ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খেলনা বিক্রি করে যাদের জীবন চলে

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ১৪ এপ্রিল ২০১৮

খেলনা বিক্রি করে যাদের জীবন চলে

বৈশাখী মেলায় সরবরাহ বাড়াতে সৈয়দপুরে খেলনা কারিগরদের ব্যস্ততা বেড়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে তাই উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন বাজার ধরতে অবিরত শ্রম দিচ্ছেন মাটি, কাঠ ও প্লাস্টিকের খেলনা তৈরিতে। পাশাপাশি এ উৎসবকে কেন্দ্র করে আগামী চার মাসের আগাম সংসার খরচের সঞ্চয় করছে এ পেশাজীবীরা। জানা যায়, পাকিস্তানী শাসনামল হতে এদেশের বাঙালীদের প্রাণের বৈশাখী উৎসব, ধর্মীয় প্রধান উৎসব ও বিভিন্ন গ্রামীণ মেলায় শিশুদের বিনোদনের চাহিদায় একমাত্র উপকরণ ছিল বিভিন্ন ধরনের মাটি, কাঠ ও প্লাস্টিকের তৈরি সুর-শব্দ সৃষ্টি কারী গাড়ি ও বাদ্যযন্ত্রের খেলনা। যাদের সুর-শব্দে মতোয়ারা হয়ে থাকত শিশুরা। এসব খেলনার মধ্যে বেহালা, টমটম, ঠেলাগাড়ি, ডুগডুগি, হেলিকপ্টার, কেড়কেড়ি গাড়ি অন্যতম। বিশেষ করে বৈশাখী বা শীতকালীন মেলা এবং ধর্মীয় উৎসব পরবর্তী সময় হাট-বাজারে এ সব খেলনা ছিল শিশুদের চাহিদার শীর্ষে। এ জনপদের ব্যবসায়ীরা ওই সময় বগুড়া থেকে এ সকল খেলনা আমদানি করে বিভিন্ন মফস্বল এলাকায় সরবরাহ করত। এ সকল খেলনার চাহিদা দেখে স্বাধীনতার পর শহরের ৭নং ননস্ট্যান্ডার্ড আটকেপড়া পাকিস্তানী ক্যাম্পের সদস্য মোহাম্মদ আসলাম বাড়িতে কাঠ, গরুর গোস্তের ঝিল্লি ও বাঁশের উপকরণ দিয়ে তৈরি করে নিজেই শুরু করলেন এ সকল খেলনার বাজারজাত। এতে দিনে দিনে তার তৈরি খেলনার সুনাম ছড়িয়ে পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর বিভিন্ন বাজারে চাহিদা সৃষ্টি করে। সরবরাহ করা হয় পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট জেলাসহ বিভিন্ন থানার মফস্বল এলাকার হাট-বাজারে। এ ব্যাবসায়ীর দেখাদেখি একই ক্যাম্পের ১০টি পরিবার শুরু করেন খেলনা তৈরির কাজ। আজ তিনি বেচে নেই, তবে তাকে অনুসরণ করে এ পেশায় বিভিন্ন পরিবারের অর্ধশতাধিক মানুষ এখন আত্মনির্ভরশীল হতে চলেছে কাঠ, মাটি ও প্লাস্টিকের তৈরি খেলনা বানিয়ে। সারা বছর খেলনাগুলোর চাহিদা না থাকায় ৩ থেকে ৪ মাস তাদেরকে কর্মহীন কাটাতে হয়। আর দুর্গোৎসব, বান্নি, বৈশাখী কিংবা ঈদের মেলাসহ যে কোন বড় উৎসবকে কেন্দ্র করে এ পেশাজীবীরা ৮ মাসেই ব্যস্ত থাকেন। জাভেদ নামে এক কারিগর জানান, ঈদ উৎসবসহ অন্যন্য বড়-বড় মেলাকে উপলক্ষ করে চাহিদানুযায়ী খেলনা তৈরি করছি। বিভিন্ন খেলনার চাহিদা থাকলেও স্বল্প শ্রম ও উপকরণ মূল্য কম থাকায় শুধু এখন তৈরি করছি কেড়কেড়ি গাড়ি। একটি গাড়িতে কাঁচামালসহ ব্যয় হয় চার টাকা। আর এ সকল গাড়ি বিক্রয় হয় পাইকারি ৬ টাকা ও খুচরা ১৫ টাকা দরে। একটানা শ্রম দিয়ে ৬ থেকে ৭৫০টি গাড়ি তৈরি করে বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাদের কাছে নগদ বিক্রি করছি। একই ক্যাম্পের সেলিম, ফেকু, নাসু, শম্পা, নাসিরসহ সকলের ওস্তাদ আসলামের মেয়ে শবনম এখন এ সকল খেলনা তৈরি করেই চালাচ্ছেন সংসার। গ্রামীণ বৈশাখী মেলায় চাহিদা বেশি থাকায় সারাদিন বিরতিহীন শ্রমে খেলনা তৈরি করছেন। কারণ এ আয় দ্বারা তাদের আগামী চার মাসের সংসারের ব্যয় মজুদ রাখতে হবে। তবে এ খেলনা বানিয়ে কোন রকম জীবিকা চললেও পুঁজির অভাবে এ জনপদের খেলনা শিল্পটির প্রসার ঘটাতে পারেননি এর কারিগররা। তাই তাদের দাবি সরকারী কিংবা বেসরকারী অর্থ বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে আর্থিক সহায়তার। এতে শৈল্পিক ছোয়ায় প্রসারের পাশাপাশি হাজার-হাজার মানুষের সৃষ্টি হতো কর্মসংস্থান। -এম আর মহসিন, সৈয়দপুর থেকে
×