ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শাহনেওয়াজ চৌধুরী

তরুণ ভোটারদের জন্য হতে পারে আগাম উপহার

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ১২ আগস্ট ২০১৮

 তরুণ ভোটারদের জন্য হতে পারে আগাম উপহার

তরুণ ভোটারের সংখ্যা নিহায়ত কম নয়। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পেছনে তরুণ ভোটারদের অবদানের কথা সবার জানা। তরুণ ভোটারদের এই ভোটব্যাংককে অবহেলা করার সুযোগ নেই। শুধু ভোটের সমীকরণ থেকেই নয়, তরুণরাই দেশকে এগিয়ে নেবে। তাই তরুণ সমাজের মানসিক প্রশান্তি অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত একটি বিষয়। আওয়ামী লীগের উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ে অন্যান্য দল, এমনকি চরম শত্রুও নেতিবাচক মন্তব্য করতে পারবে না। সামান্য কিছু বিষয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করে নির্বাচনের আগে জটিলতা বাড়ানো অনর্থক। আর বিষয়টি যদি যৌক্তিক দাবির হয়, তাহলে তো কথাই নেই। কোটা সংস্কার, সরকারী চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছরে উন্নীতকরণের জন্য আমাদের তরুণ-যুব সমাজ দাবি জানিয়ে আসছে। কোটা সংস্কারের বিষয়টি সহজতর নয়। কিন্তু সরকারী চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছরে উন্নীতকরণের বিষয়টি ইতোমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সুপারিশ করেছে। স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম বলেছেন- ‘যখন গড় আয়ু ৪৫ বছর, সরকারী চাকরির বয়স ২৭ বছর, যখন জীবন প্রত্যাশা ছিল ৫০, বয়সসীমা ৩০ বছর এবং এখন গড় আয়ু ৭২ বছর, এন্ট্রিয়ের বয়সসীমা বাড়ানো উচিত।’ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম যথার্থ বলেছেন। যথেষ্ট সময় উপযোগী যুক্তি তুলে ধরেছেন। দীর্ঘদিন যাবত বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদ বিসিএস এবং অন্যান্য সকল সরকারী চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর নির্ধারণের দাবি জানিয়ে আসছে। সাধারণ ছাত্রদের মন্তব্য- বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজগুলোতে অনার্স কোর্স সমাপ্ত করতে একজন শিক্ষার্থী ২৫-২৬ বছর বয়সে উপনীত হয়। এর মধ্যে সেশনজট, রাজনৈতিক অস্থিরতা তথা হরতাল-অবরোধে পড়াশোনা-পরীক্ষা বিঘ্নিত হয়ে ২৮-২৯ বছর লেগে যায়। বাকি এক-দুই বছরে সরকারী চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিতে আর কতটুকু সময় পাওয়া যায়? এখন থেকে ৪০ বছর আগে কি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট ছিল? তখন কি সরকারী চাকরিতে এত লোকের আগ্রহ ছিল? তখন কি সরকারী চাকরিতে ঘুষ দেয়ার প্রয়োজন হতো? -এরকম অনেক বাস্তবতা এখন আমাদের সামনে। এক সেশনজটেই একজন ছাত্র বা ছাত্রীর নাকাল অবস্থা হয়ে যায়। সরকারী চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছরে উন্নীতকরণের দাবিতে কর্মসূচীতে অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বদরুন্নেসা কলেজ, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজসহ আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের শিক্ষার্থীরা। এসব বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীরা অবশ্যই মেধাবী। অতএব তাদের দাবিও মেধাপ্রসূত হবে। এদের সিদ্ধান্তও মেধাপ্রসূত হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ওপর তাদের যথেষ্ট আস্থা এবং ভালোবাসা রয়েছে; তা তাদের বক্তব্যে ইতিমধ্যে প্রকাশ পেয়েছে। তাই এই শিক্ষার্থীদের আস্থা নষ্ট করে তরুণ ভোটারদের বিমুখ করার বিষয়টি বিবেচনার ব্যাপার। এই প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের মন কিছুতেই উন্নয়নকামী সরকারের দিক থেকে অন্যত্র ফেরানো যাবে না। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছরে উন্নীত করার ক্ষেত্রে একটি বিষয় সামনে আসতে পারে- মুক্তিযোদ্ধা এবং চিকিৎসকদের বয়স বর্তমান নিয়মে বাড়তি রাখতে হবে। বর্তমান নিয়মে মুক্তিযোদ্ধা এবং চিকিৎসকদের বয়স বাড়তি ২ বছর করলেও চাকরি থেকে অবসর তো নির্দিষ্ট সময়েই হবে। রাজনৈতিক অস্থিরতায় শুধু পড়াশোনা নয়, সবকিছুতেই কম-বেশি প্রভাব ফেলে। রাজনৈতিক কারণে অনেক শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার রাজনৈতিক দলগুলো ছাত্রদের ব্যবহার না করেও পারে না। এমন পরিস্থিতিতে যে দল ক্ষমতার মসনদে থাকে সে দল অন্য দলের সমর্থকদের কূলে উঠতে দেবে না, এটাই স্বাভাবিক। দলীয় সংশ্লিষ্টতার কারণেও অনেক তরুণ সরকারী চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক কালচারে দলের জন্য ত্যাগীদের মূল্যায়ন নেই। ক্ষমতার মসনদে বসে দলের ত্যাগী আর অন্তঃপ্রাণ কর্মীদের কথা বেমালুম ভুলে যাওয়া বাংলাদেশীয় রাজনীতির কালচার। এই কালচারের কবলে পড়ে অনেক তরুণরা চাকরি পাচ্ছে না। চাকরি পাচ্ছে সুযোগসন্ধানী বহিরাগতরা, যারা প্রয়োজন ফুরানোর পরে দলের দিকে ফিরেও তাকায় না। তাকাবেও না। সামনে ৪০তম বিসিএসের প্রজ্ঞাপন আসছে। সম্ভবত তা আগামী সংসদ নির্বাচনের আগেই। এই বিসিএস থেকেই তরুণদের সরকারী চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছরে উন্নীতকরণের দাবিটি বিবেচনা করে দেখলে বাংলাদেশের লক্ষ তরুণ ভোটারের মন সরকারের সুন্দর ও গঠনমূলক মানসিকতার দিকেই আকৃষ্ট হবে। কালের ধারাকে অগ্রাহ্য করা কঠিন। সময়ের চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে না পারলে আমরা পিছিয়ে পড়ব। পৃথিবীর অনেক দেশে সরকারী চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর বা তারও বেশি। বহুদূরের উদাহরণের প্রয়োজন নেই, পশ্চিমবঙ্গেই সরকারী চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৪০ বছর। এছাড়া ফ্রান্সে ৪০ বছর, শ্রীলঙ্কায় ৪৫ বছর, ইন্দোনেশিয়া, ইতালীতে সরকারী চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর। একজন সরকারী চাকরি প্রার্থী ৩০ বছর কিংবা ৩৫ বছর, যে বয়সেই সরকারী চাকরিতে প্রবেশ করুক না কেন, অবসরের নির্দিষ্ট বয়সে তো অবসরে যেতেই হবে। তাতে রাষ্ট্রের কোন আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে না। চাকরিতে প্রবেশের সুযোগই যদি না থাকে তাহলে চাকরির বিজ্ঞপ্তি শত পদের হলেও চাকরি প্রার্থীর খুশি হবার সুযোগ নেই। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন ফিরিস্তি লম্বা। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোসহ কারও পক্ষেই তা অস্বীকার করা সম্ভব না। আওয়ামী লীগ সরকার দেশের জন্য যেমন কাজ করে বলেই এ দলটির প্রতি জনগণের প্রত্যাশাও বেশি। তরুণদের নিয়ে বর্তমান সরকার যথেষ্ট উদ্যোগী। তাই এ ধরনের ছোটখাটো দাবিগুলোর প্রতি একটু মনোযোগী হলে তরুণ-যুবকদের কাছে এ দলটির গ্রহণযোগ্যতা এবং জনপ্রিয়তা দুটোই চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়বে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মমতার আধার। এই ধারণা সবার মাঝে বিদ্যমান। এ রকম ধারণা থেকেই এ দেশের লক্ষ তরুণ-যুবক প্রধানমন্ত্রীর কাছে সরকারী চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আসছে। লেখক : চিকিৎসক [email protected]
×