ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীসহ সারা দেশে বন্দুকযুদ্ধে নিহত ১১

প্রকাশিত: ১৭:৫৭, ২৯ মে ২০১৮

রাজধানীসহ সারা দেশে বন্দুকযুদ্ধে নিহত ১১

অনলাইন ডেস্ক ॥ রাজধানীসহ সারা দেশে মাদকবিরোধী অভিযানকালে সোমবার দিবাগত রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত চলা বন্দুকযুদ্ধে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে আরো ১১ জন নিহত হয়েছেন। পুলিশের দাবি, নিহতরা সবাই মাদক ব্যবসায়ী। তাদের নামে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এ অভিযানে কুমিল্লায় দুজন, ভালুকায় একজন, যশোরে দুজন, সাতক্ষীরায় একজন, কুষ্টিয়ায় দুজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন, নারায়ণগঞ্জে একজন ও ঠাকুরগাঁওয়ে একজন নিহত হয়েছেন। রাজধানী : দক্ষিণখানে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে একজন নিহত হয়েছেন। সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে দক্ষিণখানে আশিয়ান সিটির মাঠে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সুমন ওরফে খুকু সুমন (৩৫) ওই এলাকার একজন চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা । পুলিশের দাবি নিহত সুমনের বিরুদ্ধে থানায় মাদক আইনের চারটি মামলা রয়েছে। ঢকা মহানগর পুলিশের উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার নূরুল আলম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশের একটি দল রাতে আশিয়ান সিটির মাঠে অভিযানে যায়। পুলিশ সেখানে গেলে মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি করে। পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। কিছুক্ষণ পর তারা পিছু হটলে ঘটনাস্থলে খুকু সুমনের লাশ পাওয়া যায়। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, চারটি ককটেল এবং এক হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। কুমিল্লা : মুরাদনগরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে দুজন মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এ সময় তিনজন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন। সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার গুঞ্জর বেড়িবাঁধ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- উপজেলার পৈয়া পাথর এলাকার আব্দুস সামাদের ছেলে লিটন ওরফে কানা লিটন (৩৬) ও বাখরনগর এলাকার সহিদ মিয়ার ছেলে বাতেন মিয়া (৩৪)। মুরাদনগর থানার ওসি মনজুর আলম জানান, মুরাদনগর উপজেলায় মাদকের চালান পাচার হচ্ছে- এমন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশের একটি দল গুঞ্জর বেড়িবাঁধ এলাকায় পৌঁছায়। এ সময় মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি ছোড়ে, পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। পরে ঘটনাস্থল থেকে মাদক ব্যবসায়ী লিটন ও বাতেনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৪০০ বোতল ফেনসিডিল, একটি এলজি, একটি ছুরি ও একটি কার্তুজের খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। কানা লিটনের বিরুদ্ধে থানায় সাতটি মামলা ও বাতেনের বিরুদ্ধে আটটি মামলা রয়েছে। এ ঘটনায় এসআই মোজাম্মেল, এএসআই মাসুদুর রহমান ও রোকন আহত হয়েছেন। ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও থানা পুলিশের যৌথ অভিযানকালে বন্দুকযুদ্ধে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ। সোমবার দিবাগত রাত সোয়া ২টার দিকে উপজেলার পাড়াগাঁও গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ওসিসহ দুই পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। নিহত মাদক ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান মিজান (৪৫) ভালুকা উপজেলার কাচিনা গ্রামের (দক্ষিণপাড়া) মৃত নূরুল ইসলামের ছেলে। পুলিশের দাবি, নিহত মিজান একজন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও একাধিক ডাকাতি মামলার আসামি ছিল। ভালুকা মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মাজাহারুল ইসলাম বলেন, উপজেলার পাড়াগাঁও চটানপাড়া সামাদ ফকিরবাড়ি কাছে কতিপয় ব্যক্তি মাদক ভাগাভাগি করছে এমন সংবাদ পেয়ে পাড়াগাঁও এলাকায় পুলিশ অভিযান চালায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেলসহ এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। আত্মরক্ষার জন্য যৌথবাহিনীর সদস্যরাও পাল্টা গুলি ছুড়লে অন্য আসামিরা পালিয়ে যান। