ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা সমস্যা ॥ বিষফোঁড়া হয়ে উঠছে ক্রমশ

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 রোহিঙ্গা সমস্যা ॥ বিষফোঁড়া হয়ে উঠছে ক্রমশ

উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরের রোহিঙ্গারা দিন দিন বেপরোয়া ও হিংস্র হয়ে উঠছে। তারা নতুন নতুন সমস্যা তৈরি করছে। জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধে। এছাড়া প্রতিদিন শত শত রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছেড়ে বাইরে চলে যাচ্ছে। তাদের এ ধরনের আচরণে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মাঝে নিরাপত্তা শঙ্কা ও উদ্বেগ বাড়ছে। গত এক বছরে আশ্রয় শিবিরগুলোতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২১টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এর ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও স্থানীয়রা। গত বছরের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে নির্যাতন-নিপীড়ন, ধর্ষণ ও গণহত্যা শুরু হওয়ায় বাংলাদেশে পালিয়ে আসে লাখ লাখ রোহিঙ্গা। সেই হিসেবে রোহিঙ্গা প্রবেশের এক বছর পেরিয়ে গেছে। হত্যা, ধর্ষণ, মাদক পাচার, ডাকাতিসহ এমন কোন অপরাধ নেই যা রোহিঙ্গারা গত এক বছরে করেনি। দিন দিন রোহিঙ্গাদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। জানা গেছে, গত এক বছরে আশ্রয় শিবিরে নিজেদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কমপক্ষে ২১ জন রোহিঙ্গা খুন হয়েছে। সামান্য বিষয়ে হিংস্র হয়ে ওঠে রোহিঙ্গারা। এমনকি খুনোখুনিতে জড়িয়ে পড়ে। অল্প জায়গার মধ্যে বেশি মানুষের বসবাস হওয়ায় এসব ঘটনা সহজে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয় নাÑ এমনটি মনে করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ইয়াবা পাচারকারী হিসেবেও ব্যবহার করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা এই কাজে বেশি জড়িত। পাচার করতে গিয়ে আটকও হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু তারপরও রোহিঙ্গাদের ইয়াবা পাচার থামানো যাচ্ছে না। আশ্রয় শিবিরে বেকার বসে সময় কাটানোয় রোহিঙ্গারা সংঘবদ্ধ হয়ে ডাকাতিতে জড়িয়ে যাচ্ছে। স্থানীয়দের ঘর-বাড়িতে গভীর রাতে হানা দিয়ে সর্বস্ব ডাকাতি করে নিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। এই কথাগুলো আমার না। চট্টগ্রামের স্বনামধন্য পত্রিকা আজাদীর খবর। আমরা যারা চট্টগ্রামের মানুষ আমরা আজাদী ছাড়া দিন শুরু করি না। কি দেশে কি বিদেশে আমাদের সকালের খোরাক আজাদী। চাটগাঁ আর তার সব খবর জানার প্রিয় মাধ্যম। এই খবর নিঃসন্দেহে সত্য আর মর্মান্তিক। বলে রাখি রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আমাদের