ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সুবিধাবঞ্চিতদের পাশে দাঁড়াল ‘সম্ভাবনা’

ঈদের নতুন পোশাক ও উপহার পেয়ে ওরা খুশি

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ১৩ জুন ২০১৮

ঈদের নতুন পোশাক ও উপহার পেয়ে ওরা খুশি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে নগরীর ৫০০ জন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মধ্যে ঈদের নতুন পোশাক বিতরণ করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সম্ভাবনা’। ১০ জুন ধানমণ্ডি রবীন্দ্র সরোবর থেকে শুরু হয়েছে ‘পুষ্পকলি ঈদ উৎসব-২০১৮’। চলবে ১৩ জুন পর্যন্ত। এ বছর ঢাকার ছয়টি অঞ্চলের প্রায় পাঁচশতাধিক সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের নিয়ে পালন করা হচ্ছে এ উৎসব। উৎসবে সম্ভাবনা পরিচালিত পুষ্পকলি স্কুলের ধানম-ি, মিরপুর ও কালশি শাখার ৩০০ সুবিধা বঞ্চিত শিশুসহ বিমান বন্দর রেলস্টেশন, কড়াইল ও তেজগাঁও রেলস্টেশন এই ছয়টি স্পটের প্রায় পাঁচ শতাধিক সুবিধা বঞ্চিত শিশুকে ঈদের পোশাক, সেমাই, চিনি, দুধ, পোলাউ এর চাল ও কিশমিশ প্রদান করা হচ্ছে। ‘সম্ভাবনা’র সভাপতি রবিউল ইসলাম রবিন জনকণ্ঠকে বলেন, ‘২০১১ সালে ১১ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সম্ভাবনা প্রতিষ্ঠা করা হয়। ‘বঞ্চিত শিশু ও আগামীর সম্ভাবনা’ এই সেøাগানকে সামনে রেখে পথশিশুদের নিয়ে গড়ে তুলতে চায় সম্ভাবনার এক বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে সংগঠনটি পথশিশুদের জন্য রাজধানীর মিরপুরের শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়াম, ধানম-ির রবীন্দ্র সরোবরে পুষ্পকলি স্কুল এর মাধ্যমে চালাচ্ছে তাদের অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম। যেখানে শিশুদের সাধারণ শিক্ষা কর্যক্রমের পাশাপাশি নৈতিক ও কর্মমুখী শিক্ষা প্রদান করা হয়। এ ছাড়া এ বছর কালসির গুদারঘাট বস্তিতে ৬০ জন সুবিধা বঞ্চিত শিশু নিয়ে চলছে পুষ্পকলি স্কুলের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম। পুষ্পকলি স্কুলের তিনটি শাখায় প্রায় ৩০০ জন পথশিশুর পাঠদান করা হয়। এ ছাড়া সম্পূরক শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ১০ জন শিক্ষার্থীর লেখাপড়া খরচ, শিক্ষা উপকরণ এবং টিউশন প্রদান করা হয়।’ এর আগে ১ জুন সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের মধ্যে ঈদ সামগ্রী বিতরণ করেছে প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশন নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। প্রায় দুই শ’ সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের মধ্যে ঈদের উপহার হিসেবে নতুন জামা, সেমাই, চিনি ও মেহেদি তুলে দেয়া হয়েছে। এ সময় নতুন জামা পেয়ে শিশুরা মেতে ওঠে উচ্ছ্বাসে। সংগঠনটির পক্ষে বেগুনবাড়িতে গড়ে তোলা প্রচেষ্টা স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী লাকী। তার বাবা আলাউদ্দিন সাবান ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন। আর মা গার্মেন্টসে। লাকি জানায়, গেল জানুয়ারিতে সে প্রচেষ্টায় ভর্তি হয়েছে। ঈদ সামগ্রী হাতে পাওয়ার পর শিশুটি জানায়, ‘জামাকাপড় নিয়ে চাঁন রাতে দেশে যামু।’ বিভিন্ন সময়ে স্কুলে দেয়া খাবার ও নানা উপহার পেয়ে সে খুব খুশিও। ওই স্কুলটিতে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে রামিম। তার মা বাসা বাড়িতে রান্না-বান্না করেন। বাবা কী করেন জানতে চাইলে শিশুটি বলতে পারেনি। শিশুটির ভাষায়, ‘স্যারেরা অনেক কিছু দেয়। ভাত দেয়। আরও অনেক কিছু।’ জানাল সে তিন বছর ধরে প্রচেষ্টায় পড়ছে। ঈদের উপহার পেয়ে ও ভাল মানের ইফতার করতে পেরে সে খুব আনন্দিত। তিন বছর ধরে তানিয়াও পড়ছে প্রচেষ্টায়। তৃতীয় শ্রেণীর এই শিক্ষার্থী জানায়, এবারের ঈদে সে জামা কাপড় সেমাই চিনি ও মেহেদি পেয়েছে। প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশনের সহউদ্যোক্তা পাভেল বাবু জনকণ্ঠকে বলেন, ‘টানা ছয় বছর ধরে আমরা এই আয়োজন করে আসছি। আমাদের সদস্য ও বিত্তবানদের সহায়তায় এটি হয়ে আসছে। সমাজের অবহেলিত বাচ্চাগুলোর জন্য যাতে কিছু করতে পারি সেজন্যই আমাদের এই উদ্যোগ। এসব শিশুরাও অনেক বড় স্বপ্ন দেখে। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্বপ্ন বাস্তবায়নই আমাদের লক্ষ্য।’ এ ছাড়াও সম্প্রতি রাজধানীর কলাবাগানে ‘লেন্ড এ হ্যান্ড সোসাইটি’র উদ্যোগে পথ শিশুদের সঙ্গে ইফতার কারার পাশাপাশি শিশুদের মধ্যে ঈদের নতুন কাপড় বিতরণ করে। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সামিউল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, এ বছর ৫০ জন পথ শিশুর মাঝে ঈদের কাপড় বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া এতিমখানায়ও আমরা কাপড় বিতরণ করেছি। ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে ঈদের কাপড় বিতরণ চলছে। কোথাও কোথাও বিতরণ কার্যক্রম এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, ঈদের নামাজের পূর্ব পর্যন্ত ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি চলতেই থাকবে। প্রায় সবাই সাধ্যানুযায়ী সমাজের অবহেলিত অংশের দিকে সুদৃষ্টিতে তাকাবে।
×