ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ইরানী সেনাসহ নিহত ১৪

সিরীয় ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

প্রকাশিত: ০৪:০১, ১০ এপ্রিল ২০১৮

সিরীয় ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

সিরিয়ার একটি সামরিক ঘাঁটিতে সোমবার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। এতে ১৪জন নিহত হয়, যার মধ্যে ইরানী সেনাও রয়েছে বলে দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সানা এবং সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে। এ হামলার জন্য কারা দায়ী তা স্পষ্ট নয়। তবে হামলার নেপথ্যে ইসরাইলের হাত থাকতে পারে বলে অনেকে বিশ্বাস করেন। বিমান ঘাঁটিতে ফ্রান্স ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়নি বলে দাবি করেছে সিরিয়ার সেনাবাহিনী। ফরাসী সশস্ত্রবাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল প্যাট্রিক স্টেইজার বলেন, আমরা হামলা করিনি। যুক্তরাষ্ট্রও হামলা চালায়নি বলে দাবি করেছে। সিরিয়ায় সন্দেহজনক রাসায়নিক হামলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স কঠোর যৌথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে ঘোষণা করার পর এই হামলা চালানো হলো। খবর এএফপি ও বিবিসির। সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সানা জানিয়েছে, সোমবারের প্রথম প্রহরে হোমস শহরের নিকটবর্তী তাইফুর বিমান ঘাঁটিতে (টি-৪ নামেও পরিচিত) বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। রাজধানী দামেস্কসংলগ্ন পূর্ব গৌতার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত দুমায় রাসায়নিক হামলার অভিযোগ আসার পর বিশ্বমহলে সৃষ্ট তীব্র প্রতিক্রিয়ার মধ্যেই ক্ষেপণাস্ত্র হামলাটি চালানো হয়েছে। দুমার ওই রাসায়নিক হামলায় বহু লোক নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এদিকে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস সিরিয়ায় গ্যাস হামলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক এক বিবৃতিতে জানান, আপেক্ষিকভাবে শান্তির সময়কালের পর গত ৩৬ ঘণ্টায় পূর্ব গৌতার দুমাতে নতুন ও তীব্র সহিংসতায় মহাসচিব গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। দুমাতে যেভাবে বেসামরিক জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে তা খুবই উদ্বেগজনক। রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার করা নিয়ে জাতিসংঘ পূর্ণ তদন্ত করবে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সনদ অনুযায়ী আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও মানবাধিকার আইন রক্ষায় সব পক্ষকে কাজ করতে আহ্বান জানিয়েছেন। বিরোধী মানবাধিকার কর্মী ও স্থানীয় উদ্ধারকারীরা জানিয়েছে, তারা দুমার একটি বাড়িতে অন্তত ৪০জনকে তাদের পরিবারসহ মৃত অবস্থায় পেয়েছেন। সিরিয়ার সরকার ক্লোরিন গ্যাস ব্যবহারের কথা অস্বীকার করেছে। তারা একে মিথ্যা ও বানোয়াট বলে অভিহিত করেছে। গ্যাস হামলার প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রবিবার সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে পশু বলে অভিহিত করেছেন। এর জন্য সিরিয়া এবং তার ঘনিষ্ঠ মিত্র ইরান ও রাশিয়াকে বড় ধরনের মূল্য দিতে হবে বলে সতর্ক করেন তিনি। ওই দিনই ট্রাম্প উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। পরে এক যৌথ বিবৃতিতে হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে আসাদ সরকারের অব্যাহত মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহি করতে হবে বলে উভয় নেতা মত দেন। পাশাপাশি তারা ‘সমন্বিতভাবে একটি শক্তিশালী, যৌথ পাল্টা ব্যবস্থার’ প্রতিশ্রুতি দেন। হামলার প্রকৃতি সম্পর্কে তথ্য বিনিময় ও সমন্বয়ের পক্ষে মত দেন উভয়ে। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর কথা অস্বীকার করেছেন। এক বিবৃতিতে পেন্টাগন জানিয়েছে, এই সময়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সিরিয়ায় কোন বিমান হামলা পরিচালনা করছে না। তারা পরিস্থিতির ওপর গভীর নজর রাখছে এবং সিরিয়ায় যারা রাসায়নিক অস্ত্রের হামলা চালিয়েছে তাদের জবাবদিহিতার জন্য চলমান কূটনৈতিক উদ্যোগকে সমর্থন দিচ্ছে। প্রথমদিকে সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থার প্রতিবেদনে তাইফুর বিমানঘাঁটিতে চালানো ক্ষেপণাস্ত্র হামলাটিকে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা সন্দেহ করা হচ্ছে বলে জানালো হলেও পরের প্রতিবেদনগুলোতে তা আর বলা হয়নি। গত বছর সিরিয়ার বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা খান শেইখ শহরে রাসায়নিক অস্ত্রের হামলার প্রতিক্রিয়ায় ওই বছরের (২০১৭) এপ্রিলে দেশটির শায়রাত সামরিক বিমানঘাঁটিতে ৫৯টি টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। চলতি বছরের প্রথমদিকে সিরিয়ার লক্ষ্যস্থলগুলোতে ইসরাইলও বড় ধরনের হামলা চালিয়েছিল। শনিবার দুমায় চালানো হামলায় বহু লোক নিহত হয়েছেন বলে মেডিক্যাল সূত্রগুলো জানিয়েছে। হোয়াইট হেলমেট নামে পরিচিত উদ্ধারকারী কর্মীদের ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি বাড়ির ভিতরে নারী ও শিশুসহ প্রাণহীন অনেক লোক পড়ে রয়েছেন। তাদের মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছে। দুমায় সত্যিই কী ঘটেছে এবং সেখানে মারা যাওয়া মানুষের সঠিক সংখ্যা নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা যায়নি। সেখানে রাসায়নিক হামলা চালানো হয়েছে এমন দাবি, সিরিয়া ও রাশিয়া, উভয়েই অস্বীকার করেছে। বরং দুমার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা বিদ্রোহীদের সঙ্গে এলাকা ত্যাগের একটি চুক্তি হয়েছে বলে দাবি করেছে তারা। দুমা ছাড়ছে জইশ আল ইসলাম ॥ সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের নিকটবর্তী পূর্ব গৌতার সর্বশেষ বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত শহর দুমা ছাড়তে শুরু করেছে জইশ আল ইসলামের বিদ্রোহীরা। রাশিয়ার মধ্যস্থতায় হওয়া চুক্তি অনুযায়ী অবরুদ্ধ শহরটির কয়েক হাজার বিদ্রোহী শহরটি ছাড়তে রাজি হয়েছে বলে জানিয়েছে সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম। এর প্রথম পর্বে রবিবার একদল বিদ্রোহী শহরটি ছেড়ে যায় বলে জানিয়েছে বিবিসি। একটি বাসে কয়েক ডজন বিদ্রোহী যোদ্ধা ও তাদের পরিবার শহরটি ছেড়ে সিরিয়ায় উত্তরাঞ্চলে সরকারবিরোধীদের নিয়ন্ত্রিত এলাকার উদ্দেশে রওনা হয়। জইশ আল ইসলামের যোদ্ধাদের দুমা ছেড়ে সেখানে পৌঁছতে কয়েকদিন লেগে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চুক্তি অনুযায়ী দুমায় জইশ আল ইসলামের হাতে জিম্মি থাকা সরকার পক্ষের বন্দীদেরও মুক্তি দেয়া হয়।
×