ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাস্তবায়নে রেকর্ড ॥ বিদায়ী অর্থ বছরের এডিপি

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৪ জুলাই ২০১৮

বাস্তবায়নে রেকর্ড ॥ বিদায়ী অর্থ বছরের এডিপি

আনোয়ার রোজেন ॥ শক্তিশালী হচ্ছে দেশের অর্থনীতির ভিত। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে সরকারের সক্ষমতা। যার প্রতিফলন ঘটেছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) বাস্তবায়নে। সদ্য সমাপ্ত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৭০৩ কোটি টাকার। একক অর্থবছরের হিসাবে টাকার অঙ্কে এটি এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ বাস্তবায়ন। এর আগের ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ লাখ ৭ হাজার ৮৫ কোটি টাকার এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছিল। ওই অর্থবছরে এডিপিতে প্রথমবারের মতো ১ লাখ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছিল। সেই রেকর্ড বাস্তবায়নকে ছাড়িয়ে এবারের প্রাথমিক হিসাবে সৃষ্টি হয়েছে দেড় লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি খরচের নতুন রেকর্ড। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বড় আকারের এডিপি বাস্তবায়নের সক্ষমতা নিয়ে সংশয় ছিল। এ কারণেই বাস্তবায়নের গতি বাড়াতে বছরজুড়ে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে, প্রকল্প পরিচালক এবং বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে দেয়া হয়েছে নানা নির্দেশনা। এ সব উদ্যোগ আখেরে কাজে দিয়েছে। যদিও এবার শতভাগ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। তবে তা শতাংশের হিসাবে বিগত বছরগুলোর তুলনায় ভাল অবস্থানে রয়েছে। সদ্য শেষ হওয়া অর্থবছরের মূল এডিপির আকার ছিল ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৪ কোটি টাকা, যা পরবর্তীতে কিছুটা কমিয়ে সংশোধিত এডিপিতে ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা করা হয়। শতাংশের হিসেবে সংশোধিত এডিপির প্রায় ৯৪ শতাংশ (৯৩.৭১ শতাংশ) বাস্তবায়ন হয়েছে যা গতবারের চেয়ে বেশি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়নের এ হার ছিল প্রায় ৯০ শতাংশ (৮৯.৭১ শতাংশ)। বছর শেষে এডিপির জন্য বরাদ্দ অর্থ যতটা খরচ করা যায়, সেটাই এডিপির প্রকৃত বাস্তবায়ন। এবার এডিপি বাস্তবায়নে যে রেকর্ড হতে যাচ্ছে, সেই আভাস অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস পেরুনোর পরই দিয়েছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী। গত ডিসেম্বরে তিনি বলেছিলেন, বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এডিপি বাস্তবায়নে নতুন রেকর্ড হবে। মঙ্গলবার এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, অর্থবছরের শুরু থেকেই এডিপি বাস্তবায়নে কৌশল নির্ধারণে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই আলোকে ঠিক করা হয় কৌশল। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ও সমন্বয় সাধন করা হয়েছে। এর ফল পাওয়া গেছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের চেয়ে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা বেশি ব্যয় হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, এক যুগ আগেও সারা অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ২৩ হাজার কোটি টাকার মতো। এই সরকারের আমলে এডিপিতে প্রথমবারের মতো ৫০ হাজার কোটি টাকা ও ১ লাখ কোটি টাকা খরচের মাইলফলক অর্জন করা গেছে। শুধু অর্থ খরচ নয়, এই খরচের ক্ষেত্রে কাজের গুণগতমান যাতে ঠিক থাকে সে দিকেও আমরা কঠোরভাবে মনোযোগ দিচ্ছি। কারণ এই অর্থ জনগণের, যার একটি পয়সাও অপচয়ের সুযোগ নাই। মন্ত্রী বলেন, এডিপির শতভাগ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ইতোমধ্যে নেয়া হয়েছে। আরএডিপি বলে কিছু থাকবে না। বাস্তবায়নের যতটুকু সামর্থ্য আছে সেই অনুযায়ী এডিপির ব্যয় প্রাক্কলন করা হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে গতি আনার জন্য