ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাসিক নির্বাচন

ভোট উৎসবে মাতাল বরেন্দ্র নগরী

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২১ জুলাই ২০১৮

  ভোট উৎসবে মাতাল বরেন্দ্র নগরী

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) নির্বাচন নিয়ে ভোটের উৎসবে এখন মাতাল বরেন্দ্র খ্যাত রাজশাহী নগরী। আগামী ৩০ জুলাই নির্বাচনকে ঘিরে সরগরম রাজশাহীর ভোটের মাঠ। প্রার্থী ও ভোটারের পাশাপাশি রাজশাহী নগরবাসী এখন উপভোগ করছেন দারুণ এ ভোট উৎসব। ভোটের দিনক্ষণ নির্ধারণের পর থেকেই ভোটের উৎসব শুরু হয় এ নগরে। তবে গত ১০ জুলাই থেকে প্রচার শুরুর পর থেকে আলাদা মাত্রা পেয়েছে নগরবাসী। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বেসামাল মাইকের আওয়াজ, আর পোস্টার, ব্যানার লিফলেটে ঢাকা পড়েছে নগরীর প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলি সর্বত্র। রাজশাহী নগর ছাড়িয়ে এ ভোটের রেস ছড়িয়ে পড়েছে উত্তরাঞ্চলের জেলা থেকে উপজেলা ও গ্রাম পর্যন্ত। দূরের মানুষও এখন ভোটের উৎসবে শামিল হচ্ছেন। তারা উঠেছেন আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে। দলীয় প্রার্থী হয়ে নামছেন ভোটের প্রচারেও। সবার টার্গেট এখন ভোটের মাঠে। গানে গানে স্লোগান উঠছে দুপুর পেরুলেই। প্রার্থীদের পক্ষে এ অঞ্চলের জনপ্রীয় গম্ভীরার দলও চোষে বেড়াচ্ছেন ভোটের মাঠ। সব মিলিয়ে সর্বত্র উৎসবের আমের বিরাজ করছে রাজশাহী নগরের সর্বত্র। নগরজুড়ে গম্ভীরার সুরের মাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের ইশতাহার ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে নগরজুড়ে। পাশাপাশি শিল্পীদের সুরে মাইকের বাজানো হচ্ছে প্রার্থীদের প্রতীক নিয়ে গান। আগামী ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনকে ঘিরে উদ্বেলিত নগরবাসী। নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ থেকে শুরু করে শিশুরাও এখন ভোটের মাঠে নেমেছে পছন্দের প্রার্থীদের হয়ে। গত ১০ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে ভোটের উৎসব। প্রতীক বরাদ্দের দিন থেকেই নগরীতে নির্বাচনী প্রচারে নেমে পড়েছেন মেয়র, ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকরা। ভোটার টানতে নগরীতে পোস্টার সাঁটিয়ে, নানা প্রতিশ্রুতি নিয়ে মানুষের দুয়ারে গিয়ে ভোট চেয়ে, মাইকিং করে গণসংযোগ করতে ব্যস্ত তারা। নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, প্রচারে মাত্রা যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। আসন্ন নির্বাচন যেন পদ্মাপাড়ের নগরী রাজশাহীতে উৎসবে পরিণত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, এবার রাজশাহী সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীসহ মোট ৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ছাড়া সাধারণ ৩০টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিল পদে ১৬০ জন এবং সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে লড়ছেন