ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকার দিনরাত

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ৭ আগস্ট ২০১৮

ঢাকার দিনরাত

ঢাকার কোনো একটি এলাকায় সংঘটিত কোনো একটি নির্দিষ্ট ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন সংবাদপত্রে প্রকাশ কিংবা টেলিভিশনে প্রচার না হলে ঢাকার অন্য অঞ্চলের মানুষের সেটি জানার বিশেষ উপায় থাকে না। তবে জরুরী বিষয় যেমন অগ্নিকা-, মারপিট, পুলিশি একশন এসব বিষয় দ্রুত ছড়ায় ফেসবুকে পোস্টের মাধ্যমে। থ্রিজি ফোর জি ইন্টারনেট সাময়িকভাবে স্থগিত হওয়ার আগে পর্যন্ত লাইভ ভিডিও-ও ছিল বেশি মানুষকে জানানোর সহজ পদ্ধতি। কিন্তু আগের রবিবার, মানে ২৯ আগস্ট রাজধানীর একটি স্কুলের দুই শিক্ষার্থী বেপরোয়া বাসের ধাক্কায় নিহত হওয়ার পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে পড়লে সেটিই হয়ে ওঠে জাতীয় প্রধান সংবাদ। প্রথমে নিহত দুই শিক্ষার্থীর কলেজের ছাত্রছাত্রীরা প্রতিবাদী আন্দোলন শুরু করে। অচিরেই ঢাকার বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা সেই আন্দোলনকে বেগবান করে তোলে। শোককে শক্তিতে পরিণত করার উজ্জ্বল উদাহরণ সৃষ্টি করে শিক্ষার্থীরা। কয়েকদিন পর একটি-দুটি করে বেশ কিছু প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরাও এসে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনটিকে অভূতপূর্ব মাত্রা দেয়। ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় শিক্ষার্থীরা নেমে পড়ে প্রতিটি যান্ত্রিক যানবাহনের কাগজপত্র ও চালকের লাইসেন্স পরীক্ষা করতে থাকে। না পেলে সেই যানটিকে আটকে পুলিশকে বলে মামলা দিতে। এই অভিনব কাজটি করার সময় তারা বিচারক, মন্ত্রী, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, সাংবাদিক, পুলিশ কর্মকর্তাসহ সমাজে সম্মানিত ও প্রভাবশালী বিশিষ্ট ব্যক্তিদের গাড়ি আটকে দিয়ে অবাক করা অনিয়ম পেয়েছে। এই আন্দোলনের ভেতর দিয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে কী ভীষণ নৈরাজ্য চলছে ঢাকার সড়কে। স্বেচ্ছাচারিতার চূড়ান্ত আর কি। সুন্দর নেমেছে পথে বেপথু বিদায়-রথে যে ৯ দফা দাবিতে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা সেগুলো হচ্ছেÑ ১. বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো ড্রাইভারকে ফাঁসি দিতে হবে এবং এই বিধান সংবিধানে সংযোজন করতে হবে। ২. নৌপরিবহন মন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার করে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। ৩. ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলাচল বন্ধ ও লাইসেন্স ছাড়া চালকরা গাড়ি চালাতে পারবেন না। ৪. বাসে অতিরিক্ত যাত্রী নেয়া যাবে না। ৫. শিক্ষার্থীদের চলাচলে এমইএস ফুটওভারব্রিজ বা বিকল্প নিরাপদ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৬. প্রত্যেক সড়কে দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় স্পিডব্রেকার দিতে হবে। ৭. সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্রছাত্রীদের দায়ভার সরকারকে নিতে হবে। ৮. শিক্ষার্থীরা বাস থামানোর সিগন্যাল দিলে থামিয়ে তাদের নিতে হবে। ৯. শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। দাবিগুলো পড়লে বোঝা যায় এ বিষয়ে সরকার ইতিবাচক পদক্ষেপই নিয়েছে। দুয়েকটি দাবি পূরণ সময়সাপেক্ষ। এটি দু-দশ দিনের ভেতর পূরণ সম্ভব নয়। ঢাকার বিভিন্ন বড় বড় স্কুল-কলেজ যেখানে রয়েছে তার সামনের রাস্তাগুলোতেই প্রধানত আন্দোলন গড়ে ওঠে। এক এলাকার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অন্য এলাকার শিক্ষার্থীদের সংযোগ যেমন ছিল না, তেমনি ছিল না সমন্বয়। তবু সব স্থানেই একই ধরনের তৎপরতা চালায় শিক্ষার্থীরা। যা মেনে নিয়েছিল ঢাকাবাসী। শিক্ষার্থীরা প্রথম কয়েকদিন রীতিমতো ইতিহাসই সৃষ্টি করে, যা সাধুবাদযোগ্য। হয়তো এ ধরনের সুন্দর আন্দোলন পৃথিবীর আর কোনো শহরেই ইতোপূর্বে ঘটেনি। মানতেই হবে, সরকার প্রথম কয়েকদিন এই আন্দোলনে কোনরূপ হস্তক্ষেপ করেনি। বরং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এক ধরনের সহযোগিতাই করেছে। তবে সত্য প্রকাশের দায়বোধ থেকে বলতেই হবে, শিক্ষার্থীদের ব্যবহার ও আচরণে কোনরূপ উগ্রতা ও বাড়াবাড়ি প্রকাশ না পেলেও তাদের সুন্দর কিছু স্লোগানের পাশে পরিবারের সবার সামনে উচ্চারণযোগ্য নয় এমন কিছু শব্দ দিয়ে তৈরি স্লোগান নিয়ে বিতর্ক ওঠে। স্মার্ট ও বিনয়ী সব শিক্ষার্থীর প্রধান দুটি স্লোগান ছিলÑ নিরাপদ সড়ক চাই এবং উই ওয়ান্ট জাস্টিস। কিন্তু কিছু স্লোগান নিয়ে বিতর্ক ওঠার পর অনেকে সন্দেহ করেন শিক্ষার্থীদের এই সুন্দর আন্দোলনকে কলুষিত করার জন্য পাকা ‘বুড়ো’দের মগজ যুক্ত হয়েছে কিনা। প্রথম তিনদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নিয়ে ট্রাফিক কন্ট্রোল করে। সরকার চতুর্থ দিন বৃহস্পতিবার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করে। কিন্তু ছুটির দিনেও শিক্ষার্থীরা সড়কে নেমে একই ধরনের তৎপরতা চালিয়ে যায়। এমনকি পরের দুটি ছুটির দিন শুক্র ও শনিবারেও তারা রাস্তায় নামে। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষার্থীরা কি সপ্তাহের পর সপ্তাহ এই কাজ করবে? এটা ঠিক তাদের উদ্দেশ্য মহৎ, তারা শতভাগ সৎ। ট্রাফিক পুলিশ যেখানে কিছু উৎকোচ নিয়ে ত্রুটিযুক্ত যান বা লাইসেন্সবিহীন চালককে ছেড়ে দেয়, সেখানে এই শিক্ষার্থীরা সেটি করবে না। সঙ্গত কারণেই প্রাইভেট গাড়ির জট লেগে যায় এক পর্যায়ে। শনিবার বেলা বারোটার আগে আমি নিজে ফার্মগেট এলাকায় দেখেছি গোটা রাস্তা জুড়েই ছিল পথচারী ও শিক্ষার্থীরা (ছবি দেখুন)। তাহলে যান সহজ গতিতে চলবে কিভাবে? ফার্মগেট হলো রাজধানীর এমন একটি স্থান যেখানে শহরের উত্তর, উত্তর-পশ্চিম এবং উত্তর-পূর্ব অঞ্চল থেকে গাড়ি এসে একমুখী যাত্রা করে শহরের দক্ষিণ দিকে। এমন একটি ব্যস্ত সড়ক-মোহনায় যান নিয়ন্ত্রণে প্রশিক্ষিতরাই হিমশিম খেয়ে যায়। সেখানে কোমলমতি ছাত্রদের দোষ দেয়া যায় না। কিন্তু হাতিরঝিলের মতো সবচেয়ে বাধাহীনভাবে দ্রুত চলার সড়কটিতে কী অবস্থা বিরাজ করেছে ওই একই দিনে? রামপুরা থেকে হাতির ঝিল দিয়ে গাড়ি চালিয়ে শহরের পশ্চিম পাশে আসছিলেন একজন অধ্যাপক। তিনি লিখলেন তার অভিজ্ঞতা : ‘ঢাকার সড়কে এখন আমরা সবাই রাজা। ছাত্ররা যা করছে তাকে নৈতিকভাবে সমর্থন করি আমি। কিন্তু এখন হচ্ছেটা কী? দশ জায়গায় কাগজপত্র পরীক্ষা হচ্ছে। একটু পরপরই ছেলেমেয়েরা এসে লাইসেন্স দেখতে চাচ্ছে। তারা অহেতুক গাড়িতে হাত দিয়ে টোকা মারছে, ভিআইপি গাড়িতে যেভাবে সিকিউরিটি পারসোনাল জানালায় বসে যায়, সেভাবে কিছু গাড়িকে এসকর্ট করে ইমারজেন্সি লাইনে নিয়ে যাচ্ছে। ফলাফল? দু’ঘণ্টায় হাতির ঝিলের মতো ফ্রি রাস্তা পেরুতে পারিনি।’ কাছাকাছি সময়ে একটি অসরকারী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ভেবেচিন্তে তার অভিমত প্রকাশ করলেন। তিনি যা লিখলেন তার সঙ্গে বহু নাগরিক হয়তো একমত পোষণ করবেন। তিনি লিখেছেন, ‘ছাত্রদের অবশ্যই স্কুল কলেজে ফিরে যেতে হবে। যে শিক্ষা তারা ইতোমধ্যে জাতিকে দিয়েছে সেটা কর্তৃপক্ষের জন্য লজ্জাজনক এবং অনুকরণীয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে তাদের আবেগ এবং আইনকানুন সম্পর্কিত ভ্রান্তিগুলোকে কাজে লাগিয়ে এই মহতী উদ্যোগটাকে হাসি মস্করায় পর্যবসিত করে ব্যর্থ প্রতিপন্ন করার একটা চেষ্টা চলছে, যাতে উপযুক্ত শিক্ষা ও লাইসেন্সবিহীন চালক, ফিটনেসবিহীন এবং রুট পারমিট ছাড়া গাড়িগুলো আগের মতোই আবার রাস্তা দাপিয়ে বেড়াতে পারে। ঢাকার ব্যস্ততম রাস্তার (ফার্মগেট) চেহারা যখন এমন দাঁড়িয়েছে তখন আমাদের কোমলমতি সন্তানদের আর কিই বা করার থাকে? এই অবস্থা নিরসনে একটা বিকল্প ব্যবস্থা বরং করা যায়। ট্রাফিক পুলিশের পাশে নিকটস্থ স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের কয়েকজনকে পর্যায়ক্রমে পালা করে মোতায়েন করা হয়, যাতে তারা শিখতে পারে আইন ও দায়িত্বশীলতা এবং পুলিশও তাদের কাছ থেকে শিখতে পারে অনেক কিছু। তলস্তয়ের ‘বড়োদের চেয়ে বাচ্চারা বেশি জ্ঞানী’ নামের সেই গল্পটা অনেকেরই পড়া আছে নিশ্চয়ই? ছাত্ররা এই সিদ্ধান্ত সাদরে গ্রহণ করবে, আমি নিশ্চিত। সুইজারল্যান্ডের ইন্টারলাকেন শহরে ঠিক এরকম ব্যবস্থাই দেখেছিলাম, যদিও সেসব দেশে তার আদৌ কোন প্রয়োজন নেই। কবি শহীদ কাদরীর ভাষায়, রাষ্ট্রপ্রধান কি মেনে নেবেন আমার প্রস্তাবগুলো?’ যা হোক, একটু পিছনে ফিরে যাই। শুক্রবার সকালে উত্তরা নর্থ টাওয়ারের সামনে দেখলাম মূলত তরুণীরাই ট্রাফিক কন্ট্রোল করছেন; রাস্তার দুপাশে প্রচুর পুলিশ দেখেছি পর্যবেক্ষকের ভূমিকায়। অতিরিক্ত ভাড়ায় বাধ্য হয়ে একটি সিএনজিতে চড়ে বসেছিলাম অফিসে যাব বলে। কিন্তু পথের দু’পাশে হাজার হাজার অসহায় মানুষের মুখ দেখে মনটাই খারাপ হয়ে যায়। ৩৩ মিনিটে উত্তরা থেকে নিউ ইস্কাটনে অফিসে এলাম; পথে বিআরটিসির দোতলা ২টি বাস ছাড়া কোন বাস-মিনিবাস চলতে দেখিনি। এমনটাই আশঙ্কা ছিল : অঘোষিত ধর্মঘটে যাবে গণপরিবহন নেতারা। তাদের কাছে আর কতোকাল মানুষ জিম্মি থাকবে? হাজার হাজার মানুষ যানবাহনের অপেক্ষায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন। এজন্যেই শক্তিশালী জাতীয় (সরকার-নিয়ন্ত্রিত) গণপরিবহন দরকার। সব মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের হাতে ছাড়তে নেই। গণপরিবহন উধাওয়ে সড়কমন্ত্রীর দায়িত্ব! অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয় শুক্রবার সকাল থেকে। ফলে ছুটির দিনে যারা জরুরী প্রয়োজনে ঘরের বের হন তারা পড়েন বিপাকে। আগের দিনও গণপরিবহন চলেছিল, তবে সংখ্যায় ছিল কম। যেহেতু শিক্ষার্থীরা রাস্তায় প্রতিটি গাড়ির কাগজপত্র ও চালকের লাইসেন্স যাচাই করছিল তাই এসবে যে পরিবহনের মালিক/ চালকের ঘাটতি ছিল তারা রাস্তায় বাস-মিনিবাস নামানোর সাহস দেখায়নি। দেশের শ্রমিক সংগঠনগুলোর শীর্ষ ফোরাম বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি নৌমন্ত্রী শাজাহান খান দুই শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যুর পর সাংবাদিকদের সামনে হাসিমুখে অগ্রহণযোগ্য বক্তব্য না দিলে শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষ তার ওপর এতটা বিরক্ত হতো না বলেই মনে হয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনও এমন তীব্র হতো না। তবে মারাত্মক ভুল যে করে ফেলেছেন তিনি সেই বোধোদয় হয় তার। সেজন্যে দ্রুত দুঃখ প্রকাশ, নিহত শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণে প্রদান ইত্যাদি উদ্যোগ নেন। যদিও তার ক্ষমা প্রার্থনা যথাযথ ও আন্তরিক হয়নিÑ এমনটাই মানুষ ভেবেছে হয়তোবা। শিক্ষার্থীদের ৯ দফায় তার পদত্যাগের বিষয়টি ছিল না, কিন্তু সাধারণ মানুষ তাকে ক্ষমতাহীন দেখতেই চেয়েছে। তার যে কী ক্ষমতা সেটির দৃষ্টান্ত তো আরেকবার পেল ঢাকাবাসী। ঢাকার