ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

ইতিহাসের পাতায় ওসাকার নাম

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 ইতিহাসের পাতায় ওসাকার নাম

জিএম মোস্তফা ॥ জয়রথ থেমে গেল সেরেনা উইলিয়ামসের। আরও একটা ফাইনাল জয়ের স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল আমেরিকান তারকার। শনিবার ইউএস ওপেনের ফাইনালে সেরেনা উইলিয়ামসকে হারিয়ে দেন নাওমি ওসাকা। সেই সঙ্গে ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের অবিস্মরণীয় কীর্তি গড়েন জাপানের তরুণ প্রতিভাবান এই খেলোয়াড়। ওসাকার প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম ফাইনাল। ক্যারিয়ারের প্রথম মেজর টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেই বাজিমাত করলেন তিনি। মৌসুমের শেষ গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্টের ফাইনালে ওসাকা এদিন ৬-২ এবং ৬-৪ গেমে পরাজিত করেন সেরেনা উইলিয়ামসকে। সেই সঙ্গে জাপানের ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের রেকর্ড গড়েন ২০ বছরের এই তরুণী। এ বছরেই আলোচনায় আসেন তিনি ইন্ডিয়ান ওয়েলসের শিরোপা জিতে। এরপর ইউএস ওপেনে ছাড়িয়ে যান অতীতের সব পারফর্মেন্স। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই অসাধারণ পারফর্ম করে ফাইনালে জায়গা করে নেন নাওমি ওসাকা। শৈশ্বব থেকেই আইডল হিসেবে মানেন সেরেনা উইলিয়ামসকে। শেষ চারের ম্যাচ জয়ের পর অকপটেই জানিয়ে দেন যে, সেরেনার বিপক্ষে খেলতেই পছন্দ তার। শেষ পর্যন্ত খেলে জয়ও তুলে নিলেন তিনি। সেরেনাকে হারানোর পর ওসাকা বলেন, ‘সেরেনার বিপক্ষে খেলতে সবসময়ই স্বপ্ন দেখতাম আমি। ইউএস ওপেনে তার বিপক্ষে খেলে আমি জয় পেয়েছি। এতে আমি সত্যিই খুব খুশি।’ তবে এই ম্যাচে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন সেরেনা উইলিয়ামস। ২৩ গ্র্যান্ডস্লাম জয়ী এই মার্কিন তারকার কাছে এই ধরনের আচরণ কখনই কাম্য নয়। ম্যাচ চলাকালীন কোচের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছেন, চেয়ার আম্পায়ার কার্লোস রামোস সেরেনার বিপক্ষে এমন অভিযোগ করেন। প্রথমবার তাকে সতর্ক করা হয়। কিন্তু দ্বিতীয়বার আবারও কোড অব কন্ডাক্ট ভঙ্গের দায়ে সেরেনার বিপক্ষে নাওমিকে পেনাল্টি পয়েন্ট প্রদান করা হয়। তখনই সেরেনা ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেন। এ সময় তিনি আম্পায়রকে ‘চোর’ বলেও মন্তব্য করেন। এ সময় সেরেনা চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘তুমি আমার সম্পর্কে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছ। তুমি একজন মিথ্যুক।’ সেরেনার এই ধরনের আচরণে চেয়ার আম্পায়ার নাওমিকে পেনাল্টি পয়েন্টের বিপরীতে এক ম্যাচ উপহার দেন। ওই সময় নাওমি দ্বিতীয় সেটে ৫-৩ ব্যবধানে এগিয়ে যান। সেরেনা এরপর পরের ম্যাচ জয় করেন, কিন্তু কান্না ও ক্ষোভে ফেটে পড়া সেরেনার মানসিক অবস্থা মোটেই অনুকূলে ছিল না। পরের ম্যাচেই নাওমি নিজেকে সংযত রেখে দেশের জন্য ঐতিহাসিক এক জয় উপহার দেন। ম্যাচ শেষে নাওমি বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে ঠিক সেভাবে কোন কিছু অনুভব করতে পারছি না। হতে পারে কয়েকদিন পর আমি বুঝতে পারব কি অর্জন করেছি। যখন আমি দ্বিতীয় সেটে ৫-৩ ব্যবধানে এগিয়ে ছিলাম তখন কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়ি। আমার মনে হয়েছে এবার আমাকে আরও একটি বেশি মনোযোগী হতে হবে। সেরেনা এমন একজন খেলোয়াড় যে কিনা যে কোন সময় যে কোন পরিস্থিতি থেকে ফিরে আসতে পারে।’ গত বছর ১ সেপ্টেম্বর প্রথম কন্যা সন্তান অলিম্পিয়ার জন্মের পর প্রথম কোন গ্র্যান্ডস্লাম শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে সেরেনা কোর্টে নেমেছিলেন। কিন্তু মার্গারেট কোর্টের সর্বকালের সর্বোচ্চ ২৪টি স্লামজয়ের রেকর্ড আর স্পর্শ করতে পারলেন না সেরেনা। ট্রফি প্রদান অনুষ্ঠানে পুরো স্টেডিয়ামে বেশিরভাগ স্বাগতিক সমর্থকই যখন স্বাভাবিকভাবে সেরেনার জন্য চিৎকার করছিল তখন নাওমি কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। ওই সময় নতুন চ্যাম্পিয়নের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সমর্থকদের অনুরোধ জানান সেরেনা। তিনি বলেন, ‘সে দারুণ খেলেছে। এটা তার প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম। তার এই মুহূর্তটাকে সেরা হিসেবে আমরাই উপহার দিতে পারি।’ তবে সেরেনার বিপক্ষে খেলতে পেরে গবির্ত ওসাকা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ইউএস ওপেনের ফাইনালে সেরেনার বিপক্ষে খেলাটা সবসময়ই আমার স্বপ্ন ছিল। আমি খুবই সৌভাগ্যবান যে তার বিপক্ষে খেলতে পেরেছি।’ যদিওবা স্বপ্নের ফাইনাল জয়ের শেষটা এভাবে মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে খোদ ওসাকার। এ প্রসঙ্গে অশ্রুভেজা চোখে জাপানী তারকা বলেন, ‘এভাবে শেষ হওয়ায় আমি খুব দুঃখিত।’
×