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মিজানকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে একশ গ্রাম হেরোইন, একশ পিস ইয়াবা, ৩টি গুলির খোসা, একটি রামদা, একটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত মিজানের নামে ভালুকা মডেল থানায় মাদক, অস্ত্র, ডাকাতিসহ ৮-৯টি মামলা রয়েছে। এ ঘটনায় ভালুকা মডেল থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) আবুল কালাম আজাদ ও এএসআই শাহ আলম আহত হন। আহত পুলিশ সদস্যদের ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। যশোর : যশোরে দুদল মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে গোলাগুলিতে দুজন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার ভোরে যশোর শহরের চাঁচড়া রায়পাড়া এলাকায় এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। নিহত দুই মাদক ব্যবসায়ী হলেন- যশোর শহরের রায়পাড়া এলাকার মানিক ও মণ্ডলগাতি এলাকার আসর আলী। যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি কেএম আজমল হুদা জানান, ভোররাতে যশোর শহরের চাঁচড়া রায়পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকায় দুদল মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দুজনকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে আসে। হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। নিহত মানিক ও আসর আলী চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। পুলিশ নিহত দুজনের লাশ উদ্ধারের পাশাপাশি ঘটনাস্থল থেকে ৬০০ পিস ইয়াবা, দুটি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি ও ৫টি গুলির খোসা উদ্ধার করেছে। নিহত দুজনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য যশোর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার কলারোয়ায় আনিসুর রহমান নামের এক ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, নিহত ব্যক্তি মাদক ব্যবসায়ী। আনিসুর কলারোয়ার ইয়াবা সম্রাট নামে পরিচিত। মাদকের ভাগাভাগি নিয়ে সংঘর্ষের জেরে গোলাগুলির মধ্যে তার মৃত্যু হয়। তবে নিহত ব্যক্তির স্ত্রী নাজমা বেগমের দাবি, তার স্বামীকে সোমবার সকালে বাড়ি থেকে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে গেছে সাদা পোশাকধারীরা। পরে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। নিহত আনিসুর রহমান (৪০) কলারোয়ার পাকুড়িয়া গ্রামের সুরত আলির ছেলে। কলারোয়া থানার ওসি বিপ্লব কুমার নাথ জানান, রাত সোয়া ২টায় তার কাছে খবর আসে দেয়াড়া ইউনিয়নের পিপলাপোলের মাঠে মাদক চোরাচালানিদের দুটি বিবদমান গ্রুপ মাদক ভাগাভাগি নিয়ে নিজেদের মধ্যে গোলাগুলি করছে। এর ভিত্তিতে খোরদো পুলিশ ক্যাম্পের উপপরিদর্শক (এসআই) সিরাজুল ইসলাম একদল পুলিশ সদস্য নিয়ে সেখানে যায়। এ সময় পুলিশ তিন রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। কিছুক্ষণ পর গোলাগুলি থেমে গেলে ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে নেয়ার পর দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। তার বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা জেলায় ১০টি মামলা রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ান শুটারগান জব্দ করা হয়েছে। এদিকে নিহতের স্ত্রী নাজমা বেগম জানান, তার স্বামীকে সোমবার সকালে বাড়ি থেকে সাদা পোশাকধারীরা তুলে আনার পর তিনি কলারোয়া থানা ও খোরদো পুলিশ ক্যাম্পে খোঁজ নিলে জানানো হয় পুলিশ তাকে আটক করেননি। তিনি বিষয়টি নিয়ে প্রথমে কলারোয়ায় ও পরে সাতক্ষীরায় একটি সংবাদ সম্মেলন করার চেষ্টা করেন। রাতে কলারোয়া থানায় একটি জিডি করতে গেলে পুলিশ তাও নেয়নি। পুলিশ বলেছে, একটু দেরি করতে। তবে ওসি বলেন, তিনি এ সম্পর্কে আর কিছু জানেন না। নিহত আনিসুরের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় মাদক ও ডাকাতিসহ আট মামলার আসামি জনি