ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

স্বামীর কবর ছুঁয়ে ২২ বছর

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ২৮ এপ্রিল ২০১৮

স্বামীর কবর ছুঁয়ে ২২ বছর

স্বামীর মৃত্যু হয়েছে ২২ বছর আগে। মৃত্যুর পর থেকেই স্বামীর কবর আঁকড়ে আছেন স্ত্রী আমেনা বেগম। তার বয়স এখন ৭১ বছর। এই বয়সেও স্বামীর কবর ঘিরেই তার বসবাস। টানা ২২ বছর ধরে সেখানেই রয়েছেন তিনি। সারাজীবন সেখানেই কাটাতে চান আমেনা। স্বামীর মৃত্যুর পর টানা সাত বছর রাতদিন কবরের পাশে থাকতেন আমেনা। তবে এখন রাতে মেয়ের বাড়িতে কাটালেও সকাল হলেই চলে আসেন কবরের পাশে। এভাবে টানা ২২ বছর চলছে তার। একদিনেও জন্য ভুলেননি কবর। সেখানেই বসে থেকে পার করেন সারাদিন। স্বামীর প্রতি ভালোবাসায় এর কারণ বলে মনে করেন স্থানীয়রা। আমেনার বাড়ি রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলার আমরপুর গ্রামে। তার স্বামীর নাম খতের আলী। সাধুর ভক্ত ছিলেন তিনি। এখন তার কবর ঘিরে এলাকায় নাম হয়েছে খাতের সাধুর কবর। অনেকে মাজার হিসেবেও চিহ্নিত করেন খাতেরের এ কবর। কবরটি পাকা করা হয়েছে। এখন লাল কাপড় দিয়ে ঢাকা রয়েছে। এখানে প্রতি সপ্তাহে দুই দিন বাজার বসে। এছাড়া এখানে খাতের সাধুর ভক্তরা প্রতি বছর উরস পালন করেন। সেখানে সারাবছর কবর দেখাশোনা করেন স্ত্রী আমেনা। স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের আমরপুর গ্রামের খাতের সাধু ২২ বছর আগে মারা যান। তাকে তেঁতুলিয়া-বাউসা সড়কের পাশে আমরপুর গ্রামে নিজ জমিতে দাফন করা হয়। এই জমি ওয়াকফ করে দেয়া হয়েছে। খাতের সাধু আগে থেকেই পীরের ভক্ত ছিলেন। ফলে কবরটি পাকা করে দেয়া হয়েছে। কবরের ওপর আধাপাকা ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এই ঘরে দীর্ঘ ২২ বছর যাবত খাতের সাধুর স্ত্রী আমেনা বেগম বসবাস করছেন। স্থানীয়রা জানায়, খাতের সাধুর কোন ছেলে সন্তান নেই। তার তিন মেয়ে। মেয়েদের আশপাশের এলাকায় বিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা এখন তিনবেলা মাকে খাবার দিয়ে যান কবরে এসে। এই খাবার খেয়ে কবরের পাশে তিনি বসবাস করছেন। এলাকাটি এখন খাতের সাধুর মোড় নামে পরিচিতি পেয়েছে। এখানে স্থানীয় লোকজন বাজারও বসিয়েছেন। আমেনা বেগম বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর থেকেই টানা সাত বছর রাতদিন তিনি কাটিয়েছেন কবরের পাশে। কিন্তু এলাকাবাসী ও স্বামীর ভক্তদের অনুরোধে এখন আর রাতে সেখানে থাকেন না। পাশে মেয়ের বাড়িতে শুধু রাত যাপন করেন। তিনি বলেন, প্রতিদিন সকালে ফজরের নামাজের সময় স্বামীর কবরের পাশে চলে আসেন। আর রাতে এশার নামাজ আদায় করে মেয়ের বাড়িতে ফিরে যান। এভাবে চলছে ২২ বছর। জীবনের শেষ পর্যন্ত এভাবেই স্বামীর কবর আকড়ে পার করবেন বলে জানান আমেনা বেগম। খাতের সাধুর মোড়ের গড়ে ওঠা বাজারের ওষুধ ব্যবসায়ী মাহবুর রহমান (৩৬) বলেন, ছোট বেলা থেকেই তিনি আমেনা বেগমকে দেখছেন কবরের পাশে। সারাদিন কবরের পাশে তসবি হাতে বসে থাকেন। বেশির ভাগ সময় থাকেন নীরব। তেমন কথা বলেন না। কেউ কিছু জানতে চাইলে ছোট করে জবাব দেন। এরপর নিজের ধ্যানেই কাটিয়ে দেন সারাদিন। স্থানীয় বাউসা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান শফিক বলেন, মূল রাস্তার পাশে খাতের সাধুর কবর। এটি এখন মাজার হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। এখানে দীর্ঘদিন থেকে আমেনা বেগম বসবাস করছেন। হতে পারে এটি স্বামীর প্রতি তার গভীর ভালোবাসার কারণ। আমেনা এ বিষয়ে মুখ না খুললেও এমনটিই মনে করেন এলাকার লোকজন। এখন দুরের সাধু ভক্তরাও সেখানে ছুটে আসেন। -মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী থেকে
×