের ম্যাকবেথ। সৈয়দ শামসুল হকের অনূদিত ড. ইসরাফিল শাহীনের নির্দেশিত ম্যাকবেথ ইতোমধ্যে নাট্যাঙ্গনে সাড়া ফেলেছে। কিছু দিন পূর্বেই নাটকটি দিল্লীতে পরিবেশিত হয়ে নন্দিত হয়েছে। নিরীক্ষাধর্মী নাটকটি ঢাকায়ও বহুল প্রশংসিত হয়েছে। দ্বিতীয় দিন টিএসসি মিলনায়তনে পরিবেশিত হয় মনসামঙ্গল ও ময়মনসিংহ গীতিকা হতে নির্বাচিত কিছু অংশ। সাইদুর রহমান লিপনের নির্দেশনায় লোকধর্মী এ পরিবেশনা বাংলা বাঙালী ঐহিত্যকে তুলে ধরেছে। আদি রসাত্মক এ পালাটি দর্শককে বিমোহিত করেছে। এরপর আবার পরিবেশিত হয় ম্যাকবেথ। উৎসবের তৃতীয় দিন টিএসসি প্রাঙ্গণ হয়ে ওঠে উৎসবমুখর। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেন অপেক্ষায় ছিল এই সন্ধিক্ষণের। অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা প্রতিবছর অপেক্ষা করে এই উৎসবটির জন্য। লেখাপাড়া আর স্মার্টফোনে বন্দী শিক্ষার্থীরা যেন এ উৎসবের মধ্য দিয়ে নিজেদের রিফ্রেশ করে নেয়। উন্মুক্ত স্থানে হওয়ায় কিছু সৌভাগ্যবান পথচারীও পরিবেশনাগুলো উপভোগ করতে পেরেছে। ৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় নাহিদা ইসলামের নির্দেশনায় পরিবেশন করা হয় মাই মাস্টারপিস। দর্শকদের উপচে পড়া ভিড় প্রমাণ করে দেয় শিল্পের শিল্পগুণ। ১৫ মিনিটের ছোট্ট প্রযোজনায় মানুষ মুগ্ধ হয়েছে। দ্বিতীয় পরিবেশনাটি ছিল সুইসাইড নোট। মোঃ আল আমিন হাবিবের নির্দেশনায় এ প্রযোজনায় দর্শক বিমোহিত। উৎসবের আরেকটি বিশেষ দিক হচ্ছে এখানে দেশী নাটকের পাশাপাশি পাশ্চাত্যের নাটক পরিবেশিত হয়। এ ছাড়া দু-একটি সমসাময়িক বিষয়ের ওপর ইম্প্রোভাইজড নাটক পরিবেশিত হয়। সব মিলে উৎসবটি হয়ে ওঠে ভিন্নমাত্রিক। যান্ত্রিক জীবন আর মানবিক স্খলনে ধীরে ধীরে পরিবেশ ভারি হয়ে উঠছে। এর মধ্যে নাটক পরিবেশন ও তার ওপর দর্শকের প্রতিক্রিয়ায় বোঝা যায় শিল্প টিকে থাকতে পারে এবং পরিবর্তনে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। দুটো প্রযোজনার পর পুনরায় টিএসসি মিলনায়তনে পরিবেশিত হয় মোঃ তানভীর হাসান সৈকতের নির্দেশনায় নিভু নিভু শুকতারা। খ- এই নাটিকাটি ও দর্শকপ্রিয়তা পায়। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নাট্যকলা বিভাগের প্রযোজনা ক্যাপ্টেন হুররা পরিবেশন করা হয়। নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন বিভাগীয় শিক্ষক শামীম হাসান। রাত ৯-৩০ মিনিটে যখন প্রযোজনা শেষ হয় তখন মনে হলো কোন কনসার্ট শেষ হয়েছে। সবাই বাড়ি ফিরছে। রাতের টিএসসি যেন এক অপরূপ সাজে সজ্জিত হয়েছে। আগামী ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা হতে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে এ উৎসব। উৎসব নয় যেন নাট্য মহাসমাবেশ।
×