রাস্তায় একটিও গণপরিবহন নেই (বিআরটিসির ভাঙাচোরা দু-চারটি ডবল ডেকার ছাড়া)। আমাদের অনেকের মনেই প্রশ্ন উঠেছে আচ্ছা গণমানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সড়কমন্ত্রীর কি করণীয় কিছু ছিল না? তিনি চাইলে দু-একশ’ বাস-মিনিবাস কি পাবলিকের জন্য ঢাকার রাস্তায় নামাতে পারতেন না? সরকারী-অসরকারী বিভিন্ন সংস্থা থেকেই এই বাস সংগ্রহ করা যেত আপৎকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলায়। তিনি তো একটি বড় দলের সাধারণ সম্পাদকও। অর্থাৎ বড় নেতা! তার নেতৃত্বসুলভ গুণ কেন দেখতে পেল না ঢাকার সড়কে গণপরিবহনে চলাচলকারী কয়েক লাখ মানুষ? প্রসঙ্গ যাত্রী ছাউনি শ্রাবণ শেষ পর্যায়ের দাপট দেখালো বুঝি শনিবার সকালে। বনানী ওভারপাসের আগে যে ফুটওভারব্রিজ, তার নিচে ডজন ডজন মোটর সাইকেল। আরোহীরা বৃষ্টিভেজা হওয়া থেকে বাঁচতে চাইছে। আর শাহীন কলেজের উল্টোপাশে এসে দেখি ফুটওভারব্রিজের নিচে মোটর সাইকেলগুলো ভিজছে, চালক/ আরোহীরা সব পেভমেন্টের ওপর উঠে পড়েছেন। সেখানে দুপাশে লম্বা হয়ে সিঁড়ি নেমে গেছে তার নিচে একচিলতে জায়গা। আহা কাকভেজা না হওয়ার কত চেষ্টা! ঢাকায় এক কিলোমিটার পরপর যাত্রী ছাউনি রাখার কথা আগেও বলেছি। বাস বা অন্য যানবাহনের অপেক্ষারত নাগরিকদের জন্যই যাত্রী ছাউনি। বসার জন্য বেঞ্চ আর মাথার ওপর অর্ধবৃত্তাকার ছাদ- এই নিয়ে যাত্রী ছাউনি। রোদ-বৃষ্টি থেকে বাঁচার আশ্রয়। দীর্ঘ অপেক্ষার সময়ে বসে একটু জিরিয়ে নেয়ার সুবিধা। অথচ এখন রাজধানীর বেশিরভাগ যাত্রী ছাউনিতেই বসার বেঞ্চ নেই, জায়গাটি দখল করে নিয়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। গড়ে উঠেছে অবৈধ দোকানপাট, খোলা হয়েছে খাবার হোটেল। রাতের বেলা এগুলো বখাটে আর মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিণত হয়। যাত্রী ছাউনিতে বসা তো দূরের কথা, অনেক সময় দাঁড়ানোরও সুযোগ মেলে না। তুমুল বৃষ্টির সময় পথচারীরা হাড়ে হাড়ে টের পান যাত্রী ছাউনির অনুপস্থিতি। গত শ্রাবণে মুষলধারে বৃষ্টির সময় বিমানবন্দর সড়কে এক অভিনব দৃশ্য দেখেছিলাম। রাস্তার ওপর দাঁড় করানো প্রায় ডজনখানেক মোটরসাইকেল। আরে এগুলোর চালকেরা কোথায় গেলেন! একটু খেয়াল করেই তাদের দেখা মিলল। খুব উঁচু নয় এমন একটা গাছের নিচে তারা দাঁড়িয়ে আছেন। গাছের পাতা ঝাকড়া নয়। ফলে তারা প্রায় ভিজেও গেছেন বলা চলে। মাথার রুমালে কি আর বৃষ্টি মানে! বেশ টানা লম্বা কোন পথে যাত্রী ছাউনি থাকা কত যে জরুরী সেটা বুঝলাম। সব বাস স্টপেজে না হলেও বেশ কিছু স্টপেজে যাত্রী ছাউনি আছে, কিন্তু দুই স্টপেজের মাঝখানেও যে যাত্রী ছাউনি থাকা দরকার, সেটাও মেয়রদের বুঝতে হবে। ৫ আগস্ট ২০১৮ [email protected]
×