ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

সুচিত্রা সেন ও ফেরদৌসী মজুমদার আমার অভিনয় প্রেরণা ॥ সায়েকা

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ৫ জুলাই ২০১৮

 সুচিত্রা সেন ও ফেরদৌসী মজুমদার আমার অভিনয় প্রেরণা ॥ সায়েকা

সাম্প্রতিক সময়ের মঞ্চের একজন নন্দিত অভিনয়শিল্পী সৈয়দা শামছি আরা সায়েকা। দীর্ঘদিন দেশের থিয়েটার অঙ্গনকে আলোকিত করার পাশাপাশি বিদেশেও অভিনয়ে অর্জন করেছেন দর্শকপ্রিয়তা। পদাতিক নাট্য সংসদ টিএসি প্রযোজিত মনোড্রামা ‘গহন যাত্রা’ নাটকে একক অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছেন। শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে আজ সন্ধ্যা ৭টায় নাটকটির ২৫তম মঞ্চায়ন হবে। নাটকের আজকের মঞ্চায়ন, অভিনয় জীবন এবং সাম্প্রতিক কার্যক্রম নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয় । ‘গহন যাত্রা’র পঁচিশতম মঞ্চায়নে আপনার অনুভূতি কেমন? সায়েকা : যে কোন মঞ্চাভিনেতা কিংবা অভিনেত্রীর একটা স্বপ্ন থাকে, সময় সুযোগ এলে সে একক অভিনীত নাটকে অভিনয় করবে। আমার সে স্বপ্ন ছিল এবং একদিন তা বাস্তবায়নের দিকে এগোলো। নাট্যকার রুবাইয়াৎ আহমেদ আমার অভিনয় শক্তি এবং তার বৈশ্বয়িক ভাবনা মাথায় রেখে নাটকটি লিখলেন। নির্দেশক সুদীপ চক্রবর্তী পারিপার্শ্বিক ঘটনাসমূহের প্রেক্ষিতে চরিত্রটি মানস লোকে দাঁড় করিয়ে এবং সেখান থেকে দৃশ্যকল্প নির্মাণে দিক নির্দেশনা দিয়ে আমাকে শাণিত করলেন। আমার দল সর্বোতভাবে উজাড় করে আমাকে সহযোগিতা করলেন। তারপরও আমার ভয় আমি পারব তো! আমায় দিয়ে কি হবে! এতটা ভার বইবার সামর্থ আমার আছে তো। পুরোটা সময় দর্শকদের ধরে রাখতে পারব তো! ২০১৬ সালের ৫ জুন প্রথম মঞ্চায়নের দিন যে কৌতূহল, যে উদ্দীপনা ও যে সংশয় ছিল। দুই বছরের মাথায় এসে সেই একই অনুভূতি মননে-চিন্তা এবং চেতনায়। মনে হয় কিছু একটা করতে পেরেছি। আপনার অভিনয় জীবন সম্পর্কে বলুন। সায়েকা : আমার শিল্প জীবনের আরম্ভ নৃত্যের ভাষায়। শৈশব থেকেই আমি নৃত্য অনুরাগী, নৃত্য চর্চা করি এবং পরবর্তীতে বুলবুল ললিত কলা একাডেমি থেকে সাধারণ নৃত্যের ওপর ৯ বছরব্যাপী সার্টিফিকেট কোর্স করি। সাধারণ নৃত্য, কথক নৃত্য এবং ভরত নাট্যমের ওপর অর্জিত শিক্ষা এবং উপলব্ধি আমার অভিনয়ের ক্ষেত্রে জোরাল ভূমিকা রাখল। অভিনয় শুরু হল ‘ভুলিনি একাত্তর’ নামে পথ নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিভোর কিশোরী চরিত্রে আমি তখন। প্রথম মঞ্চে এলাম ‘চন্দ্রাবতী’ নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র কবি চন্দ্রাবতী হয়ে। প্রণয় আর প্রত্যাখানের রসে জারিত হয়ে কবি হলাম আবার আত্মহুতিও দিলাম। ‘সোজন বাদীয়ার ঘাট’ নাটকে সোজনকে পুনঃ পেলাম দুলি হয়ে আকার থেকে নিরাকারে। ‘মাউস ট্রাফ’ নাটকে মলি হয়ে জড়িয়ে গেলাম রহস্যের গোলক ধাঁধায়। ‘বেদের মেয়ে’ নাটকে চম্পাবতী সেই চিরচেনা বেদেনী যে জীবন সঙ্গিনীকে বাঁচাতে নিজের জীবন উৎসর্গ করতে কার্পণ্য করেনি। আবার এই আমি ‘ম্যাকবেথ’ নাটকে লেডি ম্যাকবেথ হয়ে দেখলাম আকাক্সক্ষার একটা সীমা থাকা উচিত। আর সীমাহীন যন্ত্রণা ধারণ এবং বহন করতে করতে নির্যাতিত মানুষের প্রতিনিধি একজন হয়ে ঘৃণার বিপরীতে ভালবাসা, অভিশাপের বিপরীতে আশীর্বাদ কামনায় ‘গহন যাত্রা’ নাটকে সালমা রূপী এই আমি। আমার অভিনয় আমার আনন্দ, আমার অভিনয় নাট্যানুরাগী দর্শকদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশের নান্দনিক উপায়। আপনার অভিনয়ে প্রেরণা পান কার কাছে? সায়েকা : আমার মা সৈয়দা সারিয়া বেগম বলতেন, শিল্প যাত্রায় শিল্পী হিসেবে নিজের রহস্যময়তা ধরে রাখবে। এর বাস্তব উদাহরণ পাই অভিনেত্রী সুচিত্রা সেনকে দেখে। আবার বাবা এস এম ইব্রাহীম বলতেন, শিল্পী হিসেবে নিজেই নিজের সুরক্ষা দেবে এবং যতœ নেবে। এর বাস্তব উদাহরণ পাই অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদারকে দেখে। ফলে অভিনেত্রী সুচিত্রা সেন এবং ফেরদৌসী মজুমদার আমার অভিনয় প্রেরণা। শুনেছি ‘গহন যাত্রা’ কলকাতায় আমন্ত্রিত হয়েছে। সায়েকা : হ্যাঁ চাকদহ নাট্যজন ও হালিশহর চতুর্থ সূত্রের যৌথ আয়োজনে এবং আমন্ত্রণে আগামী ২১ জুলাই সেখানে ‘গহন যাত্রা’ মঞ্চায়ন হবে। -গৌতম পান্ডে
×