সংস্কার প্রয়োজন। এটি চলমান রয়েছে। আর প্রকল্পের গুণগত মান নিশ্চিত করার জন্য আইএমইডির সক্ষমতা আরও বাড়ানো হচ্ছে। এডিপি বাস্তবায়নের হিসাব তৈরি করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। জানতে চাইলে আইএমইডি সচিব মফিজুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, বছরজুড়েই তৎপরতা ছিল আইএমইডির। আগে এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত বাছাই করা কিছু প্রকল্প মনিটরিং করা হতো, এতে সার্বিকভাবে প্রকল্প তথা এডিপি বাস্তবায়নের গতিতে প্রভাব কম পড়ত। এখন শতভাগ প্রকল্প মনিটর করা হয়। এবার আমরা মূল এডিপির ১ হাজার ৩০৮ প্রকল্পের সবগুলোই মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন করেছি। বাস্তবায়ন হার বৃদ্ধিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে আমি মনে করি। বাস্তবায়নে শীর্ষে বিদ্যুত বিভাগ ॥ ৫৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বিপরীতে এবার আরএডিপিতে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা। আইএমইডির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিদায়ী অর্থবছরে প্রকল্প বাস্তবায়নে এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে অর্থ খরচের দিক থেকে শীর্ষে ছিল বিদ্যুত বিভাগ। এডিপিতে থাকা ১১৩ প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ২৯২ কোটি টাকার। বরাদ্দকৃত সমস্ত অর্থই বিদ্যুত বিভাগ খরচ করতে পেরেছে। এর বাইরে থেকে বরাদ্দ থেকে আরও প্রায় ৯৩৫ কোটি টাকা খরচ করেছে সংস্থাটি। সব মিলিয়ে বিদ্যুত বিভাগের বাস্তবায়ন হার দাঁড়িয়েছে ১০৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন হার ১০৩ দশমিক ১১ শতাংশ (থোক বরাদ্দসহ)। তৃতীয় স্থানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের বাস্তবায়ন হার ১০১ দশমিক ৮০ শতাংশ। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ ১০০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। বিদ্যুতসহ চারটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবার বরাদ্দের বিপরীতে শতভাগ বাস্তবায়ন করতে পেরেছে। শীর্ষ দশের মধ্যে থাকা অন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো হলোÑ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় (৯৯ দশমিক ৮১ শতাংশ), কৃষি মন্ত্রণালয় (৯৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ), প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় (৯৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ), স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ (৯৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় (৯৯ দশমিক ০৬ শতাংশ) এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ (৯৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ)। এ ছাড়াও আরও ১৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এডিপিতে ভাল পারফর্মেন্স দেখিয়েছে। প্রকল্পের বিপরীতের এদের অর্থ খরচের বাস্তবায়ন হার ৯০ থেকে ৯৯ শতাংশের মধ্যে। সবার পেছনে জাতীয় সংসদ সচিবালয় ॥ অর্থবছর শেষ হয়ে গেলেও অন্তত ৮ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তাদের সংশোধিত বরাদ্দের অর্ধেক খরচ করতে পারেনি। এই মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর খরচ বরাদ্দের আড়াই থেকে পঞ্চাশ শতাংশের মধ্যে। এই তালিকায় শীর্ষে থাকা জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের ২টি প্রকল্পে সংশোধিত এডিপিতে সাড়ে ১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। ১২ মাসে খরচ হয়েছে মাত্র ৪২ লাখ টাকা। এ তালিকার অন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো হলোÑ অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (২৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ), বাণিজ্য মন্ত্রণালয় (৩১ দশমিক ৩০ শতাংশ), নির্বাচন কমিশন সচিবালয় (৪০ দশমিক ৩৬ শতাংশ), আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (৪৫ দশমিক ০৭ শতাংশ)।
×