ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এলেঙ্গা থেকে হাটিকুমরুল হয়ে রংপুর পর্যন্ত ছয় লেনের মহাসড়ক হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 এলেঙ্গা থেকে হাটিকুমরুল হয়ে রংপুর পর্যন্ত ছয় লেনের মহাসড়ক হচ্ছে

সমুদ্র হক ॥ সাউথ এশিয়া সাব রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) প্রকল্প-২ এর আওতায় টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে হাটিকুমরুল ও বগুড়া হয়ে রংপুর পর্যন্ত ছয় লেনের উত্তরবঙ্গ মহাসড়কের কাজ এ বছরের শেষের দিকে শুরু হবে। সাসেক-১ প্রকল্পের গাজীপুর থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত ছয় লেনের মহাসড়কের কাজের ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে। এদিকে সাসেক-২ প্রকল্পের উত্তরবঙ্গ মহাসড়কের মধ্যে যে ব্রিজগুলো পড়েছে এগুলোও ছয় লেনের উপযোগী করে নির্মিত হচ্ছে। এই ব্রিজগুলো নির্মাণ করছে ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (ডাব্লিউবিবিআইপি)। সাসেক প্রকল্পের উর্ধতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন রংপুর পর্যন্ত কাজ শেষ হওয়ার পরই রংপুর থেকে বুড়িমারী অথবা বাংলাবান্ধা পর্যন্ত সাসেক-৩ প্রকল্পের ছয় লেনের মহাসড়কের কাজ শুরু হবে। আরেকদিকে উত্তরবঙ্গের বাংলাবান্ধা স্থল বন্দরে চার দেশের (বাংলাদেশ, ভারত নেপাল, ভুটান) মধ্যে ইমিগ্রেশন বিভাগ চালু হয়েছে। শিগগিরই এই চার দেশের মধ্যে সরাসরি যানবাহন চলাচল শুরু হবে। সাসেক প্রকল্পের মহাসড়কের কার্যক্রম বাংলাদেশের সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক কর্মকা-কে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যেই বাস্তবায়িত হচ্ছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) মাল্টি ট্রান্স ফ্যাসিলিটিজ (এমএফএফ) স্তর ভিত্তিক অর্থায়নে সাসেক উন্নীতকরণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। ২০১৬ সালে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে সাসেক-১, ২ ও ৩ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। সাসেকের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মাহবুবর রহমান বলেন, এই প্রকল্পের মহাসড়ককে চার লেনের কথা বলা হয়। তবে তা ছয় লেনের। দ্রুতগতির যানবাহন চলাচলের (ক্যারেজওয়ে) সড়ক চার লেনের। এর সঙ্গে অপেক্ষাকৃত ধীরগতির ছোট যানবাহন চলাচলের জন্য আরও দুই লেন যোগ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এই মহাসড়ক হবে ছয় লেনের। ইতোমধ্যে সাসেক প্রকল্প-১ এর আওতায় গাজীপুরের ভোগরা বাইপাস থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার ছয় লেন মহাসড়কের প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ৩০ শতাংশ কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। জয়দেবপুর, চন্দ্রা, টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত হাইওয়ের (এন-৪) বিভিন্ন পয়েন্টে ২৩টি ব্রিজ কোরবানি ঈদের আগেই খুলে দেয়া হয়েছে। কালিয়াকৈর অংশে সড়কের কাজ শেষের পথে। ওই মহাসড়কের মীর্জাপুর উপজেলার গোড়াই মীর্জাপুর বাইপাস কুর্নি ও গোড়াই বাজার এবং টাঙ্গাইলের বাইপাস ঘারিন্দায় আন্ডারপাসের নির্মাণ কাজ চলছে। চন্দ্রা মোড়ের উড়াল সড়কসহ একাধিক উড়াল সড়কের কাজ চলছে। সূত্র জানায়, সাসেক প্রকল্পের ঢাকা থেকে বগুড়ার দূরত্ব ১৯০ কিলোমিটার এবং ঢাকা থেকে রংপুরের দূরত্ব ৩০৭ কিলোমিটার। সাসেক-১ প্রকল্পের ঢাকা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত মহাসড়কের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। কথা ছিল ২০১৭ সালের মধ্যে এই কাজ শেষ হয়ে সাসেক-২ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সাসেক-১ এর কাজ শেষ করা যায়নি। এখন আশা করা হচ্ছে চলতি বছর নবেম্বরের মধ্যে সাসেক-১ এর কাজ শেষ হয়ে ডিসেম্বরের মধ্যে সাসেক-২ এর কাজ শুরু করা যাবে। সূত্র জানায়, এই মহাসড়ক নির্মিত হচ্ছে সুদূরপ্রসারী ভাবনায় আন্তর্জাতিক মানে। বর্তমান নক্সায় উত্তরবঙ্গ মহাসড়কে ৪১১ মিটারের একটি রেলওয়ে ওভারপাস, ৩২টি ব্রিজ, ১১টি পথচারী ওভারপাস, ৩৯টি আন্ডারপাস, একটি ইন্টারচেঞ্জ নির্মিত হবে। এর বাইরে দীর্ঘ এই সড়কে ৮০টি পয়েন্টে উন্নত দেশগুলোর মতো আধুনিক ‘বাস-বে’ স্থাপিত হবে। আরেকটি সূত্র জানায়, সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল থেকে বগুড়া হয়ে রংপুর এবং তারপর রংপুর থেকে বুড়িমারী অথবা পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা পর্যন্ত মহাসড়ক সম্প্রসারিত হবে। এর মাধ্যমে বাংলাবান্ধা দিয়ে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে উপ-আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ সহজতর করা হবে। ইতোমধ্যে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে ইমিগ্রেশনে যাত্রী পারাপার শুরু হয়েছে। চার দেশের মধ্যে যান চলাচল চুক্তিও হয়েছে। শিগগিরই সড়ক পথে যান চলাচল শুরু হবে। উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাবান্ধা ট্রানজিট পয়েন্ট চালু হয়। গত বছর (২০১৭) নবেম্বর মাসে ঢাকায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাবান্ধায় ইমিগ্রেশন চালু হয়। ইতোমধ্যে সাসেক মহাসড়কের ঢাকা থেকে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল, বগুড়া, রংপুর বাংলাবান্ধা হয়ে ভারতের ফুলবাড়ি পানিরট্যাংক দিয়ে নেপালের কাঁকরভিটা হয়ে কাঠম-ু পর্যন্ত রুট তৈরি করা হয়েছে। বাংলাবান্ধা থেকে ভারতের শিলিগুড়ির দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। এই শিলিগুড়ি হয়ে নাগরকাতা দিয়ে ভুটানে প্রবেশ করা যায়। আবার শিলিগুড়ি থেকে সড়ক, রেল ও আকাশ পথে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় যাওয়া যায়। ভারতের সেভেন সিস্টার খ্যাত রাজ্যগুলোতে প্রবেশের করিডর এই শিলিগুড়ি। যে কারণে উত্তরবঙ্গের সাসেক প্রকল্পের এই মহাসড়ক বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বহুমুখী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
×