ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাঁশ শিল্পে জীবন চলে ওদের

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বাঁশ শিল্পে জীবন চলে ওদের

বর্ষা মৌসুম সামনে তাই গ্রামের লোকজন মাছ ধরার অন্যতম সামগ্রী বাঁশের তৈরি চাইসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র সংগ্রহ করছেন রীতিমতো। বিশেষ করে এর চাহিদা বর্ষা মৌসুম এলে বেড়ে যায়। অনেকে বর্ষা শুরু হবার আগেই এসব প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনার জন্য বিভিন্ন হাট-বাজারে ছুটে যান। তাই ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন বাঁশের তৈরি সামগ্রী বানানোর কারিগররা। হাটে গেলে বাঁশের তৈরি এসব মাল ক্রয়-বিক্রয় এখন চোখে পড়ার মতো। এমনই একজন কারিগর মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার গোপালপুর এলাকার ধজ্বী গ্রামের রহমআলী। তার বয়স এখন ৪৫ বছর। জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি আর আগের মতো কঠিন কাজ করতে পারেন না। তার সংসারে রয়েছেন বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েসহ ৭ সদস্য। আর সংসারের সব খরচ চালানোর দায়িত্ব তার উপরেই। তবে তিনি দমে যাওয়ার পাত্র নন। তিনি নিজ ঘরের বারান্দায় বসে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি মাছ ধরার চাঁই, মাটি কাটার ওড়া ও মুরগির খাঁচা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তিনি বছরের ১২মাসই এ কাজে ব্যস্ত থাকেন। তবে বর্ষা এলে চাইসহ মাছ ধরার সামগ্রীর চাহিদা অন্য সময়ের চেয়ে অনেকটা বেড়ে যায়। তাই তিনি এ মৌসুমে এসব তৈরি জিনিসপত্র পাইকারি-খুচরা ও বিভিন্ন হাট-বাজারে ঘুরে- ঘুরে বিক্রি করে থাকেন। বাঁশই তার কাছে জীবিকা নির্বাহের অন্যতম হাতিয়ার। এ সমস্ত তৈরি করা জিনিসপত্র বাজারে বিক্রি করে যা আয় করেন তা দিয়ে চলে তার পুরো সংসার। প্রথমে শুধু নিজে ব্যবহারের জন্য তিনি এগুলো তৈরি করতেন। কিন্তু হাটেবাজারে এসব জিনিসের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সংসারের ভরণপোষণ যোগান দিতে রহমআলীর কাছে এ শিল্পের গুরুত্ব বেড়েছে। শুধু এখন রহমআলী নয় কালকিনির অনেক অঞ্চলের বহু মানুষের জীবনের তাগিদে দেখা গেছে এই পেশায়। সরেজমিনে জানা যায়, কালকিনির গোপালপুর হাট, শশীকর হাট, সাহেবরামপুর হাট, ফাসিয়াতলা হাট ও ঘোষের হাটসহ প্রত্যন্তাঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামের দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী সহস্রাধিক পরিবার মাছ ধরার চালন, চাই, মাটি কাটার ওড়া ও মুরগির খাঁচা তৈরির কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। অল্প খরচে অধিক আয় বলে এখন বাঁশের তৈরি এ শিল্পকে বেছে নিয়েছে অনেকেই। জীবিকার তাগিদেই এই শিল্পকে বুকে আগলে রেখেছে তারা। অন্যের মজুরি খাটলেও তাদের কাছে এ শিল্পের গুরুত্ব কম নয়। কারও- কারও ক্ষেত্রে এই শিল্প সংসারের বাড়তি আয়ের জোগান দেয়। অন্য কাজের চাইতে এ কাজই তাদের কাছে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যের। স্বল্প পুঁজিতে বেশি লাভ হওয়ায় এখন বহাল তবিয়তে টিকে আছে বাঁশের তৈরি এ গ্রামীণ শিল্পটি। এ ব্যাপারে রহমআলী বলেন, আমি ভারি কাজ করতে পারি না। তাই আমি এখন বাঁশ দিয়ে চালন, চাই ওড়া ও খাঁচা তৈরি করে বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করি। আর এ উপার্জনের টাকায় এখন আমার সংসার চলে। পরিবার নিয়ে সুখে দিন কাটাচ্ছি আমরা। -মোঃ জাফরুল হাসান কালকিনি, মাদারীপুর থেকে
×