ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

নির্মাণ সামগ্রীর কারণে ফ্ল্যাটের দাম বাড়বে

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ২১ মার্চ ২০১৮

নির্মাণ সামগ্রীর কারণে ফ্ল্যাটের দাম বাড়বে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ নির্মাণ সামগ্রী রড, সিমেন্ট ও পাথরের দাম এবং গৃহ ঋণের সুদ হার বেড়ে যাওয়ায় ফ্ল্যাটের দাম ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে রিহ্যাব আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতারা এ কথা বলেন। আবাসন ব্যবসায়ীরা বলেছেন, গৃহ ঋণে ব্যাংক সুদের হার দুই অঙ্কের ঘরে উঠায় ফের হুমকির মুখে পড়তে পারে আবাসন খাত। এ খাতকে বাঁচাতে দ্রুত নির্মাণ সামগ্রীর দাম ও ব্যাংক সুদের হার কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, দীর্ঘদিনের মন্দা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবারও অস্থির অবস্থার মধ্যে পড়তে যাচ্ছে নির্মাণ শিল্প। নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধির বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, এ খাতের প্রধান উপকরণ ৬০ গ্রেডের রডের বর্তমান প্রতি টনের বাজার মূল্য ৬৫ থেকে ৬৮ হাজার টাকা এবং ৪০ গ্রেডের রডের বাজার মূল্য ৫৩ থেকে ৫৬ হাজার টাকা। সরকারী সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসেবেও এক সপ্তাহ আগে ৬০ গ্রেডের বাজার মূল্য ছিল ৫২ থেকে ৫৩ হাজার আর ৪০ গ্রেডের রডের বাজার মূল্য ৪২ থেকে ৪৩ হাজার টাকা। আর এক বছরে রডের বাজার মূল্য প্রতিটনে বেড়েছে ২৩ শতাংশ। এছাড়া সিমেন্টের দাম বেড়েছে বস্তাপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা এবং ইটের দাম বেড়েছে হাজারে এক হাজার টাকা। একই সঙ্গে বিভিন্ন কোম্পানির সিমেন্টের দাম বেড়েছে বস্তাপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা এবং ইটের দাম বেড়েছে প্রতি হাজারে এক হাজার টাকা। তিনি বলেন, ছয় মাস আগে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রতিবস্তা সিমেন্ট বিক্রি হতো ৩৬০ থেকে ৩৯০ টাকায়। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪২০ থেকে ৪৬০ টাকায়। এই সময়ে সিমেন্টের ওপর কোন ধরনের চার্জ বা কর আরোপ করা হয়নি, বাড়েনি কাঁচামালের দাম। তাহলে এই দাম বৃদ্ধি কেন? এটা আবাসন শিল্প তথা নির্মাণ খাতের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এ কারণে কোন কোন প্রকল্পের ফ্ল্যাটের দাম বাড়তে পারে। বিশেষ করে জমির উচ্চমূল্য, সাইনিং মানির পরিমাণ বৃদ্ধির কারণে ক্রেতাদের ওপর অধিক চাপ পড়বে। অনেকেই ইতোমধ্যে নির্মাণকাজ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঋণের সুদ হার বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, অপ্রত্যাশিতভাবে বর্তমানে গৃহায়ন খাতে ঋণের সুদহার বেড়েছে। অধিকাংশ ব্যাংক গৃহ ঋণের সুদ দুই অঙ্কের ঘরে নিয়ে গেছে। আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, এ খাত যখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, সেই মুহূর্তে নির্মাণ উপকরণের দাম বৃদ্ধিতে নির্মাণকাজ গতিহীন হয়ে পড়বে। নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকেই ইতোমধ্যে নির্মাণকাজ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিতে চাচ্ছেন। ফলে যথাসময়ে ফ্ল্যাট হস্তান্তর অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে। এতে দুর্ভোগে পড়বেন চুক্তিবদ্ধ ক্রেতারা। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের সময় সারাদেশে নানা ধরনের উন্নয়নমূলক কর্মকা- বৃদ্ধি পাওয়ায় রড, সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল এবং পাথর আমদানি বেড়েছে। বর্তমানে রড তৈরির বিভিন্ন উপাদান আমদানিতে নানা ধরনের কর দিতে হচ্ছে। রড তৈরির প্রধান কাঁচামাল বিলেতে আরডি ২০ শতাংশ, প্রতিটনে এআইটি ৮০০ টাকা, এটিভি ৪ শতাংশ এবং ভ্যাট দিতে হচ্ছে ১৫ শতাংশ। এ ছাড়া রড তৈরির আরেক অন্যতম উপাদান স্ক্র্যাপে প্রতিটনে এআইটি ৮০০ টাকা, সিডি ১ হাজার ৫০০ টাকা, এটিভি রয়েছে ৪ শতাংশ। অন্যদিকে সিমেন্ট তৈরির উপাদান ক্লিংকার আমদানিতে এআইটি ৫ শতাংশ, এটিভি ৪ শতাংশ, ভ্যাট ১৫ শতাংশ এবং সিডি ৭৫০ টাকা প্রতিটনে দিতে হয়। পাথর আমদানিতে নানা ধরনের কর দিতে হচ্ছে ৭০ শতাংশ। সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, বর্তমানে পাথর প্রায় পুরাটাই আমদানি নির্ভর। দেশে আগে যে পরিমাণ পাথর উত্তোলন হত তা পরিবেশবাদীদের আপত্তির কারণে প্রায় বন্ধ রয়েছে। নিত্যপণ্য না হওয়ার কারণে বন্দরে দিনের পর দিন পাথরের জাহাজ আটকা পড়ে থাকে। এই বাড়তি আমদানি ব্যয় সবশেষে গিয়ে পড়ে ক্রেতার ওপর। আলমগীর শামসুল বলেন, আমরা চাই সরকার এই আবাসন শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রড, সিমেন্ট, পাথরসহ বিভিন্ন সমিতির সকলকে নিয়ে একটি মতবিনিময় করে উদ্ভূত সমস্যার বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করুক। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রিহ্যাবের জ্যৈষ্ঠ সহ-সভাপতি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন জানান, নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ায় ফ্ল্যাটের দাম ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বাড়তে পারে। এতে সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- ব্যাহত হবে। প্রকারভেদে রডের দাম টনে অন্তত ১৪ হাজার টাকা কমানো উচিত বলে মনে করেন তিনি। বর্তমানে অবিক্রিত ফ্ল্যাটের সংখ্যা ১১ হাজারের ওপরে বলেও দাবি করেন নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন রিহ্যাবের প্রথম সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া ও পরিচালক কামাল মাহমুদ প্রমুখ।
×