ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্র-চীন তীব্র বাগবিতন্ডা

প্রকাশিত: ০৪:০১, ১৯ নভেম্বর ২০১৮

যুক্তরাষ্ট্র-চীন তীব্র বাগবিতন্ডা

২১ জাতি এশিয়া-প্যাসিফিক অর্থনৈতিক জোটের নেতৃবৃন্দ দুই দিনব্যাপী শীর্ষ সম্মেলন শেষে যৌথ ঘোষণার বিষয়ে একমত হতে ব্যর্থ হয়েছেন। চীনের সিনিয়র কূটনীতিক ঝাং শিয়াওলং রবিবার একথা জানিয়েছেন। চীন-যুক্তরাষ্ট্র তীব্র বিরোধের জেরে যৌথ ঘোষণার বিষয়ে একমত হতে পারেননি নেতৃবৃন্দ। তিনি জানান, প্রচলিত যৌথ ঘোষণার পরিবর্তে সকল সদস্যের পক্ষ থেকে সভাপতি বিবৃতি দেবেন। অভিন্ন ইস্যুতে ঐকমত্যে পৌঁছার চেষ্টা করেছেন এপেক নেতৃবৃন্দ। ২১ জাতি এশিয়া-প্যাসিফিক জোটের দুই প্রভাবশালী সদস্য চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তীব্র বাগবিতন্ডার পর রবিবার জোটের বাকি সদস্যরা কোন একটি ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান খোঁজার চেষ্টা করেন। পাপুয়া নিউগিনির পোর্ট মোর্সবিতে রবিবার দুদিনের সম্মেলন শেষে যৌথ ঘোষণায় বিতর্ক এড়াতে আঞ্চলিক অথনৈতিক সংহতির ওপর জোর দেন। এএফপি। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার চলমান বাণিজ্য বিরোধ প্রকট আকার ধারণ করেছে। শনিবার পাপুয়া নিউগিনিতে অনুষ্ঠিত এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-আপরেশন (এপেক) সম্মেলনেও বাকি সব বিষয় ছাপিয়ে ফুটে ওঠে দুই দেশের মধ্যকার বিরোধ। সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, অর্থনৈতিক সংরক্ষণবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। তিনি দেশগুলোকে মুক্ত বাণিজ্য নীতি অনুসরণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, কেউ যদি অন্যের জন্য নিজের দরজা বন্ধ করে দেয় তাহলে সে নিজেও অন্যদের থেকে আলাদা হয়ে যাবে এবং পথ হারাবে। তিনি ‘সংরক্ষণবাদ’ ও ‘একপাক্ষিকতা’ ত্যাগ করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান। শি বলেন, এটা একটি স্বল্পমেয়াদী ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় ভবিষ্যতে ব্যর্থতা নিশ্চিত। শির পর বক্তব্য রাখতে গিয়ে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেন, যতদিন না বেজিং তাদের বাণিজ্য নীতিমালা পাল্টাচ্ছে ততদিন যুক্তরাষ্ট্র তার অবস্থান থেকে সরবে না। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক দ্বিগুণ করা হতে পারে। পেন্স আরও বলেন, আমাদের ও চীনের মধ্যকার ভারসাম্যহীনতা সমাধানের জন্য আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই লক্ষ্যে চীনা পণ্যের ওপর আমরা ২৫ হাজার কোটি ডলার শুল্ক আরোপ করেছি। যতদিন চীন তাদের অবস্থান থেকে সরে না আসবে ততদিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান থেকে সরবে না। চলতি বছর শুরু থেকেই চীন ও যুক্তরাত্রের মধ্যে বাণিজ্যিক দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে। উভয় দেশই একে অন্যের ওপর হাজার হাজার কোটি ডলার শুল্ক আরোপ করে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য নিয়ে চলমান দ্বন্দ্বে বৈশ্বিক অর্থনীতির গুরুতর ক্ষতি হতে পারে। সম্মেলনের প্রথম দিন চীন-মার্কিন বিরোধিতা এতটাই জটিল রূপ নেয় যে পেন্স এদিন চীনা প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক না করে তাইওয়ানের প্রতিনিধির সঙ্গে দেখা করেন। তাইওয়ান চীনের একটি স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপ, চীন যার ওপর নিজেদের সার্বভৌমত্ব দাবি করে থাকে। দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের প্রভাব বিস্তার দুদেশের বিরোধের আরেকটি বড় ইস্যু। চীনের প্রভাব মোকাবেলায় পাপুয়া নিউগিনিতে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে একটি নৌঘাঁটি স্থাপন করা হবে বলে পেন্স জানান। রবিবার ২১টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এপেক সম্মেলন বর্তমানে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারের একটি মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এপেক জোট দীর্ঘদিন ধরেই দারিদ্র্য নিরসন ও আঞ্চলিক দেশগুলোর জীবনমান উন্নয়নে মুক্ত বাণিজ্যের কথা বলে এসেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সম্মেলনে যোগ দিতে আসা ব্যবসায়িক নেতবৃন্দ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, এই প্রবণতা আঞ্চলিক জোট হিসেবে এপেকের জন্য ক্ষতিকর। ডিজিসেল কোম্পপানির প্রধান নির্বাহী ড্যানিস ও’ব্রিয়েন অনানুষ্ঠানিক আলাপচারিতায় বলেছেন, এটি খুব জবরদস্তিমূলক একটি পরিবেশ। যেখানে একটি দেশ অন্যান্য দেশের ওপর জোর খাটানোর চেষ্টা করছে।
×