ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কর্মদক্ষতায় তিনি চৌকস অফিসার ইনচার্জ

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ৪ আগস্ট ২০১৮

 কর্মদক্ষতায় তিনি চৌকস অফিসার ইনচার্জ

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ মোঃ নুরুল ইসলাম পুলিশের একজন অফিসার ইনচার্জ (ওসি)’র নাম। যিনি চাকরির মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যেই দেশ মাতৃকার টানে দুরন্ত সাহসিকতায় অসামান্য অবদানের জন্য লাভ করেছেন পুলিশের সর্বোচ্চ (পিপিএম) পদক। এরপরও থেমে থাকেনি তার কর্মদক্ষতা। বিভিন্ন সময় সাহসিকতার প্রমাণ রাখায় অল্পদিনেই তিনি পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) থেকে র‌্যাবের এসআই, ডিবি ইন্সপেক্টর, ডিবির ওসি থেকে বরিশাল মহানগরীর কাউনিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সর্বশেষ গত ১ আগস্ট থেকে তিনি বরিশাল মহানগরী জনগুরুত্বপূর্ণ কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। ১৯৯৫ সালে নারায়ণগঞ্জ থানায় এসআই হিসেবে যোগদানের মধ্যদিয়েই কর্মস্থলে তার পথচলা। নুরুল ইসলাম ওই থানায় কর্মরত অবস্থায় ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ সরকার বহুল আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী গলাকাটা কাসেমকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেন। তৎকালীন সময়ের তরুণ যুবক এসআই নুরুল ইসলাম তার নিজস্ব কৌশলে নারায়ণগঞ্জ থানাধীন এলাকায় আত্মগোপনে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী গলাকাটা কাসেমকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান পরিচালনা করেন। সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পুলিশ সদস্যদের বন্দুক যুদ্ধ চলাকালীন সময় এসআই নুরুল ইসলাম শীর্ষ সন্ত্রাসী গলাকাটা কাসেমকে অক্ষত অবস্থায় গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যান। তার এ দুরন্ত সাহসিকতায় ১৯৯৯ সালে তার সাহসিকতার স্বীকৃতি স্বরূপ দেয়া হয় পুলিশের সর্বোচ্চ পিপিএম পদক। চৌকস এ পুলিশ অফিসার ১৯৯৯ সালে তৎকালীন সময়ে সন্ত্রাসের জনপদ বলে খ্যাত বরিশালের গৌরনদী থানায় এসআই হিসেবে যোগদান করেন। সে সময় এসআই নুরুল ইসলাম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গৌরনদী উপজেলার প্রত্যন্ত সরিকল এলাকা থেকে গ্রেফতার করেন দেশের ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী এরশাদ সিকদারের বড়ভাই আশ্রাব সিকদার ওরফে বড় মিয়াকে। বিভিন্ন সময় তার (নুরুল ইসলাম) দুরন্ত সাহসিকতায় একাধিকবার তিনি সরকারীভাবে নগদ অর্থ ও সম্মাননা লাভ করেছেন। এক পর্যায়ে চৌকস এ পুলিশ অফিসার র‌্যাব-১২এর এসআই ও ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে সিলেট মেট্রোপলিটনের ডিবি ইন্সপেক্টর হিসেবে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বস্তরে সুনামের সহিত সঠিক দায়িত্ব পালন করায় অল্পদিনেই পদন্নোতি পেয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে মোঃ নুরুল ইসলাম পিপিএম সর্বপ্রথম গৌরনদী থানায় যোগদান করেন। বরিশালের রক্তঝরা উত্তর জনপদের চরমপন্থী সর্বহারা, জঙ্গী হিজবুত তাওহীদ অধ্যুষিত ও মাদকের স্বর্গরাজ্য বলে খ্যাত গৌরনদী থানায় নুরুল ইসলাম ওসি হিসেবে যোগদান করার পর পরই তিনি উপজেলার প্রতিটি এলাকায় শান্তি সভা করেন। পরবর্তীতে সরকারী নিয়মেই ডাকাত অধ্যুষিত বাকেরগঞ্জ থানায় দীর্ঘদিন ওসি হিসেবে মোঃ নুরুল ইসলাম পিপিএম দায়িত্ব পালন করেন। তিনি (নুরুল ইসলাম) বাকেরগঞ্জ থানায় যোগদানের পূর্বে দীর্ঘ কয়েক মাস ওই থানায় ওসি শূন্য ছিল। কারণ ওই থানা এলাকায় শুধুমাত্র ডাকাতির কারণে একাধিক ওসিকে শাস্তিমূলক বদলি হতে হয়েছে। যে কারণে কোন ওসি বাকেরগঞ্জ থানায় যোগদান করতে চাইতেন না। সেই ডাকাত প্রতিহতের চ্যালেঞ্জ নিয়ে স্ব-ইচ্ছায় তিনি (নুরুল ইসলাম) বাকেরগঞ্জ থানায় ওসি হিসেবে যোগদান করেন। এরপর থেকে ডাকাতের বিরুদ্ধে শুরু হয় তার জীবন-মরণ লড়াই। তিনি তার মেধা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে বাকেরগঞ্জের শতাধিক ডাকাতকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন। ফলশ্রুতিতে বর্তমানে বাকেরগঞ্জে শান্তির সুবাতাস বইছে। পরবর্তীতে তিনি (নুরুল ইসলাম) দীর্ঘদিন উজিরপুর থানার ওসি হিসেবে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। এখানেই সংশ্লিষ্ট উর্ধতন এক কর্মকর্তার সঙ্গে নুরুল ইসলামের নীতির অমিল দেখা দেয়ায় তিনি কয়েক মাস বরিশাল মহানগর ডিবির ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেখান থেকে নুরুল ইসলাম পিপিএম কাউনিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। গত ১ আগস্ট থেকে তিনি (নুরুল ইসলাম) বরিশাল মহানগরীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকা কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি হিসেবে যোগদান করেছেন। নুরুল ইসলাম পিপিএম বলেন, যতদিন আমার ওপর সরকারের অর্পিত দায়িত্ব থাকবে ততদিন নিজের জীবন বাজি রেখে হলেও সমাজের অবহেলিতদের সঙ্গে নিয়ে সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত দেশ গড়ার কাজ করে যাব। এ জন্য তিনি বিশেষ করে সাংবাদিক সমাজের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
×