আরও ৫২ জন। সবমিলিয়ে রাজশাহী সিটি ভোটে এবার অংশ নিয়েছেন ২১৭ জন প্রার্থী। প্রতিদিন দুপুর থেকে প্রতি প্রার্থীর মাইকিং শুরু হচ্ছে একযোগে। অন্তত নগরজুড়ে একসঙ্গে হাজার মাইকের আওয়াজে প্রকম্পিত হয়ে উঠছে নগরীর অলিগলি থেকে সর্বত্র। সরেজমিনে দেখা যায়, বরেন্দ্র নগরী রাজশাহীর বিভিন্ন সড়ক, মোড়, অলি-গলি নির্বাচনী ব্যানার ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। অটোরিক্সায় মাইক বেঁধে নগর ঘুরে চলছে প্রচার। মিছিল-মিটিং বন্ধ থাকায় প্রার্থীরা ‘ডোর টু ডোর ক্যাম্পেন’ করছেন। প্রতিটি বাসা-বাড়িতে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে নগর উন্নয়নের না প্রতিশ্রুতি-ইশতাহার দিয়ে নিজ নিজ প্রতীকে ভোট চাইছেন। কেউ কেউবা আবার ভোট চাওয়ার অভিনব পন্থা বের করেছেন। জনপ্রিয় বাংলা গানের লিরিক বদলে তাতে নিজের নির্বাচনী ইশতাহার বসিয়ে গানের তালে তালে এলাকার বাসিন্দাদের কাছে ভোট চাইছেন। রাজশাহীর অসহনীয় গরমও যেন প্রার্থী ও সমর্থকদের নির্বাচনী প্রচারকে দমিয়ে রাখতে পারছে না। এ দিকে রাসিক নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের সমর্থন যোগাতে ঢাকা থেকেও আসছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি নিজ নিজ দলের প্রার্থীদের সমর্থন যোগাতে রাজশাহীতে এসে প্রচার করছেন। নির্বাচন নিয়ে নগরবাসীর মধ্যেও বেশ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে। এখন নগরের প্রতিটি চায়ের দোকানে আলোচনার বিষয় আসন্ন রাসিক নির্বাচন। চায়ের কাপেও নৌকা-ধানের শীষে বিতর্ক বেশ চরমে উঠেছে। ভোটারা হিসাব কষছেন কাকে ভোট দিলে রাজশাহী নগরী ও নিজ নিজ এলাকার উন্নয়ন হবে। নগরীর মির্জাপুর এলাকার বাসিন্দা আব্দুল লতিফ বলেন, ভোট নিয়ে আমরা সবাই খুব উচ্ছ্বসিত। সবাই আমাদের কাছে এসে ভোট চাইছেন, ওয়াদা করছেন। আমাদের এলাকার যারা উন্নতি করবে, আমরা তাদেরই ভোট দেব। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এহসান মাহফুজ বলেন, আমরা নৌকার পক্ষে লিটন ভাইয়ের নির্বাচনী প্রচারের জন্য নগরীর প্রতিটি ঘরে ঘরে যাচ্ছি। নগরবাসীর মধ্যে যেন নির্বাচন ঘিরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। ভোটাররা তাদের নানা দাবি, প্রত্যাশার কথা আমাদের জানাচ্ছেন। প্রসঙ্গত, এবার রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে লড়ছেন ৫ প্রার্থী। এদের মধ্যে প্রচারে এগিয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন (নৌকা), পাশাপাশি প্রচার বাড়িয়েছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল (ধানের শীষ)। এ দুই প্রার্থীর প্রচার দৃষ্টি কাড়ছে সবার। এর বাইরেও অপর তিনপ্রার্থীও চষে বেড়াচ্ছেন ভোটের মাঠ। দলের বাইরে স্বতন্ত্র হিসেবে ভোটে অংশ নিলেও প্রচারে কমতি নেই তাদেরও। এদের মধ্যে এ্যাডভোকেট মুরাদ মুর্শেদ লড়ছেন হাতি প্রতীক নিয়ে, শফিকুল ইসলাম মাঠে রয়েছেন হাতপাখা প্রতীক নিয়ে আর হাবিবুর রহমান নামের অপর প্রার্থী মাঠে রয়েছে কাঁঠাল প্রতীক নিয়ে। নিজের মতো করে প্রচার ও ভোট চাইছেন সবাই।
×