ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে রাজশাহী জেলা পরিষদের কার্যক্রম

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ৫ মে ২০১৮

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে রাজশাহী জেলা  পরিষদের কার্যক্রম

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ সাত বছরেরও বেশি সময় আগে রাজশাহী জেলা পরিষদের পুরনো ভবনটি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত নতুন ভবন হয়নি। এরপর পরিত্যক্ত এক জীর্ণ ভবনকেই বানানো হয়েছে জেলা পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয়। সে ভবনের পলেস্তরাগুলো এখন খসে খসে পড়ছে। অফিসের ভেতরেই মাঝে মাঝে ঢুকে পড়ছে সাপ, ব্যাঙ, পোকামাকড়। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা বলছেন, এর চেয়ে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ও ভাল। এখন প্রতিদিনই প্রাণের শঙ্কা নিয়ে এখানে অফিস করতে হচ্ছে তাদের। এই বুঝি পায়ের নিচে পড়ল সাপ! এই বুঝি ভেঙে পড়ল ছাদ! আগে বৃষ্টি হলে বাইরের পানি গিয়ে ঢুকত অফিসের ভেতর। এখন ছাদ চুইয়েও পড়ছে পানি। এতে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে মূল্যবান অনেক ফাইলপত্র। রাজশাহী জেলা পরিষদ কার্যালয় সূত্র জানায়, ১৮৮৫ সালে রাজশাহী জেলা পরিষদ গঠন করা হয়। জেলা পরিষদ কার্যালয়ের জন্য পরের বছর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরের পাশে একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ করা হয়। ভবনটি সরকারীভাবে পরিত্যক্ত ঘোষণা করার পর ২০১০ সালে ভেঙ্গে ফেলা হয়। এরপর কোর্ট এলাকায় জেলা পরিষদ কর্মকর্তাদের আবাসিক ভবনে কার্যালয় স্থানান্তর করা হয়। এর কিছু দিন পর নগরীর শ্রীরামপুর এলাকায় পরিত্যক্ত একতলা একটি ভবনকে জেলা পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয় করা হয়। এটি আগে জেলা পরিষদের একজন সহকারী প্রকৌশলীর আবাসিক ভবন ছিল। আওয়ামী লীগ নেতা মাহাবুব জামান ভুলু প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর এই ভবনে জেলা পরিষদ কার্যালয় স্থানান্তর করা হয়। এরপর তিনি দায়িত্ব পালন করেন পাঁচ বছর। কিন্তু তিনি নতুন ভবন নির্মাণ করতে পারেননি। পরে ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের আরেক নেতা মোহাম্মদ আলী সরকার। তিনিও নতুন ভবন নির্মাণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত নতুন ভবন হয়নি। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে আছে নতুন ভবন নির্মাণের প্রকল্প। ফলে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়েই অফিস করছেন জেলা পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। জেলা পরিষদের হিসাবরক্ষক আবজালুর রহমান বলেন, কয়েকদিন আগে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস কক্ষের সামনে একটি সাপ ঘোরাফিরা করছিল। এরপর গত বুধবার সকালে চেয়ারম্যানের চেয়ারের নিচে আরেকটি সাপ পাওয়া যায়। চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার তখন কয়েকজন সদস্যকে নিয়ে অফিসেই ছিলেন। তারা সাপটিকে দেখে চিৎকার শুরু করেন। পরে কর্মচারীরা গিয়ে সাপটিকে মারেন। এর আগে গত ২০ মার্চ ভোরে চেয়ারম্যানের অফিস কক্ষের সামনের অংশে ভবনের ছাদ থেকে পলেস্তরা খসে পড়ে। মূল ছাদ থেকে প্রায় চার ফুট মতো জায়গা থেকে এই পলেস্তরা খসে পড়ে। এতে ছাদের নিচে থাকা টাইলসের ছাদেরও প্রায় ১০ ফুট অংশ খুলে পড়ে। চেয়ারম্যানের দফতরের সামনের এই ছাদের নিচে অফিস চলাকালীন অনেকেই অবস্থান করেন। কয়েক মাস আগে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আলী আহমেদ রাজশাহী আসেন। সেদিন নগরীর কোর্ট এলাকায় জেলা পরিষদের স্থায়ী ভবন নির্মাণের জন্য নির্ধারিত জায়গাটি তিনি পরিদর্শন করেন। তখন তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, শীঘ্রই শুরু হতে যাচ্ছে ৯ তলাবিশিষ্ট জেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ। এতে ব্যয় হবে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। তিনি জানান, ভবন নির্মাণে ভূমি জরিপ এবং মাটি পরীক্ষা করা হয়েছে। রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) অনুমোদন করা নক্সাও মন্ত্রণালয়ে পৌঁছেছে। আগামী জুন নাগাদ দরপত্র আহ্বান করা যাবে বলেও আশা-প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ে প্রকল্পটি পাসই হয়নি। বরাদ্দ মেলেনি প্রয়োজনীয় অর্থেরও। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার বলেন, জরাজীর্ণ বর্তমান কার্যালয়টি অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। সামান্য বৃৃষ্টি হলেই ভবনটি ডুবে যায় পানিতে। আর সেই পানির সঙ্গে ঢোকে সাপ, ব্যাঙ। তাতে আতঙ্কিত থাকেন তারা সবাই। তিনি ভবন নির্মাণের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় কাজটি এগোচ্ছে না। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে এ নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
×