যে আবেগ আর স্পর্শকাতর অনুভূতি তাকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। কিন্তু নিজের ভাল না দেখা জাতি আর যাই হোক শান্তি ও নিরাপদে থাকতে পারে না। আজ কিন্তু সেটাই সত্য হতে চলেছে। আমাদের এই সিডনিতেও রোহিঙ্গা আছে। তাদের কয়েকজনের সঙ্গে দেখা হয়েছে আমার। কোন অভিজ্ঞতাই সুখকর ছিল না। প্রথম দেখেছিলাম দু’জন রোহিঙ্গা মিলে এক বাংলাদেশী যুবককে অপমান করছিল। তাদের এমন ভাব পারলে মারে। আমাদের যুবকটি অসহায়ের মতো তর্ক করছিল। আমি যোগ দিয়ে সে যাত্রায় তাকে চলে যেতে সাহায্য করেছিলাম। আর একবার দেখলাম এক রোহিঙ্গা মোবাইলে ফোনে চিৎকার করে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করছিল। তাদের ভাষা যেহেতু চট্টগ্রামের কাছাকাছি বা সমপর্যায়ের আমার বুঝতে কোন বেগ পেতে হয়নি। আমি বলছি না তারা সবাই এক ধরনের। কিন্তু এটা মানতে হবে দীর্ঘকাল ধরে অপমান আর চাপের মুখে থাকা এরা আসলে দিকহীন। না আছে লেখাপড়া না কোন মূল্যবোধ। আমরা এমন একটা জাতিসত্তার দায়িত্ব নিতে পারি? গোড়াতে তারা যখন পিলপিল করে ঢুকছিল আমাদের কি বেদনা আর কি উৎসাহ। উৎসাহটা মিডিয়ার ছিল প্রবল। আজ যখন তারা সমস্যা তৈরি করছে তখন সেই টিভি চ্যানেলগুলো কোথায়? যারা মাইক্রোফোন বাড়িবে ধরে রোহিঙ্গাদের দিয়ে করুণ কাহিনী বলাতো তারা আজ চুপ কেন? এর নাম দায়িত্বশীলতা? সরকারী দলে আমি যে আবেগ আর ধর্মীয় অনুভূতির নামে দোলাচল দেখেছি সেটাও সুখকর না। তারা দেশের মঙ্গল বা মানুষের ভালমন্দ বিবেচনা না করে তারা কেবল নিজেদের সাফল্য আর শরণার্থী সমস্যার অন্যদিকগুলো তুলে ধরতেন। বাস্তবে যা হলে বা যা করলে এই শরণার্থীদের ফেরত পাঠানো সম্ভব তার কোন কিনারা বা হদিস খুঁজেছেন তারা? খুঁজলে সাহায্য আর সহায়তার নামে চাপানো এই ভয়াবহ বাস্তবতার অন্যদিকটাও বেরিয়ে আসতো। মুশকিল এই এক ধরনের অতি উৎসাহী মানুষ এদের নারীদের বিয়ে করে আপন করার প্রস্তাব দিতেও কসুর করেনি। এর ভেতর যতটা মানবিকতা তার বেশি ছিল লোভ। সেই লোভ যখন থিতিয়ে এসেছে আমরা দেখছি চারদিকে সমস্যার পাহাড়। সরকারের কথা শুনলে মনে হয় টাকার অভাব নেই। হয়তো তাই। তবে একটা বিষয় বুঝতে হবে কোন শরণার্থী সমস্যা নিয়েই এখন আর আগের মতো আবেগ কাজ করে না। ইউরোপ নিজেই এ সমস্যায় হিমশিম খাচ্ছে। আমেরিকা এখন কঠোর অবস্থানে। রাশিয়া কোনদিন একজনকেও তাদের দেশে নেয়নি। ফলে মনে রাখা দরকার টাকা আসতে পারে রিলিফ আসতে পারে সমাধান আসবে না। আমরা যখন শরণার্থী হয়েছিলাম তখনকার পরিস্থিতি বিবেচনা করে যারা মায়াকান্না করেন তাদের বলি, আমাদের চলে যাবার উদ্দেশ্য ছিল ফিরে আসা। আর এদের উদ্দেশ্য থেকে যাওয়া। আমাদের ছিল রাজনৈতিক লড়াই। ছিলেন মহান সব নেতৃত্ব। আমাদের সরকার ছিল। নির্বাচনে জেতার ইতিহাস ছিল। রোহিঙ্গাদের