ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিলের পরিবেশ এখন বিপর্যয়ের মুখে

প্রকাশিত: ০৭:৪০, ২৫ আগস্ট ২০১৮

 দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিলের পরিবেশ এখন বিপর্যয়ের মুখে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গুলশান সংলগ্ন গুদারাঘাট হয়ে দারোগাবাড়ি মোড় (লেকপাড়) পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়ক। প্রতিদিন এ সড়কের পরিচ্ছন্ন ফুটপাত ধরে হাজারও দর্শনার্থী ও পথচারীর হেঁটে চলা। কিন্তু বিড়ম্বনা সেখানেই। পরিচ্ছন্ন এ ফুটপাথ ধরে মানুষ হেঁটে যাচ্ছে নাকে হাত অথবা রুমাল চেপে, কারণ তীব্র দুর্গন্ধ সেখানে। সড়কের ফুটপাতের পাশেই ঝিলের পাড়ে ফেলে রাখা হয়েছে ময়লা-আবর্জনা। বাসা-বাড়ি, দোকানের উচ্ছিষ্ট ময়লায় অনেকটা ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে এ এলাকা। পাড়জুড়ে তৈরি হয়েছে আবর্জনার স্তূপ, ফেলে রাখা হয়েছে পরিত্যক্ত ব্যবহার্য নানা জিনিস, আছে নষ্ট হয়ে যাওয়া কমোড, বেসিনের ভাঙা অংশও। সেই সঙ্গে এলাকাজুড়ে গড়ে ওঠা অস্থায়ী খাবারের দোকানের উচ্ছিষ্ট খাবারসহ আশপাশের গৃহস্থালি বর্জ্য। এসব বর্জ্য গিয়ে মিশছে হাতিরঝিলের পানিতে। চলছে ওয়াটার ট্যাক্সি, সেই পানিতে সৃষ্ট ঢেউয়ের সঙ্গে ময়লা-আবর্জনার মাখামাখি, সঙ্গে তীব্র দুর্গন্ধ। ফলে অতিষ্ঠ দর্শনার্থী ও পথচারীরা। সব মিলিয়ে দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিলের পরিবেশ এখন বিপর্যয়ের মুখে। গুদারাঘাট সংলগ্ন ঝিলপাড় ঘুরে দেখা গেছে, ঝিলপাড়ে গড়ে উঠেছে অসংখ্য অস্থায়ী খাবারের দোকান। ঝিলের পানির পাশেই ফেলা হয়েছে ওইসব দোকানের খাবারের উচ্ছিষ্ট অংশ। আরেকটু সামনে এগিয়ে যেতেই চোখে পড়ে আশপাশের বাড়ির গৃহস্থালি ময়লাসহ অন্যান্য আবর্জনা ফেলা হয়েছে ঝিলের পাশে। ওয়াটার ট্যাক্সির ঢেউ আর বৃষ্টির পানিতে এসব ময়লা গিয়ে মিশছে ঝিলের পানিতে, সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধের। রাজধানীর অন্যতম দর্শনীয় স্থান ও বিনোদন কেন্দ্র হাতিরঝিলে বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তীব্র ওই দুর্গন্ধ। দিন দিন তা যেন বেড়েই চলেছে। ভাসমান মলমূত্র, গৃহস্থালি বর্জ্যসহ অন্যান্য আবর্জনায় হাতিরঝিলের পানির রং ক্রমশ কালো হচ্ছে। লেকপাড়ের একটি বাসা থেকে দুটি প্লাস্টিকের বালতিতে গৃহস্থালি বর্জ্য এনে ঝিলের পাড়ে ফেলেন সেই বাড়ির গৃহকর্মী রেবেকা খাতুন। ঝিলের পাড়ে এসব ময়লা কেন ফেলছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবাই তো এখানে ময়লা ফেলে। বাসার আবর্জনা নিতে আগে মানুষ আসত, তারা এসব ময়লা গাড়িতে করে নিয়ে যেত। কিন্তু এখন আর আসে না। তাই আমরা এখানেই ফেলি, কারণ ময়লা বাসায় বেশিক্ষণ থাকলে গন্ধ বের হয়। তবে ভিন্ন কথা বললেন গুদারাঘাট সংলগ্ন অস্থায়ী দোকানি সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা ঝিলের পানিতে আবর্জনা ফেলতে চাই না। সারাদিনের দোকানের উচ্ছিষ্ট অংশ আমরা ঝিলের পাড়ে রেখে দেই যেন পরিচ্ছন্নকর্মীরা এসে নিয়ে যায়। তারা যখন আসে না তখন কুকুর টেনে-হিঁচড়ে এ সব পানির দিকে নিয়ে যায় বা বৃষ্টির কারণে এ সব ঝিলে গিয়ে মিশে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। এটা আমাদের জন্যও বিব্রতকর, কারণ আমরা এখানে বসে ব্যবসা করি। দুর্গন্ধ তীব্র হলে কাস্টমারও আসে না। এফডিসি সংলগ্ন ঘাট থেকে ওয়াটার ট্যাক্সিতে চড়ে গুদারাঘাট নামেন ব্যবসায়ী ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘এই এলাকার ঝিলের পানিতে বেশি ময়লা ফেলা হয়। ফলে ওয়াটার ট্যাক্সিতে যাতায়াতের সময় সৃষ্ট ঢেউয়ে তীব্র দুর্গন্ধ বের হয়। নাকে রুমাল চেপে ওয়াটার ট্যাক্সিতে বসে থাকতে হয়। ময়লার কারণে হাতিরঝিলের পানিতেও কালচে ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।’ গুদারাঘাট থেকে লেকপাড়ের রাস্তা ধরে হেঁটে যাচ্ছিলেন পথচারী তুহিন খন্দকার। বলেন, ‘আমি একটি কোম্পানির বিপণন বিভাগে চাকরি করি। সেই সুবাদে প্রতিদিন এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। যাতায়াতের সময় দেখি আশপাশের বাসার ময়লা-আবর্জনা এনে ঝিলের পাড়ে ফেলে রাখা হয়। সেই ময়লা পানিতে মিশে দুর্গন্ধ তৈরি হয়। আগে কিছুটা কম হলেও ইদানীং এ সমস্যা যেন তীব্র হচ্ছে। ‘ঝিলের পাড়ে ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে অত্র এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। দুর্গন্ধে পথচলতে হয় নাক চেপে। মানুষ যদি নিজ থেকে এ বিষয়ে সচেতন না হয় তা হলে কেউই এখানে ময়লা ফেলা থেকে বিরত রাখতে পারবে না’- যোগ করেন তিনি। এ বিষয়ে হাতিরঝিল প্রকল্প পরিচালক জামাল আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। যারা ময়লা-আবর্জনা ফেলে তাদের নোটিস দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে দ্রুত আরও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
×