ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

হঠাৎ বেড়েছে কাগজের দাম

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

হঠাৎ বেড়েছে কাগজের দাম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ নতুন শিক্ষাবর্ষ ও একুশে বই মেলাকে সামনে রেখে হঠাৎ করেই দাম বেড়েছে সব ধরনের কাগজের। এতে শিক্ষার সব শাখায় খরচ বাড়ার পাশাপাশি আগামী বই মেলাতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘বিশ্ববাজারে কাগজের দাম বাড়ায় দেশীয় বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে।’ বছরের শেষভাগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সবগুলো স্তরে বার্ষিক পরীক্ষা থাকায় কাগজের এ উচ্চ দর বেশ নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ফটোকপির দোকান থেকে শুরু করে স্কুলের পরীক্ষার সরঞ্জাম এবং মুদ্রণ বইয়ের বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। সেই সঙ্গে অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৯কে সামনে রেখে সৃজনশীল বইয়ের বাজারেও এর প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন প্রকাশনা শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, ‘এরইমধ্যে গত এক মাসের মধ্যে অন্তত ২০ শতাংশ দর বাড়ার ফলে ব্যবসা ক্ষেত্রে অস্থিরতা বিরাজ করছে।’ পাইকারি কাগজের বাজার রাজধানীর নয়াবাজারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ২৩-৩৬ সাইজের ৮০ গ্রামের এক রিম কাগজ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৯০০ থেকে এক হাজার ৯৫০ টাকায়, যা গত মাসের শুরুতেও বিক্রি হতো এক হাজার ৬৫০ টাকায়। একই আকারের ৭০ গ্রাম কাগজের দাম ছিল এক হাজার ৫০০ টাকা, যা এখন এক হাজার ৮৫০ টাকা। এছাড়া ৬৫ গ্রামের কাগজের দাম ছিল এক হাজার ৩৪০ টাকা, বর্তমানে যা এক হাজার ৬০০ টাকা। ৬১ গ্রামের এক রিম কাগজের দাম ছিল এক হাজার ৩০০ টাকা, বর্তমানে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪৫০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা। আর ৫৫ গ্রামের কাগজের দাম ছিল এক হাজার ১৩০ টাকা, বর্তমানে এক হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেড়েছে নিউজপ্রিন্ট কাগজের দামও। রিমপ্রতি এ কাগজের দাম বেড়েছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। ৪৫ গ্রামের এক রিম কাগজ আগে ছিল ৪৪০ টাকা, যা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৫২০ থেকে ৫৪০ টাকায়। আর ৪২ গ্রামের এক রিম নিউজপ্রিন্ট কাগজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৪৭০ টাকায়, যা আগে ছিল ৩৯০ থেকে ৪০০ টাকা। হঠাৎ করে সব ধরনের কাগজের এই মূল্য বৃদ্ধির জন্য মিল মালিক ও বড় ব্যবসায়ীদের দায়ী করছেন পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা। তাদের অভিযোগ, মিল মালিকরা বড় ডিলারদের সঙ্গে যোগসাজশ করে কাগজের দাম বাড়িয়েছে। নয়াবাজারের পাইকারি বিক্রেতা যমুনা পেপারস হাউসের স্বত্বাধিকারী মোজাহার আলী বলেন, ‘কাগজের বাজারে মিল মালিকরা একটা বড় সিন্ডিকেট তৈরি করে রেখেছে। তারাই মূলত কাগজের দাম বাড়িয়েছে। এর ফলে খুচরা বাজারে কাগজের বিক্রি কমে গেছে। এভাবে চললে ব্যবসায় লোকসান ঠেকানো যাবে না।’ এদিকে কাগজের দাম বাড়ায় বেড়েছে কম্পিউটারের প্রিন্টের কাগজের দামও। এ-ফোর সাইজের ৮০ গ্রামের ৫০০ পিসের অফসেট পেপারের প্যাকেট আগে বিক্রি হতো ২২০ টাকায়, যা এখন বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকায়। লিগ্যাল সাইজের একই কাগজ ২৬০ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়। ৭০ গ্রামের এ-ফোর সাইজের প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়, যার আগের মূল্য ছিল ১৮০ টাকা; লিগ্যাল সাইজের একই কাগজ বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকায়, যা ছিল ২৪০ টাকা। বাংলাদেশ পেপার মার্চেন্টস এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবুল হোসেন জানান, বিশ্ব বাজারে কাগজের দাম বাড়ায় দেশীয় বাজারেও দাম বেড়েছে। এটি বাজারের চরিত্র। এখানে সিন্ডিকেটের কোন বিষয় নেই। তবে বাজারের এ অস্থিরতা কমে যাবে বলেও মত দেন তিনি। কাগজ আমদানিকারক সালাউদ্দিন আহমেদ জানান, সাম্প্রতিক সময়ে আমদানি করা নিউজপ্রিন্টের দাম বেড়েছে টনপ্রতি ২০০ ডলার। ফেব্রুয়ারিতে যে নিউজপ্রিন্টের টন ছিল ৬৫০ মার্কিন ডলার, তা এখন কিনতে হচ্ছে ৭৫০ ডলারে। বিশ্ববাজারে তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাবও কাগজের বাজারে পড়েছে বলে মনে করেন তিনি। তিনি জানান, বিশ্ববাজারে কাগজের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি টন ৬২০ ডলার বা ৫২ হাজার ৮০ টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা দরে) থেকে বেড়ে ৮২০ ডালারে অর্থাৎ ৬৯ হাজার ৭০০ টাকায় পৌঁছেছে। এছাড়া ডলারের দামও বেড়েছে। বেড়েছে কাগজের ম-ের দামও। এসব কারণে বাংলাদেশে কাগজের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। খরচ বেড়ে যাওয়ায় পাঠ্যপুস্তকের দামও বাড়ানো হয়েছে। এদিকে কাগজের দাম বাড়ায় এরইমধ্যে প্রভাব পড়েছে সৃজনশীল বইয়ের বাজারেও। প্রকাশকরা বলছেন আগামী একুশে বই মেলায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। প্রতিভা প্রকাশের স্বত্ত্বাধিকারী মঈন মুরসালিন বলেন, ‘১ হাজার ৮০০ টাকার কাগজের দর এখন ২ হাজার ২০০ টাকা। দাম কমছে না। যেসব লেখক বই ছাপানোর জন্য আসছেন তাদের সঙ্গে বনিবনা হচ্ছে না। সবমিলে কাগজের দর বৃদ্ধির ধাক্কা বইমেলায় গিয়ে পড়বে এতে কোন সন্দেহ নেই।’
×