ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারের শেষ বাজেট অধিবেশন সমাপ্ত

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৩ জুলাই ২০১৮

সরকারের শেষ বাজেট অধিবেশন সমাপ্ত

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদের বক্তব্যর মধ্য দিয়ে শেষ হলো সরকারের শেষ বাজেট অধিবেশন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার টানা দশম বছরের মতো জাতীয় বাজেট ঘোষণা করে এই সংসদ অধিবেশনে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনকারী এই দেশের আর কোন রাজনৈতিক দল টানা এক দশক জুড়ে সংসদে নেতৃত্ব দেয়নি। ৭ জুন অধিবেশনে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এর মাধ্যমেও তিনি দেশের একমাত্র অর্থমন্ত্রী হিসেবে টানা এক দশক বাজেট পেশের রেকর্ড গড়েছেন। তবে মোটের হিসাবে তিনি ১২তম বাজেট পেশ করে সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের সমকক্ষতা অর্জন করেন। এবারের বাজেটের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। বাজেটের ওপর আলোচনা শেষে তা ২৮ জুন পাস হয়। সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ অধিবেশন ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বিরোধী দল গঠনমূলক ভুমিকা রেখেছেন। গণতান্ত্রিক চর্চায় যেভাবে সংসদ চলার কথা ছিল ঠিক সেভাবেই চলেছে। অতীতে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হতো কটূক্তি আর অশালীন বক্তব্যর কারণে। এবারের সংসদে এ ধরনের অশালীন ঘটনা বা কথা-বার্তা হয়নি। সব গঠনমূলকভাবে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। অন্যদিকে বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ বর্তমান সংসদকে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী বলে মন্তব্য করেন। পাশাপাশি তিনি মাদক, স্বাস্থ্য, রাজধানীর যানজট ও কোটা বিরোধী আন্দোলন নিয়ে বক্তব্য রাখেন। বাজেট অধিবেশনে সমাপনী ঘোষণার আগে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের অগ্রযাত্রায়। উন্নয়নের ক্ষেত্রে সারাবিশ্বের কাছে বিস্ময় আজ বাংলাদেশ। প্রতিটি অগ্রযাত্রায় নির্দিষ্ট মাত্রা নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে আমরা আজ বেরিয়ে এসেছি। একটি দেশকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে অনেক বিষয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে যেমন সরকারের ধারাবাহিকতা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও নেতৃত্ব। বর্তমান সরকারের সময়ে তা ছিল বলেই দেশ আজ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে, এবারের বাজেট অধিবেশনে মোট কার্যদিবস ছিল ২৫টি। সম্পূরক বাজেটসহ মোট বাজেটে আলোচনায় ২২৩ জন এমপি অংশ নেন। আলোচনায় সময় ব্যয় হয় ৫৫ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট। বাজেট পাস ছাড়াও এ অধিবেশনে ১৪টি বিল পাস হয়। এর মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য ছিল সংবিধান (সপ্তদশ সংশোধন) বিল ২০১৮। বর্তমান সরকারের আমলে এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সংসদ অধিবেশনে ১৫৭টি বিল পাস হয়। আইন প্রণয়ন সম্পর্কিত কাজ সম্পাদনের পাশাপাশি কার্যপ্রণালি বিধির ৭১ বিধিতে ১৮০টি নোটিস পাওয়া যায়। এর মধ্যে ১২টি নোটিস গ্রহণ করা হয়। নোটিসগুলোর মধ্যে ৭টি সংসদের বৈঠকে আলোচিত হয়েছে। অন্যদিকে ৭১ বিধিতে দুই মিনিটের আলোচিত নোটিসের সংখ্যা ছিল ৩৮টি। সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর উত্তরদানের জন্য সর্বমোট ১৬৫টি প্রশ্ন পাওয়া যায়। এর মধ্যে তিনি ৬৭টি প্রশ্নের উত্তর দেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের উত্তরদানের জন্য পাওয়া যায় ২৮৮১টি প্রশ্ন। এর মধ্যে মন্ত্রী উত্তর দিয়েছেন ২০১৯টি প্রশ্নের। এছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীরা সমসমায়িক গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। উল্লেখ্য, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি বিএনপি-জামায়াতকে ছাড়াই এই সংসদ যাত্রা শুরু করে। সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির অবস্থান নিয়ে বিতর্ক থাকলেও বিগত বছরগুলোর মতো শেষ বছরের বাজেট অধিবেশনেও তাদের সবর উপস্থিতি দেখা গেছে। এর আগে ১২ এপ্রিল শেষ হওয়া সংসদের ২০তম অধিবেশনেও বিরোধীদলীয় সদস্যদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল।
×