ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বর্জ্য ফেলা হচ্ছে খোলা জায়গায় ॥ দূষিত হচ্ছে পরিবেশ

প্রকাশিত: ০৫:২০, ১০ নভেম্বর ২০১৮

 বর্জ্য ফেলা হচ্ছে খোলা জায়গায় ॥ দূষিত  হচ্ছে পরিবেশ

নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর ॥ কসাইখানার অভাবে রংপুর মহানগরজুড়ে যত্রতত্র পশু জবাই করা হচ্ছে। আর জবাই করা পশুর বর্জ্য ফেলে রাখা হচ্ছে ড্রেন, নালা এমনকি রাস্তায় বা জনবহুল রাস্তার পাশে। এতে সৃষ্টি হচ্ছে প্রচন্ড দুর্গন্ধের। দুর্গন্ধে যেমন পরিবেশ দূষণ হচ্ছে, তেমনি রাস্তায় চলাচলে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে নগরবাসীকে। নগরীর মাংস ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সিটি কর্পোরেশন রংপুরের পশু কসাইখানা মাত্র একটি। সেটির অবস্থাও জরাজীর্ণ ও অস্বাস্থ্যকর। দুই যুগ আগে নগরীর মাহিগঞ্জ সাতমাথা এলাকায় ওই কসাইখানাটি তৈরি করা হয়। এছাড়া নগরীতে আর কোন কসাইখানা নেই। সেটিও অন্যান্য এলাকা থেকে দূরে ও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। তাই পশু পরিবহনের সমস্যার কারণে ও ব্যবসায়িক প্রয়োজনে তাদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানেই পশু জবাই করতে হচ্ছে। নগরবাসীর অভিযোগ, সিটি কর্পোরেশন কোরবানির ঈদে জবাই করা পশুর বর্জ্য সঠিকভাবে অপসারণ করার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করলেও সারাবছর এ ব্যাপারে উদাসীন। প্রতিদিনই নগরীর বিভিন্ন স্থানে জবাই করা পশুর বর্জ্য যত্রতত্র পড়ে থাকতে দেখা যায়। নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মাংস ব্যবসায়ীরা ব্যবসায়িক প্রয়োজনে নগরীর বিভিন্ন বাজার এলাকায় পশু জবাই করে পশুর রক্ত ও নাড়িভুঁড়িসহ অন্যান্য বর্জ্য যেখানে সেখানে ফেলে রাখছেন। নগরীর সিটি বাজার, মুলাটোল বাজার, লালবাগের কলেজ রোড, শাপলা ও নগরীর রেলস্টেশনের বিভিন্ন স্থানে পশু জবাই করে পশুর বর্জ্য ও মল খোলা স্থানে ফেলে রাখছেন মাংস ব্যবসায়ীরা। নগরীর সিটি বাজারের মাংস ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের বলেন, নগরীতে প্রতিদিন প্রায় ৩শ’ গরু, ৪শ’ থেকে ৫শ’ ছাগল জবাই করা হয়। একটি মাত্র কসাইখানায় ৫টি গরু জবাই করে রাখার মতো জায়গা নেই। অন্যদিকে কসাইখানা সিটির অন্যান্য এলাকা থেকে দূরে হওয়ায় ব্যবসায়ীরা সেখানে পশু নিয়ে যান না। তিনি আরও বলেন, আমরা নির্ধারিত কসাইখানায় পশু জবাই করতে চাই। কিন্তু কসাইখানাই তো নাই। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যসম্মত একাধিক কসাইখানা স্থাপন করলে আমরা সকলে সেসব কসাইখানাতেই নিয়ম মেনে পশু জবাই করব। একই কথা বলেন, নগরীর মাংস ব্যবসায়ী কুদরত মিয়া, মন্টুসহ অনেকে। রংপুর জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, পশু জবাই ও মাংসের মান নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১১ অনুযায়ী কসাইখানার বাইরে পশু জবাই করা ও বর্জ্য যেখানে সেখানে ফেলে রাখা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। রংপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মাহবুবুল আলম বলেন, যত্রতত্র পশু জবাই বন্ধ করতে পশু জবাই ও মাংসের মান নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১১ রয়েছে। কেউ যদি যত্রতত্র পশু জবাই করে এবং যদি তা প্রমাণিত হয় তাহলে অনুর্ধ এক বছর বিনাশ্রম কারাদন্ড বা ন্যূনতম ৫ হাজার টাকা অথবা অনুর্ধ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আর্থিক দন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। তবে যত্রতত্র পশু জবাই বন্ধ করার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের স্যানিটারি শাখার ইন্সপেক্টর সাইফুল ইসলাম বলেন, সিটি কর্পোরেশনে মাত্র একটি কসাইখানা হওয়ার কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এ সমস্যা সমাধানে আমরা ইতোমধ্যে সিটি এলাকায় ১০টি কসাইখানা স্থাপনের প্রস্তাবনা দিয়েছি। শুধু তাই নয়, আমরা যত্রতত্র পশু জবাই এবং পশুর বর্জ্য ফেলা বন্ধে প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে কসাইখানা স্থাপনের বিষয়ে সিটি মেয়রকে প্রস্তাব দিয়েছি।
×