ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

সাকিব-তামিমকে ছাড়া একাদশ গড়া কঠিন

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ৩ নভেম্বর ২০১৮

 সাকিব-তামিমকে ছাড়া একাদশ গড়া কঠিন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ওয়ানডে সিরিজ নিয়ে কিছুটা আশঙ্কা ঘুরপাক খাচ্ছিল। কারণ পুরো কোন একটি সিরিজে এই প্রথম সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালকে ছাড়াই খেলেছে বাংলাদেশ দল। কিন্তু ওয়ানডে সিরিজে এই দুইজনকে ছাড়াই ৩-০ ব্যবধানে সফরকারী জিম্বাবুইয়েকে বিধ্বস্ত করেছে টাইগাররা। এবার দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজেও এ দু’জনকে ছাড়াই নামতে হবে। আজ সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ঐতিহাসিক একটি টেস্ট খেলতে নামবে বাংলাদেশ। এই স্টেডিয়ামের অভিষেক ঘটবে ক্রিকেট বিশ্বে টেস্ট ভেন্যু হিসেবে। সেখানেই দুই সেরা টেস্ট ক্রিকেটারকে ছাড়া নামতে হবে। তবে অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ দাবি করেছেন সাকিব-তামিম না থাকার কারণে সবার জন্যই দারুণ সুবিধা নিজেদের প্রমাণ করার। যদিও এ দুই সেরা পারফর্মারকে ছাড়া একাদশ গঠন করাই কঠিন। বাংলাদেশের টেস্ট দলে মূল স্তম্ভ সাকিব-তামিম। ব্যাটিংয়ে যেমন অন্যতম ভরসার নাম সাকিব, তেমনি বাংলাদেশের বোলিং বিভাগ তার ওপরই পুরোপুরি নির্ভরশীল। এর কারণ তার টেস্ট ক্রিকেটে দুর্দান্ত নৈপুণ্য। দেশের পক্ষে সর্বাধিক ১৯৬ টেস্ট উইকেটের মালিক তিনি ৫৩ ম্যাচে। এখন পর্যন্ত তার ধারে কাছেও কেউ থাকতে পারেননি। কারণ যখন থেকে টেস্ট খেলতে শুরু করেছেন তারপর বোলিং বিভাগে তার সঙ্গী ধারাবাহিকভাবে পরিবর্তন হয়েছে। পুরনো কেউ টিকতে পারেননি এতদিন। টানা ১১ বছর হাত ঘুরিয়ে গেছেন অপরিহার্য বোলার হিসেবে। এই বোলিং শক্তিটার এবার প্রচ- অভাব অনুভূত হবে। আবার ব্যাট হাতেও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের পক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে তৃতীয় সর্বাধিক রান তার। ৩৯.৬৯ গড়ে করেছেন ৩৬৯২। দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ টেস্ট ইনিংস ২১৭ রানও তার ব্যাট থেকে এসেছে। আর সে কারণেই এখন পর্যন্ত বিশ্বের সেরা টেস্ট অলরাউন্ডার তিনি। অপরদিকে ৫৬ টেস্টে তামিমের রান ৩৭.৮৪ গড়ে ৪০৪৯। অন্য দুই ফরমেটের মতোই টেস্টে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক রানের মালিক তিনি। গত ১০ বছর ধরে বাংলাদেশের টেস্টে ইনিংস উদ্বোধন করে গেছেন নিয়মিত। আর খেলেছেন দুর্দান্ত সব ইনিংস। এবার সেই তামিমও নেই। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষেও এই দুই বাঁহাতির পারর্মেন্স ঈর্ষা করার মতো। এই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ৫ টেস্টে ১ সেঞ্চুরি, ১ ফিফটিতে তামিমের রান ৪২.২০ গড়ে ৪২২, সাকিবের সেখানে ৬ টেস্টে ৪৭৪ রানের পাশে আছে ২৬ উইকেট । অর্থাৎ সার্বিকভাবে এবং জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে এ দু’জনই বাংলাদেশ দলের সেরা পারফর্মার। একই সঙ্গে দু’জনকে ছাড়াই এবার দুই টেস্টের সিরিজ খেলতে হবে। তামিম ও সাকিব দু’জনেরই আঙ্গুলের ইনজুরি। সে কারণেই আপাতত কোন ফরমেটের ক্রিকেটেই খেলতে পারছেন না তারা। আছেন দলের বাইরে। এছাড়াও টেস্ট ক্রিকেটে বিরল কিছু রেকর্ড আছে সাকিবের দখলে। ২০১৪ সালে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সর্বশেষ মোকাবেলায় ম্যাচে ১০ উইকেট নেয়ার পাশাপাশি ব্যাট হাতে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বিরল রেকর্ড গড়েন তিনি। তমিম সর্বশেষ ওই সিরিজে করেছিলেন ২ সেঞ্চুরি। এক সঙ্গে এই দুই অপরিহার্যকে ছাড়া টেস্ট খেলতে নেমে একাদশ নির্বাচন তাই কঠিন হবে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টের। কারণ শুধু সাকিব থাকলেই একাদশ সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে যায়। একই সঙ্গে নির্ভরযোগ্য বোলার ও ব্যাটসম্যান তিনি। সে পরিস্থিতির মুখে পড়ার কথাই জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ, ‘সাকিব থাকলে দলের ভারসাম্য নিয়ে বেশি চিন্তা করতে হয় না। সাকিব সবসময় একটা ভারসাম্য এনে দেয়। সাকিব যেহেতু নেই তাই আমাদের বাড়তি ব্যাটসম্যান কিংবা বোলার নিয়ে খেলতে হবে। সাকিব, তামিম থাকলে আমাদের সেরা একাদশ দাঁড় করানো নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করতে হতো না।’ কিন্তু এ দুই অপরিহার্য ক্রিকেটার থাকলে নতুনদের আর সুযোগ থাকতো না। স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সাকিব-তামিম একাদশে থাকতেন। এবার এ দু’জন না থাকার কারণে উঠতি দু’জন তারকার সুযোগ নিজেদের টেস্ট খেলার যোগ্যতা প্রমাণের। এ বিষয়ে মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘তামিম-সাকিব যেহেতু নেই সবার জন্য এটা সমান সুযোগ। আমার জন্যও তাই। আমরা ওই সুযোগটিকে কিভাবে দেখছি এবং আমরা কতটুকু উদগ্রীব আছি পারফর্ম করার জন্য। এই চ্যালেঞ্জগুলো আমাদের নিতে হবে। খেলোয়াড়রা সবাই সুযোগের অপেক্ষায় আছে এবং সবাই ভাল পারফর্মেন্সের অপেক্ষায় আছে।’ তবে বাস্তবে এ দুই ক্রিকেটারকে ছাড়া টেস্ট ম্যাচ খেলতে নামা বড় রকমের পরীক্ষাই হবে বাংলাদেশের জন্য। সিলেটে ঐতিহাসিক ম্যাচেই দর্শক হয়ে থাকতে হবে এ দুই দেশসেরা ক্রিকেটারকে। আর এই সুযোগে লিটন দাসের টেস্ট ওপেনার হওয়ার সুযোগ এবং নবাগত নাজমুল হোসেন শান্ত সুযোগ করে নিতে পারেন। অপরদিকে সাকিবের অভাব মেটাতে নাজমুল ইসলাম অপুকে দেখা যেতে পারে বোলিং বিভাগে প্রথমবারের মতো। এই নবাগতদের সুযোগের কথাটাই বলতে চেয়েছেন মাহমুদুল্লাহ।
×