ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

শুরু হয়েছে খাল খনন, সমাধান ক্রমশ হবে দৃশ্যমান ॥ চউক চেয়ারম্যান

অল্প বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় চট্টগ্রাম মহানগরী

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ৫ মে ২০১৮

অল্প বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় চট্টগ্রাম মহানগরী

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম নগরী গত কয়েক বছর ধরে অল্প বৃষ্টিতে তলিয়ে যায়। শুধু নিচু এলাকাই নয় জিইসি- দামপাড়া মোড়ের মতো উঁচু এলাকাও ডুবে একাকার। এর কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ষোলশহর এলাকার চশমা খাল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নের গতিধারায় চট্টগ্রামকে প্রধান্য দিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর জলবদ্ধতা দূরীকরণে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প একনেকে অনুমোদন দিয়েছেন গত বছরের ৯ আগস্ট। তবে এর মধ্যে সরকার থেকে বরাদ্দ প্রাপ্ত ৫শ’ কোটি টাকার কাজে নেমেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)। চউকের তত্ত্বাবধানে এই মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর। ২০২০ সালের ৩০ জুন এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। আগামী ৫ বছরের উন্নয়নে চট্টগ্রাম শহর ৫০ বছর এগিয়ে যাবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন চউক চেয়ারম্যান। চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ১২টি খালের পুনঃখনন ও সম্প্রসারণ এবং সংস্কারের মাধ্যমে এই বছর আংশিক জলাবদ্ধতা থেকে নগরবাসীকে মুক্তির চেষ্টা করছে চউক। গত শনিবার সকালে চশমা খালের মুখ ভরাট হয়ে যাওয়া ও ময়লা আবর্জনা উত্তোরণের মধ্যদিয়ে সেনাবাহিনী কাজ শুরু করেছে। ২টি এক্সেভেটর দিয়ে খাল থেকে মাটি উঠিয়ে তা সাময়িক সময়ের জন্য ফুটপাথ ও সড়কের পাশে রাখা হয়। দিন শেষে রাতের মধ্যেই সেগুলো আবার অন্যত্র সরিয়ে ফেলতে ডাম্পট্রাকের মাধ্যমে নেয়া হচ্ছে। সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের নির্দেশনা মতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রা লিমিটেড এবং করিম গ্রুপের লোকজন ও মেশিনারিজ ব্যবহার হচ্ছে। একনেকে অনুমোদন হওয়া ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার এ মেগা প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে সিজিআইএস নামের একটি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের পক্ষ থেকে মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে আর অর্থায়ন করছে চউক। যেসব এলাকায় অল্প বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা দেখা যায় সেসব এলাকায় আগে ভাগেই কাজ শুরু হচ্ছে। বৃহস্পতিবার প্রত্যক্ষভাবে দেখা গেছে, প্রায় ১৫ ফুট গভীরের চশমা খালের করুন দশা। প্রায় ভরাট হয়ে গেছে খালটি। ত্রিমুখী এই খালের ষোলশহর মোড় এলাকায় কাজ চলছে দ্রুততার সঙ্গে। আবাসগৃহের বর্জ্য, পলিথিন আর পাহাড়ের মাটিতেই পুরে গেছে চশমা খাল। এই খালের কারণেই গত কয়েক বছর ধরে কয়েক ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতে ডুবে একাকার। ষোলশহর থেকে নগরীর বহদ্দারহাট পর্যন্ত তলিয়ে যাওয়ার পেছনে মূল বায়জিদ ও খুলশী এলাকার পাহাড় খেকোরা নির্বিচারে রাতের আঁধারে পাহাড় কেটে মাটি খালের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন হাইরাইজ বিল্ডিংয়ের পাইলিংয়ের সিমেন্ট মিশ্রিত পানিও গড়াচ্ছে এই খাল দিয়ে। পলি মিশ্রিত মাটি ক্রমশ এই খালকে ভরাট করছে। কিন্তু পরিবেশ অধিদফতরসহ বিভিন্ন পরিবেশবাদী এনজিও সংস্থাগুলোও কোন দায়িত্ব পালন করছে না। এদিকে, নগরীর ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে প্রথমে ৩০ ওয়ার্ডের খাল ও বড় নালা পরিষ্কারের মধ্য দিয়ে এথম ধাপের কাজ শেষ হবে। তবে চশমা খালের আওতায় থাকা ষোলশহর ২নং গেট থেকে বহদ্দারহাট বাসটার্মিনাল, ষোলশহর রেলগেট সংলগ্ন বাজার থেকে ষোলশহর আহম্মদীয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসা এলাকা রয়েছে। এরপর আগ্রাবাদ, হালিশহর, দক্ষিণ হালিশহর, খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই, বাকলিয়া, চান্দগাঁওসহ নিচু এলাকার খাল ও নালাসহ পর্যায়ক্রমে বাকি ১১টি ওয়ার্ডের নালা, খাল-বিল পরিষ্কার করা হবে। প্রকল্পের চলমান কাজ প্রসঙ্গে চউক চেয়ারম্যান আব্দুচ সালাম জনকণ্ঠকে বলেন, চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা দ্রুত নিরসনে কাজ শুরু হয়েছে চশমা খাল থেকে মাটি ও ময়লা আবর্জনা পরিষ্কারের মাধ্যমে। পাহাড়ের মাটি আর ময়লা আবর্জনায় ভরাট হয়ে গেছে নগরীর ১২টি খাল। এসব খালকে আগের পর্যায়ে আনতে আর খালের গভীরতা পুনরুদ্ধার করতে এক্সেভেটর ব্যবহার করা হচ্ছে। জনবান্ধব সরকার জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। কিন্তু বর্ষা মৌসুম অতিসন্নিকটে হওয়ায় চলতি বছর এর পুরো সমাধান হবে না। সরকারের পক্ষ থেকে প্রথম পর্যায়ে ৫শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তা দিয়ে কাজ শুরু হযেছে। সেনাবাহিনী পুরো প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করবে। গত ২৮ এপ্রিল থেকে ষোলশহর ২নং গেট এলাকার চশমা খালকে পুনঃখননের মধ্য দিয়ে এ কাজের সূত্রপাত হয়। এ কাজ সঠিক ও সুচারুরূপে বাস্তবায়ন করতে গত ৯ এপ্রিল সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সঙ্গে চউকের চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছিল। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ৯ আগস্ট এই মেগা প্রকল্পের অনুমোদন হয় একনেকে।
×