ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হারিয়ে যাচ্ছে শিল্পী পাখি

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১৮ আগস্ট ২০১৮

 হারিয়ে যাচ্ছে শিল্পী পাখি

পাখিগুলো দেখেই মনটা অনেক শান্তি হয়ে যায়। প্রতিদিন বিকেলে অনেকেই আসেন এখানে শুধু এই বাবুই পাখিগুলো দেখতে। কেউ ছবিও তুলে নিয়ে যান। ‘আমাদের গ্রামবাসী সকলেই আমরা এই পাখিগুলো দেখে-শুনে রাখি যাতে কেউ শিকার না করতে পারে। এই পাখিগুলো আমাদের এলাকার সৌন্দর্য।’ শুক্রবার দুপুরে বাবুই পাখির বাসার ছবি তুলবার সময় ঠিক এমনইভাবে কথাগুলো বললেন ঠাকুরগাঁও হরিপুর উপজেলার কাঁঠালডাঙ্গী এলাকার রমজান আলী। কথাগুলো বেশ ভালই লাগল। সংখ্যায় কম হলেও পাখিগুলো দেখতে বেশ ভালই লাগে। পাখিগুলো দেখে মনে পড়ে যায় কবি রজনীকান্ত সেনের সেই কবিতাটি - ‘বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই, কুঁড়েঘরে থাকি কর শিল্পের বড়াই, আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পড়ে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে।’ ‘বাবুই হাসিয়া কহে, সন্দেহ কি তায়? কষ্ট পাই, তবু থাকি নিজের বাসায়। পাকা হোক, তবু ভাই, পরেরও বাসা, নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর খাসা।’ একটি সময় গ্রাম বাংলায় প্রচুর দেখা যেত বাবুই পাখির বাসা। কালের বিবর্তন ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে আগের মতো এখন আর এ পাখির শৈল্পিক বাসা চোখে পড়ে না। হারিয়ে যাচ্ছে কারিগর এই পাখির শিল্পকর্ম। এর মাঝেও হঠাৎ চোখে পড়ে তাদের বাসাগুলো। সরেজমিন ঠাকুরগাঁও জেলা শহর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে হরিপুর উপজেলার কাঁঠালডাঙ্গী, ভাতুরিয়া ও রামপুর গ্রামে গিয়ে তাল-নারিকেল, বট-পাকুর গাছে দেখা মেলে মনোমুগ্ধকর এই বাবুই পাখির বাসা। এরা সাধারণত মানুষের কাছাকাছি বসবাস করে তাই দেখা যায় এদের বাসা। মানুষের হাতের নাগালের মাত্র পাঁচ অথবা ছয় ফুট উপরের মধ্যে হয়ে থাকে। দূর-দূরান্ত থেকেই এই বাবুই পাখির বাসা দেখতে ছুটে আসছেন অনেক পাখিপ্রেমী। তবে পৃথিবীর বুকে প্রকৃতির এক অপরূপ সুন্দর মনোরম দৃষ্টিনন্দন বাবুই পাখির বাসা আজ বিলুপ্তির পথে। কথা হয় রংপুর থেকে আগত জাহানা আখতারের সঙ্গে। তিনি জানান, ঠাকুরগাঁও এসেছি বেড়াতে। শুনলাম এই এলাকায় নাকি বাবুই পাখি আছে। তাই বাবা-মা-ছোট ভাই সকলে মিলে চলে আসলাম হরিপুরে। দীর্ঘদিন পরে এবারে প্রথম দেখলাম এমন পাখি। আসলেই পাখিগুলো দেখতে অনেক ভাল লাগছে। বিশেষ করে ভাল লাগল তাদের বাসাগুলো দেখে। স্থানীয় বাসিন্দা আলতাফ হোসেন বলেন, এই গ্রামে বাবুই পাখি বাসা তৈরি করছে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। প্রকৃতির নৈসর্গিক এই দৃশ্য উপভোগের জন্য প্রতিদিন অনেকে আসছে গ্রামগুলোতে। তিনি আর বলেন, এক সময় অনেক পাখি দেখা যেত। তবে বর্তমানে এখন আর বেশি পাখি চোখে পড়ে না কারণ অনেকেই এই পাখিগুলোকে শিকার করতে চায়। ঠাকুরগাঁওয়ের পাখিপ্রেমী রেজাউল হাফিজ রাহী জানান, বর্তমানে বাবুই পাখি নেই বললেই চলে। এর পরেও মাঝে মধ্যে দেখা মেলে তাদের। এই পাখিগুলো খুব সুন্দর বাসা বোনে বলে এরা ‘তাঁতী পাখি’ (ডবধাবৎ ইরৎফ) নামেও পরিচিত। এদের বাসার গঠন বেশ জটিল আর আকৃতি খুব সুন্দর হয়ে থাকে। এই পাখিগুলো যাতে আমাদের এখানে নির্ভয়ে থাকতে পারে সে জন্য স্থানীয়দের পাখিগুলোর ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। কারণ এই পাখির আগমনেই ওই এলাকার যেমন সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় তেমনি এরা প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায়ও সহযোগিতা করে। -এস এম জসিম উদ্দিন, ঠাকুরগাঁও থেকে
×