ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

কুকের স্মরণীয় বিদায় ও এ্যান্ডারসনের রেকর্ডে শেষ ইংল্যান্ড-ভারত সিরিজ

প্রকাশিত: ০৬:৫৪, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

কুকের স্মরণীয় বিদায় ও এ্যান্ডারসনের রেকর্ডে শেষ ইংল্যান্ড-ভারত সিরিজ

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ ওভালে ১১৮ রানের জয়ে আগেই নিশ্চিত করা পাঁচ টেস্ট সিরিজের ব্যবধান ৪-১ করল জো রুটের ইংল্যান্ড। বহুল আলোচিত এ দ্বৈরথে ঘটনার কমতি ছিল না। তবে শেষ টেস্টে জেমস এ্যান্ডারসনের রেকর্ড আর এ্যালিস্টার কুকের অবসর সবকিছু ছাপিয়ে গেছে। কেনিংটন ওভালে দ্বিতীয় ইনিংসে ৩ শিকারের মধ্য দিয়ে পেস বোলার হিসেবে টেস্ট ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৫৬৪ উইকেটের মালিক হয়েছেন এ্যান্ডারসন। তার আগে প্রথম ইনিংসে ৭১ ও জীবনের শেষ ইনিংসে ১৪৭ রানের দুটি ইনিংস উপহার দেন কুক। ইতিহাসের মাত্র পঞ্চম ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক ও বিদায়ী টেস্টে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখান তুখোড় উইলোবাজ। তাই বিরাট কোহলিদের ব্যর্থতা কিংবা ভারত অধিনায়কের সঙ্গে যৌথভাবে সিরিজসেরা তরুণ ইংলিশ অলরাউন্ডার স্যাম কুরানকে ছাপিয়ে আলোচনায় এই দুই তারকা ক্রিকেটার। বিদায় বেলায় নিজের স্বপ্নকেও ছাড়িয়ে গেছেন এ্যালিস্টার কুক। আভিজাত্যের টেস্ট আঙ্গিনায় জীবনের প্রথম ও শেষ টেস্টে সেঞ্চুরির সৌভাগ্য ক’জনের হয়। মাত্র পঞ্চম ক্রিকেটার হিসেবে ইংলিশদের এমন গর্ব উপহার দেয়া কুক ম্যাচসেরার পুরস্কার নেয়ার সময় বলেন, ‘বিফি (ইয়ান বোথাম) আমাকে একটা টেক্সট মেসেজ পাঠিয়েছে, ‘তোমার চিত্রনাট্যের লেখকের নাম বলবে’? শেষ সেশনে যে কোন ফল হতে পারত। এর চেয়ে ভাল টেস্ট আর কী হতে পারে? এ রকম একটা টেস্ট খেলে অবসর নিতে পারাটা সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। তার ওপর জিমিকে দেখলাম উইকেট শিকারে গ্লেন ম্যাকগ্রাকে ছাড়িয়ে যেতে। এমন স্মরণীয় বিদায়ই চেয়েছিলাম।’ মঙ্গলবার শেষদিনে ৫৬৪তম উইকেট নিয়ে পেসার হিসেবে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসেছেন এ্যান্ডারসন। টপকে গেছেন সাবেক অস্ট্রেলিয়ান গ্রেট গ্লেন ম্যাকগ্রাকে (৫৬৩)। টেস্টে সর্বোপরি শিকার সংখ্যায় তার সামনে এখন তিন কিংবদন্তি স্পিনার মুত্তিয়া মুরলিধরন (৮০০), শেন ওয়ার্ন (৭০৮) এবং অনীল কুম্বলে (৬১৯)। ইংল্যান্ড ইতিহাসের সর্বোচ্চ টেস্ট রান ও সেঞ্চুরির মালিক কুকের সামনে এমন রেকর্ড গড়ে এ্যান্ডারসন যেন একটু বেশিই খুশি, ‘আমার এমন অর্জন কুকি (কুক) মাঠে দাঁড়িয়ে দেখতে পেল বলে বেশি ভাল লাগছে। ভারতীয়রা যখন বড় পার্টনারশিপ গড়ছিল তখনই মনে হচ্ছিল লক্ষ্যের কাছাকাছি যাচ্ছে ওরা। তখন ওদের থামানো দরকার ছিল। আমি ছন্দে ছিলাম বলে আমাকে নতুন বলটা দেয় জো। কুকের শেষ টেস্টে মাইলস্টোনটা পেয়ে ভাল লাগছে। ও আমার ভাল বন্ধু। ওর অভাব অনুভব করব।’ ওদিকে জীবনের শেষ ইনিংসে সেঞ্চুরির জন্য প্রতিপক্ষ ফিল্ডার জাসপ্রিত বুমরাহকে ধন্যবাদ জানাতে চান কুক! তিনি বলেন, ‘বুমরাহর থ্রোটা আমার বুকে প্রায় ব্যথা ধরিয়ে দিয়েছিল! পুরো সিরিজেই ও বহুবার আমাকে সমস্যায় ফেলেছে।’ কভার অঞ্চল থেকে বুমরাহর ওই ওভার থ্রোর জন্যই সেঞ্চুরিতে পৌঁছাতে পারেন কুক। থ্রোটা নিখুঁত হলে তার স্বপ্ন চুরমার হয়ে যেত। সেইজন্যই ধন্যবাদ! সেঞ্চুরির মুহূর্তটাও ছিল মনে রাখার মতো। কুক বলেন, ‘যেন একটা বিস্ফোরণ ঘটে ওই মুহূর্তে। তবে জো (রুট) কিছু বলতে পারেনি। শুধু বলছিল, ‘ওয়াও’ আর হাসছিল। ও বোধহয় চাইছিল, আমি অন্তর থেকে মুহূর্তটা উপভোগ করি। সেটাই করেছি। গ্যালারিতে দাঁড়িয়ে সবাই যখন হাততালি দিতে শুরু করে তখন আরও রোমাঞ্চকর হয়ে ওঠে মুহূর্তটা। এটা অন্তর থেকেই অনুভব করেছি।’ র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর দল ভারতের বিপক্ষে রুটদের মিশন শুরু হয়েছিল এজবাস্টন টেস্টে ৩১ রানের নাটকীয় জয়ে। তবে লর্ডসে ইনিংস ও ১৫৯ রানের দাপুটে জয়ে এগিয়ে যায় ইংলিশরা। বিরাট কোহলির অতিমানবীয় ব্যাটিংয়ে ভর করে ট্রেন্ট ব্রিজে ২০৩ রানের জয়ে সিরিজে টিকে থাকে ভারত। কিন্তু সাউদাম্পটনে ৬০ রানের জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ নিশ্চিত করে স্বাগতিকর। ওই ম্যাচ শেষেই হঠাৎ করে আবসরের ঘোষণা দেন কুক। আর সাউদাম্পটনে সিরিজ ৪-১ করার পথে বিদায়টাকে স্মরণীয় করে রাখেন আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতম সফল এ উইলোবাজ। সফল সমাপ্তি ঘটে ইংল্যান্ড ক্রিকেটের এক অধ্যায়ের।
×