ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা ও তিস্তা সঙ্কট

প্রকাশিত: ০৪:৪৩, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

রোহিঙ্গা ও তিস্তা সঙ্কট

বাংলাদেশ ও ভারত বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী রাষ্ট্র। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিরসনে ভারতের আন্তরিক সহযোগিতা ও কার্যকরী পদক্ষেপ সব সময়ই স্মরণীয়। বর্তমানে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের তিস্তা চুক্তি সম্পাদন এক দীর্ঘসূত্রতার জালে আটকা পড়ে আছে। যার আশু সমাধান অত্যন্ত জরুরী। তা ছাড়া মিয়ানমার থেকে আসা প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশকে যে মাত্রায় আর্থ-সামাজিক এবং রাজনৈতিক সঙ্কটের আবর্তে ফেলেছে তার থেকেও বেরিয়ে আসা এখন সময়ের দাবি। এমন দুটি অমীমাংসিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমস্যা সমাধানে ভারতের মতো বন্ধু রাষ্ট্রের সহযোগিতা বিশেষ প্রয়োজন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রাজধানীর হোটেল রেডিসনে এক মিডিয়া সম্মেলনে অভিমত জানান যে, ভারতের মতো অকৃত্রিম বন্ধুর সহযোগিতা ছাড়া দেশের এমন দুটো বড় সঙ্কট মোকাবেলা করা আসলে দুঃসাধ্য। তিন দিনব্যাপী বাংলাদেশ-ভারত মিডিয়া সংলাপের সমাপনী দিনে যোগাযোগমন্ত্রী এ কথা বলেন। এই বৃহৎ সাংবাদিক সম্মিলনে আসা ভারতের ২৩ জন সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও সম্পাদকদের মাধ্যমে ওবায়দুল কাদের ভারতের কাছে এই আবেদন জানান। ইনস্টিটিউট অব কনফ্লিক্ট ল এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ কর্তৃক আয়োজিত এই মহতী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ওবায়দুল কাদের। এই আয়োজনের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান। ইনস্টিটিউটের পরিচালক ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। যোগাযোগমন্ত্রী আরও বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলেই এই তিস্তা চুক্তি ও রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসন করা বিশেষ প্রয়োজন। এসব সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে গেলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর সহায়তাও অত্যন্ত জরুরী। তিস্তা চুক্তির আশু সমাধানের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, তিস্তা নদীতে পানি শূন্যতায় উত্তর জনপদে আজ শুকনো অবস্থা বিরাজ করছে। যেখানে পদযাত্রায় নদী পার হওয়া এখন আর কোন ব্যাপারই নয়। নির্বাচনী ইশতেহারে জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতিও রক্ষা করা বিশেষ দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। চলতি বছরের শেষ দিকে সংসদ নির্বাচনের কথাও মনে করিয়ে দেন মন্ত্রী। জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশা পূরণও নির্বাচিত সরকারের দায়বদ্ধতা। নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণ করতে ব্যর্থ হলে জবাবদিহিতারও মুখোমুখি হতে হয়। ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনার ড. আদর্শ সোয়াইকা বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তার সরকারের সাহায্য-সহযোগিতা দেয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করেন। তিনি বলেন, বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অত্যন্ত জোরালো ও মজবুত হয়েছে। আগামী দিনেও এই সুসম্পর্ক ধরে রাখার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনার। অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্যান্য আলোচকও রোহিঙ্গা সঙ্কট ও তিস্তা চুক্তি সম্পাদনে ভারতের গণমাধ্যমের যৌক্তিক ভূমিকার ওপর বিশেষ দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়। এ ছাড়া মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের যে সৌহার্দ্য বজায় আছে তার ভিত্তিতে রোহিঙ্গা সমস্যা নিরসনে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোও সংশ্লিষ্ট সরকারের বিবেচনায় থাকা আবশ্যক। যোগাযোগমন্ত্রী ভারতের সহায়তার কথা স্মরণ করে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করেন। শুধু তাই নয়, অভিন্ন গঙ্গা নদীর পানি বন্টন চুক্তি এবং আটকে থাকা সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের কথাও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে উল্লেখ করেন। এ ছাড়া সন্ত্রাস, মৌলবাদ এবং উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে বাংলাদেশ-ভারত সব সময়ই অভিন্ন নীতি পোষণ করে এসেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কোন্নয়নে দুই দেশের সম্মিলিত প্রচেষ্টা সিংহভাগ সঙ্কট মোকাবেলায় সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখবে। গণমাধ্যমের সফল সংযোজনও অন্যতম নিয়ামক শক্তি বলে বক্তারা অভিমত ব্যক্ত করেন।
×