মিয়ার (৩০) গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে একটি দেশীয় পাইপগান, একটি কার্তুজ, দুটি ছোরা, একটি চাপাতি উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার দিনগত রাত ২টার দিকে পৌর শহরের খালাজোড়া এলাকা থেকে ওই মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত জনি কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলার খাইয়ার গ্রামের ফিরোজ মিয়ার ছেলে। পুলিশের দাবি, ডাকাতির মালামাল ভাগাভাগির বিরোধে সহযোগীদের গুলিতে জনি নিহত হয়েছেন। আখাউড়া থানার ওসি মোশারফ হোসেন তরফদার জানান, রাতে ডাকাতির মালামাল ও মাদক ব্যবসার বিরোধ কেন্দ্র করে জনি এবং তার সহযোগীদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। পরে খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পৌঁছে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় জনির মরদেহ উদ্ধার করে। নিহত জনির বিরুদ্ধে মাদক, ডাকাতি ও চোরাচালানসহ আখাউড়া ও অন্যান্য থানায় ৮টি মামলা রয়েছে। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান ওসি মোশারফ। কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের শেহালা মাঠে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে শীর্ষ দুই মাদক বিক্রেতা মুকাদ্দেস আলী (৪২) ও ফজলুর রহমান ওরফে টাইটেল (৪৮) নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় ৩ পুলিশের সদস্য আহত হয়েছেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র, গুলি ও বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার করেছে। দৌলতপুর থানার ওসি (তদন্ত) আজগর আলী জানান, একদল মাদক বিক্রেতা দৌলতপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের শেহালা মাঠে মাদক ক্রয় বিক্রয় করছে এমন গোপন সংবাদ পেয়ে দৌলতপুর থানা পুলিশের টহল দল (মঙ্গলবার রাত) গতরাত ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে অভিযান চালায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক বিক্রেতারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। জবাবে পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে বন্দুকযুদ্ধে দুইজন মাদক বিক্রেতা গুলিবিদ্ধ হয়। পরে তাদের উদ্ধার করে দৌলতপুর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক গুলিবিদ্ধ মাদক বিক্রেতাদের মৃত ঘোষনা করেন। এ ঘটনায় পুলিশের এসআই ফিরোজ আলম, এসআই আব্দুর রাজ্জাক ও কনষ্টেবল সজিত কুমার আহত হয়েছেন বলে পুলিশ দাবি করেছেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি দেশীয় তৈরী বন্দুক, ৫রাউন্ড গুলি, একটি পিস্তুলের ম্যাগজিন ও ২৫০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে। নিহত মাদক বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা ও ছিনতাইয়ের সহ ৮টি করে মামলা রয়েছে। নিহতরা উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের সীমান্ত সংলগ্ন মুন্সিগঞ্জ গ্রামের রেজাউল ইসলামের ছেলে মুকাদ্দেস আলী ও প্রাগপুর বাজারের মৃত ইয়াকুব আলীর ছেলে ফজলুর রহমান ওরফে টাইটেল। পুলিশ নিহতদের লাশ উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরন করেছে। ঠাকুরগাঁও : জেলার হরিপুর উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে হারুন (৪৫) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার ভোরে উপজেলার শীতলপুর এলাকায় এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। নিহত হারুন হরিপুর উপজেলার শীতলপুর এলাকার মৃত আব্দুল আজিজের ছেলে। হরিপুর থানার ওসি রুহুল কুদ্দুস বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ হরিপুর উপজেলার শীতলপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি চালান আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। পরে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ মাদক ব্যবসায়ী হারুনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের বিরুদ্ধে হরিপুর থানায় মাদকের একাধিক মামলা রয়েছে বলেও জানান ওসি। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জে মাদকবিরোধী অভিযানকালে বন্দুকযুদ্ধে একজন নিহত হয়েছেন।
×