ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাণ ফিরেছে রাজশাহীর ঐতিহ্যে

আধুনিকতার মিশেলে দৃশ্যমান প্রাচীন মঠ

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ১৪ এপ্রিল ২০১৮

আধুনিকতার মিশেলে দৃশ্যমান প্রাচীন মঠ

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহী নগরীতে ভারত সরকারের সহযোগিতায় ২২ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলছে। এসব কাজের অনেকটায় এখন দৃশ্যমান। আগামী বছরের শুরুতেই এসব কাজ পুরো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন। এসব কাজের মধ্যে রয়েছে রাজশাহী নগরীর ঐতিহ্যবাহী পুরনো মঠ সংস্কার, লেক সংস্কার, গ্রন্থাগার নির্মাণ ও সড়কের ফুটপাথ সৌন্দর্য বর্ধন। ইতোমধ্যে এসব কাজ শুরু হয়েছে। বেশ কয়েকটি মঠ নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। সম্প্রতি এসব কাজ পরিদর্শনে এসে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। তিনি রাজশাহী নগরীতে ঘুরে ঘুরে ভারতীয় অনুদানে বাস্তবায়নাধীন সব কাজ পরিদর্শন করেছেন। জানা যায়, রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে রয়েছে কয়েকটি প্রাচীন মঠ। এগুলো রাজশাহীর ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। তবে সংস্কারের অভাবে এতদিন জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে ছিল সেগুলো। তবে এবার পাঁচটি মঠে প্রাণ ফিরতে শুরু করেছে। আগের আদলেই নতুনভাবে সংস্কার করা হচ্ছে মঠগুলো। ভারত সরকারের অনুদানের টাকায় রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) মঠগুলোর এই সংস্কার করছে। এরই মধ্যে দুটি মঠের সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে। যুগ যুগ ধরে প্রাচীন এই মঠগুলো অযতœ-অবহেলায় পড়ে থাকায় সেগুলো সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছিলেন রাজশাহীর মানুষ। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক জানান, রাজশাহী সাধারণ গ্রন্থাগার ও পাঁচটি মঠ সংস্কারে ২১ কোটি ২২ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে ভারত সরকার। এর মধ্যে প্রতিটি মঠে খরচ করা হচ্ছে ১৩ লাখ টাকা। একজন ঠিকাদার কাজটি করছেন। এরই মধ্যে দুটি মঠ সংস্কার করা হয়েছে। বাকি তিনটি শেষ হবে মাসখানেকের ভেতর। রাসিক সূত্রে জানা গেছে, নগরীর বিভিন্ন স্থানে ৮-১০টি মঠ রয়েছে। তবে সংস্কার হচ্ছে পাঁচটি। বাকিগুলো নিজস্ব অর্থায়নে সংস্কারের কথা ভাবছে রাসিক। সব মঠ সংস্কার করা গেলে এগুলো পর্যটক টানবে বলেই মনে করছেন নগর সংস্থার কর্মকর্তারা। নগরীর উপশহর সপুরা এলাকার মঠটিতে গিয়ে দেখা যায়, পুরনোর আদলেই নতুন করে সংস্কার করা হয়েছে মঠ। এর পাশাপাশি কিছু কারুকাজও যুক্ত করা হয়েছে। মঠের ওপরের অংশে বসানো হয়েছে পিতলের দৃষ্টিনন্দন মিনার। সূর্যের আলোয় তা চকচক করছে। এভাবে প্রাণ ফিরে পেয়েছে মঠটি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আগে মঠগুলো একেবারেই ভঙ্গুর অবস্থায় পড়ে ছিল। মঠের ইটের ওপর গজিয়ে উঠেছিল নানা প্রজাতির গাছ। মঠটি কখন যেন ভেঙ্গে পড়ে- এ আতঙ্কেই তারা থাকতেন। তবে সংস্কারের পর তাদের সেই ভয় কেটেছে। এখন মঠটি এলাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। হেরিটেজ রাজশাহীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, সবগুলো মঠ সংস্কার করা হলে শুধু মঠেরই নয়, পুরো নগরীর সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। অনেক মঠের আশপাশে অবৈধ বাড়িঘর হয়েছে। সেগুলোও উচ্ছেদ করা প্রয়োজন। তাহলে পর্যটকরা মঠগুলোর সৌন্দর্য ভালভাবে উপভোগ করতে পারবেন। রাসিক সূত্র জানায়, পুরনো অবকাঠামো ঠিক রেখে আধুনিকতার মিশেলে এসব মঠ আবার সংস্কার করে গড়ে তোলা হয়েছে। শুধু মঠ নয়, ভারত সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় এ প্রকল্পের আওতায় নগরীর প্রাচীন মঠ-মন্দির, উপশহর হয়ে সপুরা পর্যন্ত রাস্তাগুলোর আধুনিক মানের উন্নয়ন ও ফুটপাথ নির্মাণ করা হচ্ছে। পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলা হচ্ছে মহানগরের বিভিন্ন স্থানের পুকুরগুলো। বাঁধা হবে পুকুরের পাড়। নগরীর ১৮ কিলোমিটার আধুনিক মানের ফুটপাথ নির্মাণ এ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গত বছরের ২৯ জানুয়ারি রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন ও ভারত সরকারের পক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা এ প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষর করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশ এবং ভারত সরকারের মধ্যে মহানগরীর সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পরিবেশ ও প্রতœতত্ত্ব অবকাঠামোর উন্নতির লক্ষ্যে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, এ প্রকল্পের আওতায় নগরীর পাঁচটি প্রাচীন মঠ ও মন্দির ও নগরীর তালাইমারী এলাকার প্রাচীন একটি গ্রন্থাগার সংস্কার ছাড়াও আধুনিক ফুটপাথ ও জলাধার নির্মাণ করা হচ্ছে। রাসিকের মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, সিটি কর্পোরেশনের আওতায় মোট ৮-১০ টি ছোট-বড় মঠ রয়েছে। সেখানে সনাতন ধর্মের মানুষ তাদের ধর্ম পালন করে আসছিল শত শত বছর থেকে। কয়েকটি সংস্কার করা হলো। বাকিগুলোও পর্যায়ক্রমে সংস্কার করা হবে। মঠের আশপাশে অবৈধ দখল থাকলে সেটাও উচ্ছেদ করা হবে।
×