ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এক ফসলি জমির বহুমুখী ব্যবহার ভাগ্য উন্নয়নে ২৪০ কৃষক

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৪ মার্চ ২০১৮

এক ফসলি জমির বহুমুখী ব্যবহার  ভাগ্য উন্নয়নে ২৪০ কৃষক

এক ফসলি জমির বহুমুখী ব্যবহার করে ভাগ্য উন্নয়নে নেমেছেন এলাকার ২৪০ কৃষক। ২৬০ একর এক ফসলি জমি নিয়ে তারা গ্রহণ করেছেন মেগা প্রকল্প ‘চৌদ্দমেদা কৃষিপণ্য উৎপাদনকারী বিল উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেড।’ জেলার বিলাঞ্চল বলেখ্যাত আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের চেঙ্গুটিয়া-কান্দিরপার এলাকায় সম্প্রতি মেগা প্রকল্প পরিদর্শন করেছেন উপজেলা কৃষি ও সমবায় বিভাগ এবং মৎস্য পোনা ও খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। প্রকল্পের আওতাধীন সুবিধাভোগী কৃষক শ্যামল জয়ধর জানান, বাবা-দাদার আমল থেকে তাদের জমিতে সারাবছর শুধু একবার বোরো ধানের চাষ করা হতো। এলাকার অধিকাংশ জমি নিচু হওয়ায় এবং তিন দিকে বাঁধ থাকায় প্রতিবছর বৃষ্টির পানি জমে ও খালের জোয়ার উঠে তাদের উঠতি পাকা ধান তলিয়ে গিয়ে কৃষকরা সর্বশান্ত হতেন। বছরের বেশিরভাগ সময়ই পানিতে নিমজ্জিত থাকত পুরো ফসলের মাঠ। ফলে অতীতকাল থেকে এলাকাটি চৌদ্দমেদা বিল নামে পরিচিত লাভ করে। বিলের পাশের বাসিন্দারা প্রাকৃতিক দুর্যোগে সারাবছরের খাবার হারিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে থাকতেন। তিনি আরও জানান, ধান তলিয়ে যাওয়ার পর বর্ষা মৌসুমে ছোট ছোট নৌকায় বড়শি, জাল ও চাঁই পেতে মাছ ধরে তা বিক্রি করে কোন রকম পরিবার পরিজন নিয়ে তারা জীবিকা নির্বাহ করতেন। ফলে আগাছা আর কচুরিপানায় তাদের সকল জমি ছেয়ে থাকায় চাষের মৌসুমে শ্রমিক নিয়ে তাদের ওইসব আগাছা পরিষ্কার করে জমি রোপণ করতে হতো। যা ছিল তাদের কাছে বাড়তি খরচ। স্থানীয় বাসিন্দা আতাউর রহমান চঞ্চল জানান, নির্বিঘেœ আবাদি জমির ফসল তুলে একই জমির বহুমুখী ব্যবহারের জন্য এলাকার কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ ইলিয়াস তালুকদারের নেতৃত্বে ২৬০ একর জমির ২৪০ মালিকদের নিয়ে স্থানীয়ভাবে গঠণ করা হয় ‘চৌদ্দমেধা কৃষি পণ্য উৎপাদনকারী বিল উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেড।’ নামের একটি সমবায় সমিতি। স্থানীয় সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর পরামর্শে উপজেলা সমবায় অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে চেয়ারম্যান ইলিয়াস তালুকদারকে সভাপতি ও স্থানীয় সমাজ সেবক রফিক তালুকদারকে সাধারণ সম্পাদক করে গঠন করা হয় ১১ সদস্য বিশিষ্ট কার্য নির্বাহী কমিটি। কমিটির সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান ইলিয়াস তালুকদার জানান, একই জমির বহুমুখী ব্যবহারের মাধ্যমে স্থানীয় দরিদ্র কৃষক ও মৎস্যজীবীদের ভাগ্য উন্নয়নে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। এতে ৩৫টি পরিবারের আয়ের জন্য সারা বছর সরাসরি জড়িত থেকে গড়ে ১২শ’ পরিবার উপকৃত হবেন। প্রকল্প এলাকায় ৩২টি পুকুর, ডোবাসহ অসংখ্য নিচু এলাকার মালিকরা সুবিধার আওতায় এসেছে। চাষীরা প্রকল্প থেকে ধান চাষে লভাংশের ৩০ ভাগ ও নগদ ২০ ভাগ সুবিধাপ্রাপ্তিসহ সেচ মৌসুমে জমিতে পানি সরবরাহ ও বোরো ধান চাষের সময় আগাছা পরিষ্কারসহ বিনা টাকায় জমি চাষের সুযোগ পাবেন। প্রকল্পের সাধারণ সম্পাদক রফিক তালুকদার জানান, চাষীরা তাদের ফসল ঘরে তোলার পর সমগ্র এলাকা মাছ চাষের আওতায় নেয়া হবে। শুষ্ক মৌসুমে পুকুর ও ডোবাগুলোতে মাছ থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রকল্প বাঁধের ওপর সারাবছর সবজি চাষ করে এলাকার চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ নাসির উদ্দিন বলেন, ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এলাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। যাতে কৃষকসহ সাধারণ মানুষ সরাসরি উপকৃত হবেন। প্রকল্প এলাকার মধ্যে নিবিড় পরিচর্যার কারণে এবছর খুব ভাল ধান ফলবে বলেও তিনি আশা করেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে উপজেলার অন্য এলাকার তা দৃষ্টান্ত ও অনুকরণীয় হবে। -খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল থেকে
×