ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জনতা ব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী

সরকারী আমানতের অর্ধেক পাচ্ছে বেসরকারী ব্যাংক

প্রকাশিত: ০৪:৪৪, ২ এপ্রিল ২০১৮

সরকারী আমানতের অর্ধেক পাচ্ছে বেসরকারী ব্যাংক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ তারল্য সঙ্কট মেটাতে সরকারী আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারী ব্যাংকে রাখার সিদ্ধান্ত অতিদ্রুত কার্যকর করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলকভাবে তাদের পয়সার ২৫ শতাংশ বেসরকারী ব্যাংকে রাখতে হতো, সেটি আমরা বাড়ানোর চিন্তা করেছি। এর আগে সিদ্ধান্ত দিয়েছি এবং সেটি অতিদ্রুত কার্যকর হচ্ছে যে বেসরকারী ব্যাংকে সরকারী প্রতিষ্ঠানের এই বাধ্যবাধকতা ৫০ শতাংশ করা হবে। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, সরকারী আমানতের ৭৫ শতাংশই রাখতে হয় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয়। বাকি ২৫ শতাংশ পায় বেসরকারী ব্যাংকগুলো। সরকারী আমানতের অর্ধেক বেসরকারী ব্যাংকে রাখতে দাবি জানিয়ে আসছিল বেসরকারী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা। রবিবার সকালে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে জনতা ব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলন-২০১৮ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ ইউনুসুর রহমান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত অর্থসচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী প্রমুখ। সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বড় বিনিয়োগে অর্থায়ন করছে। এটা ব্যাংকিং নিয়ম অনুযায়ী মোটেই স্বাস্থ্যকর নয়। এ অবস্থা এ জন্যই যে, আমরা এতদিনেও একটা উপযুক্ত ক্যাপিটাল মার্কেট সৃষ্টি করতে পারিনি। আমরা চেষ্টাও কম করিনি। আমরা দু’দুটো ব্যাংক করেছিলাম এবং আইসিবি করেছি দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের জন্য। কিন্তু, এখানে আমরা ততো সাফল্য অর্জন করতে পারিনি। আমার মনে হয়, ব্যাংকিং সেক্টরে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে যে, কি করে আমরা ক্যাপিটাল মার্কেট সৃষ্টি করতে পারি। তবে এজন্য আমরা একটি গ্রুপকে ব্যাংক দেবো, যাতে তারা এটা সৃষ্টি করতে পারে। অর্থমন্ত্রী বলেন, চলতি বছর নির্বাচনী বছর হলেও অর্থনীতি অস্থিতিশীল হবে না। প্রবৃদ্ধির হারও ভাল এ বছর। চলতি বছরে হঠাৎ করেই ঋণের সুদহার অনেক বাড়তে শুরু করে। এ বিষয়ে দু’ একদিন আগে আমি বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বসছিলাম। ব্যাংকগুলোতে কোন তারল্য সঙ্কট নেই। কিছু সমন্বয়হীনতা রয়েছে। এসব ব্যাংকে সরকারী আমানত বাড়লেই এই সঙ্কট কেটে যাবে। আগে বাধ্যতামূলকভাবে সরকারী আমানতের ৭৫ শতাংশ রাখা হতো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে। আর ২৫ শতাংশ পেত বেসরকারী ব্যাংক। বেসরকারী ব্যাংকের মালিকদের দাবির প্রেক্ষিতে এটিকে এখন ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে বেসরকারী ব্যাংকগুলোতে যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে সেটি কেটে যাবে। এবং শীঘ্রই তারা ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে পারবে। ইউনুসুর রহমান বলেন, গ্রাহক সেবা নিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর নানা ধরনের সমালোচনা রয়েছে। এসব ব্যাংকের কর্মকর্তারা সরকারী চাকরিজীবীর মনোভাব নিয়ে বসে থাকে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বুজতে হবে যে, সরকারী কর্মকর্তা এবং ব্যাংক কর্মকর্তার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। ব্যাংক কর্মকর্তাদের প্রধান কাজই হচ্ছে জনগণকে সেবা দেয়া। তাদের সরকারী কর্মকর্তার মনোভাব নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে বিচারহীনতার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর অন্যতম দুর্বল দিক হলো- এখানে ভাল কাজের পুরস্কার এবং খারাপ কাজের শাস্তির বিষয়টি আমরা নিয়মিত করতে পারিনি। ঋণ অনিয়মে দায়ী কর্মকর্তাদের শাস্তি দিতে হবে এবং ভাল কাজের পুরস্কার দিতে হবে। এ সময় গ্রামগঞ্জের শাখাগুলোকে উন্নয়নের পরামর্শ দেন তিনি। গ্রাহক সেবার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকারী চাকরি শুধুমাত্র হুকুমের জন্যই নয়। মানুষকে সেবা দেয়ার জন্য। সেবার মনোভাব নিয়েই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মকর্তাদের কাজ করতে হবে। খেলাপী ঋণের বিষয়ে তিনি বলেন, খেলাপী ঋণের বোঝাটা অনেক বড় হলেও এটা আগের তুলনায় বড় নয়। এক সময় ব্যাংকের খেলাপী ঋণ ছিল ৪০ শতাংশ যা এখন ১০ শতাংশ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত অর্থ সচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে এখন এসএমই বিনিয়োগে যেতে হবে। সরকারী খাতের ব্যাংকগুলো জনগণকে যে সকল সেবা দিয়ে থাকে তা ধীরে ধীরে টেকনোলজির কাছে চলে যাচ্ছে। তাই এই খাতের ব্যাংকগুলোকে অন্যান্য ব্যবসার দিকে নজর দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির বলেন, মূলধন ঘাটতি পূরণ এবং খেলাপী ঋণ আদায়ই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর প্রধান চ্যালেঞ্জ। এ সময় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে গবর্নর বলেন, আপনাদের বেশকিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যা মোকাবেলা করতে হবে। বড় অঙ্কের ঋণ দেয়ার আগ্র্রহ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। খাত, এলাকাভিত্তিক এবং কর্পোরেট বডি ভিত্তিক কোন ঋণ দেয়া যাবে না। এসএমই এবং রিটেইলে জোড় দিতে হবে। খেলাপী এবং অনাদায়ী ঋণ আদায়ে জোর দিতে হবে। এছাড়া মামলাগুলোও নিষ্পত্তি করতে হবে। লোকসানি শাখা কমিয়ে আনতে হবে। অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ব্যবস্থায় জোর দিতে হবে। এছাড়া ব্যাংকগুলোতে জবাবদিহিতার বিষয়টির ওপর জোর দেন তিনি। জনতা ব্যাংক শীর্ষ ২০ ঋণ খেলাপীদের কাছ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি বলেও জানান তিনি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ ইউনুসুর রহমান বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর বেশকিছু দুর্বল দিক রয়েছে। এই ব্যাংকগুলো নিয়ে নানা ধরনের সমালোচনা রয়েছে। এ খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপী ঋণ প্রতিনিয়তই বাড়ছে। ঋণ দিলে তা আদায় করতে পারে না তারা। ঋণগুলো ঢাকা এবং চট্টগ্রামের কিছু মুষ্ঠিবদ্ধ মানুষের হাতে চলে যাচ্ছে। এখান থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে বেরিয়ে আসতে হবে। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান লুনা সামসুদ্দোহা। এছাড়া স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্যাংকটির সিইও এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আব্দুস ছালাম আজাদ।
×