বিষয়টা অমানবিক কিন্তু অভ্যন্তরীণ। মিয়ানমার একটি সামরিক শক্তির দেশ। লাগোয়া প্রতিবেশী। তারা আমাদের খুব একটা কেয়ার করে না। তাদের যে সামরিক শক্তি আর বল সেটা দিয়েই তারা কথা বলতে ভালবাসে। যে ভাবেই হোক তাদের সঙ্গে শক্তির পরিবর্তে কৌশলে এগুতে পারলেই সমস্যার সমাধান হতে পারে। যা এখন ক্রমেই হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। যার মূল একটা কারণ আমাদের অনৈক্য। সেদেশের শান্তিতে নোবেল জয়ী নেত্রী দেশের কারণে অশান্তিকে জায়েজ করলেও আমাদের নোবেল অনোবেল সব নানা ভাষায় নানা আকারে কথা বলেন। না আছে রাজনৈতিক ঐক্য না কোন সমঝোতা। ফলে আমরা সমস্যাকে বাড়তে দিয়েছি। এখন এটি সামাজিক সমস্যার এক কঠিন রূপ নিয়ে সমাজকে আক্রমণ করতে চলেছে। খেয়াল করবেন তারা সংগঠিত হয়ে আমাদের লোকজনকে মারতেও ভয় পাচ্ছে না। তাদের উচ্ছন্নে যাওয়া তারুণ্য বা যুবকরা কদিন পর কি করবে অনুমান করতেও ভয় পাই। দেশের সব জায়গায় ছড়িয়ে মাদক আর যৌনতার প্রসার ঘটালে আমাদের দেশের মানুষদের জীবনে কি অশান্তি আসতে পারে তার নমুনা চট্টগ্রামেই দেখা যাচ্ছে। নির্মম হলেও সত্য রোহিঙ্গারা আমাদের দুর্বলতা আর পচে যাওয়া রাজনীতির কারণেই বেপরোয়া। আপনি যদি তাদের দিয়ে মাদক ও সেক্সট্রেড করান কিভাবে তাদের বাগে রাখবেন? ক্রমশ এরা আমাদের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে। নানাভাবে গু-ামী সন্ত্রাস আর সহিংসতায় জড়িয়ে পড়বে। যার ফায়দা লুটবে মূলত ধর্মান্ধ শক্তি। বলাবাহুল্য যে, আওয়ামী লীগ তাদের আশ্রয় দিয়েছে এবং গর্ব করে বলছে আমরা এক বেলা খেয়ে তাদের খাওয়াবো এরা সে দলের লোকসান করবে সব থেকে বেশি। সমাজ সংসার আর জীবনে নানামুখী সমস্যার চাপ। মানুষের জীবনে নানা অশান্তি। রাজনৈতিকভাবেও ভাল নেই বাংলাদেশ। একা শেখ হাসিনা সামাল দিয়ে চলেছেন। ভাবতে ভয় হয় বোঝার ওপর শাকের আঁটিঁর মতো এই সমস্যা আমাদের আর কোন বিপদে ফেলবে। মানবিকতা বা সহানুভূতি সবকিছু এখন ধর্মের বাইরে পা ফেলতে পারে না। আমি হলপ করে বলতে পারি পাশের দেশ নেপাল বা শ্রীলঙ্কা থেকে তারা এলে আমরা এতদিনে হয় তাদের খেদিয়ে দিতাম নয়তো কঠোর হয়ে তাদের জীবন নরক করে তুলতাম। তাই মুক্তচিন্তা আর স্বচ্ছতার বিকল্প নেই। সরকার সমাধান দেবেন ঠিক সঙ্গে মানুষের মন ও জাগতে হবে। আপনি সিরিয়া বা ইরাকের জন্য যেমন ফিল করেন আমরাও করি। সেখানে আমাদের কিছু করার থাকলে নিশ্চয়ই করব। করবে দেশ করবে জাতি। কিন্তু তার সঙ্গে এই সমস্যা গুলিয়ে ককটেল বানালে সে ককটলে জাতির ভবিষ্যতে বিষ হয়ে ধরা দেবে। অবিলম্বে কূটনীতিক আর রাজনৈতিক সমাধানের পথ ভারত চীনসহ সব দেশের সম্মিলনে সমস্যাকে আয়ত্তে না আনলে এদের আসা বন্ধ হবে না। আর আমাদের বিপদ ও কাটবে না। সময় কিন্তু তাই বলছে। [email protected]
×